সিদ্ধান্তহীনতা আর টেনশনে তিশা
সুরমা টাইমস বিনোদনঃ বেজায় টেনশনে আছেন তিশা। দীর্ঘ ১০ বছরের ক্যারিয়ারে কখনও এতটা টেনশনে পড়তে হয়নি তাকে। তার ওপর টেনশনের সঙ্গে নতুন মাত্রা যোগ করেছে সিদ্ধান্তহীনতা।
না, এ টেনশন কিংবা সিদ্ধান্তহীনতার কারণ সাংসারিক কিছু নয়। বরং তিশা-ফারুকী প্রেমবেলার দিনগুলোর চেয়েও দারুণ সময় পার করছেন আপন সংসারে। কয়েক দিন আগে স্বামী মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর নির্দেশনায় বিজ্ঞাপনের মডেল হলেন স্ত্রী তিশা। এ নিয়ে দু’জনার উচ্ছ্বাস আকাশছুঁই। স্বামী-স্ত্রীর প্রথম বিজ্ঞাপন বলে কথা! চলতি মাসের মধ্যেই বিজ্ঞাপনচিত্রটি দেশের সব টিভি চ্যানেলে একযোগে মুক্তি পাচ্ছে।
তিশা এবং তিশাভক্তদের জন্য এ বিজ্ঞাপনটি নতুন চমক হলেও মনের টেনশন তো কোনভাবেই কাটছে না তার। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, এ টেনশন কিংবা সিদ্ধান্তহীনতার একটিই কারণ। সেটি হলো ‘চলচ্চিত্র’। নাটক-বিজ্ঞাপনে আকাশছুঁই সফলতার তিশার পরিকল্পনায় এখন শুধুই চলচ্চিত্র। সেই পরিকল্পনার দারুণ সিঁড়ি হিসেবে পেয়েছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘থার্ড পার্সন সিঙ্গুলার নাম্বার’ এবং ‘টেলিভিশন’ চলচ্চিত্র দুটি। এ চলচ্চিত্র দুটিতে তিশাই ছিলেন দর্শক দৃষ্টির প্রধান কেন্দ্রবিন্দুতে। তার ওপর দুটি চলচ্চিত্রই দেশ ছাড়িয়ে বিশ্বের নামীদামি চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত, পুরস্কৃত ও প্রশংসিত হয়েছে। এ দুটি চলচ্চিত্রের ফাঁকে তিশার আরেকটি চলচ্চিত্র চমক ‘রানওয়ে’। -দেশীয় নির্মাতাদের মধ্যে আন্তর্জাতিক পরিম-লে সবচেয়ে প্রশংসিত নির্মাতা তারেক মাসুদের এ চলচ্চিত্রে তিশাকে পাওয়া যায় গুরুত্বপূর্ণ অতিথি চরিত্রে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের আন্তর্জাতিক পরিচিতি পাওয়া একমাত্র নায়িকা কিংবা অভিনেত্রী হিসেবে তিশা এখনও ‘ওয়ান অ্যান্ড অনলি’ তকমা নিয়ে শক্ত অবস্থানে আছেন। দেশীয় চলচ্চিত্রকে আন্তর্জাতিকভাবে এগিয়ে নেয়ার অন্যতম অংশীদার তিশা।
সেই ধারাবাহিকতায় গত বছর মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর আরও একটি চলচ্চিত্রে প্রধান নারী চরিত্রে অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন তিনি। নাম ‘ডুবোশহর’।- গত বছর নভেম্বরে চুক্তি স্বাক্ষর হলেও, এখনও এর শুটিং মাঠে গড়ায়নি।
তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তিশার ‘টেলিভিশন’র মতোই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রাঙ্গন ‘ডুবোশহর’ দেখে খানিক নড়েচড়ে বসবে। কারণ ‘থার্ড পার্সন সিঙ্গুলার নাম্বার’ এবং ‘টেলিভিশন’র মতো ‘ডুবোশহরে’ও থাকছে তিশা-ফারুকী রসায়ন। যদিও আপাতত তিশা টেনশনে পড়ে আছেন ‘ডুবোশহর’র শুটিং শিডিউল নিয়ে। জানা গেছে, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী গত নভেম্বর থেকেই ব্যস্ত সময় পার করছেন তার আরেকটি চলচ্চিত্র ‘পিঁপড়াবিদ্যা’র শুটিং-এডিটিং নিয়ে। ফলে চলতি বছরের প্রথম মাস থেকে ‘ডুবোশহর’র শুটিং শুরুর কথা থাকলেও সেটা দিনকে দিন পিছিয়ে পড়ছে। আর এ কারণে তিশাও বারবার তার নাটক শিডিউল এবং মানসিক প্রস্তুতিতে ধাক্কা খাচ্ছেন।
এদিকে ‘ডুবোশহর’র চলমান টেনশনের সঙ্গে সমপ্রতি যোগ হয়েছে শাকিব খান টেনশন! কারণ ফারুকীর হাত ধরে তিশা এক লহমায় আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রে পৌঁছে গেলেও, এখনও পৌঁছাতে পারেননি কথিত বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের মূল দর্শকদের কাছে। অর্থাৎ শাকিব খান কিংবা মাহিয়া মাহিকেন্দ্রিক মূল ধারার চলচ্চিত্র দর্শকদের প্রেক্ষাগৃহে। তার ওপর চোখের সামনে দিয়ে চোখের পলকে খাঁটি বাণিজ্যিক ছবির নায়িকা বনে যাচ্ছেন ছোট পর্দার জয়া আহসান, মীম, শখ, মৌসুমী নাগসহ বেশির ভাগ টিভি নায়িকা। সম্ভবত সহকর্মীদের এমন বাণিজ্যিক গতি কিংবা ট্র্যাডিশনাল চিত্রনায়িকা হওয়ার অভাব বোধ তিশাকে পুড়ছিল ভেতর ভেতর। সেই আগুন নেভাতেই বোধহয় মাস কয়েক আগে শাকিব খানের বিপরীতে চুক্তি সই করে ফেললেন তিশা! খবরটি তিশা শ্রেণীর দর্শক-সমালোচক-বিশ্লেষকের জন্য একরকম বাজ পড়ার মতোই জানান দিলো।
এমন খবরের বিপরীতে অনেকে এটাও প্রশ্ন করেছেন একে অপরকে, ‘মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এ খবরটা সত্যি সত্যি জানেন তো!’।- অনেকেই বলেছেন, ‘তিশা আসলে চলচ্চিত্র বিশ্লেষকদের বাইরে গিয়ে আমজনতার চিত্রনায়িকা হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্যই শত দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছাপিয়ে পুরোপুরি বাণিজ্যিক ছবিতে সই করেছেন। বিষয়টি খানিক কেমন কেমন হলেও, বাঁকা চোখে দেখার কিছু নেই।’ সাফিউদ্দিন সাফি পরিচালিত শাকিব খানের বিপরীতে আলোচিত এ ছবির নাম ‘প্রেম করে আমি মরবো’। -উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো ‘ডুবোশহর’র মতো ‘প্রেম করে আমি মরবো’ নিয়েও বেজায় টেনশনে আছেন তিশা। কারণ এ ছবিটির শুটিং শিডিউল বারবার ঠিক করেও ঠিক থাকছে না। ফেব্রুয়ারিতে শুটিং শুরুর কথা থাকলেও এখনও সেটি অনিশ্চিত। অনেকেই বলছেন, প্রশংসিত অভিনেত্রী থেকে বাজার কাটতি চিত্রনায়িকা হওয়া এত সহজ বিষয় নয়। চাইলেও সেটা সম্ভব নয়। আর সেই অসম্ভাবনার ফাঁদেই পড়েছেন তিশা। প্রযোজনা সূত্রে জানা গেছে, নো টেনশন! এ বছরের মধ্যেই শাকিব-তিশার শুটিং শুরু হবে! অন্যদিকে দুই ধারার দুই চলচ্চিত্রের শুটিং শিডিউল আর আলোচনা-সমালোচনা নিয়ে তিশার এখন এক-একটি দিন কাটছে বছরের মাপে। যদিও বুকে আগুন নিয়ে মুখে মিষ্টি হেসে তিশা বলছেন, অল ইজ ওয়েল। আমি সঠিক ট্র্যাকেই আছি। এ সময়টাকে আমি আগামী সময়ের হাতে তুলে দিলাম।