স্বাধীনতার ঘোষণা ও ঘোষক বিতর্ক : প্রেক্ষিত ৭ মার্চের ভাষণ

তর্কের বা যুক্তির খাতিরে অনেকে বলে থাকেন যদি পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে ভূখন্ডগত সীমান্ত যোগাযোগ থাকত বা ভারত মুক্তিযুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য ও সহযোগিতা না করত অর্থাৎ শেষ পর্যন্ত যদি বাংলাদেশ স্বাধীন না হত তবে শেখ মুজিবের ৭ মার্চের ভাষণের তাৎপর্য ও গুরুত্ব বাংগালীদের কাছে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা হত। পাকিস্তানের দুই অংশ একই ভূখন্ডে ছিলনা বলে এবং ভারত মুক্তিযুদ্ধে সবচেয়ে বড় সহায়ক শক্তি ছিল বলে আমরা শেখ মুজিবের নেতৃত্বহীন থাকা সত্ত্বেও ৯ মাসের সশস্ত্র যুদ্ধের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করতে পেরেছি বলে আজ ৭ মার্চের ভাষণকে স্বাধীনতা প্রাপ্তির আলোকে মূল্যায়ন ও ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে। আসলে সময় ও পরিনতিই যে কোন বিষয় ও ঘটনাকে ভিন্ন ভিন্ন সংজ্ঞায় ও বিশেষণে পরিচিতি ও আকৃতি দেওয়া হয়, ফলে একই বিষয়ের উপকরন হিসেবে কেউ হয় নায়ক, কেউ হয় খলনায়ক এবং সেভাবেই ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে জাতি হিসেবে আমাদের নর্তন-কুর্দন, আবেগ-উচ্ছাস, মারামারি-কাড়াকাড়ির ইতিহাস এগিয়ে চলছে। কিন্তু ৭ মার্চের ভাষণে শেখ মুজিব যে কথাটা আগে উচ্চারন করেছিলেন, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম – এ মুক্তির কি অর্থ তিনি বুঝাতে চেয়েছিলেন তা নিয়ে আমাদের কোন মাতামাতি নাই, শুধু প্রতি বছর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের প্রয়োজনে শেখ মুজিবের ৭ মার্চের ভাষণের পুরান ক্যাসেটটাই বার বার বাজিয়ে জাতিকে শুনানো ও মোহাচ্ছন্ন করা হয়।
বাংলাদেশ আজ থেকে ৪৩ বছর আগে একটা সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা লাভ করেছে, এটা আজ বাস্তব ও ঐতিহাসিক সত্য। তবে বহু ত্যাগ ও লাখো বাংগালীর জীবনের বিনিময়েই বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল, কারো দয়ায় বা দানের বিনিময়ে নয়। তেমনিভাবে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বা ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর কেবল একটা দিনেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা আসে নাই, বহু বছর আগে থেকে শুরু হওয়া বহু ঘটনা, আন্দোলন ও সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের মার্চ ও ডিসেম্বর মাসে এসে এর চুড়ান্ত (সশস্ত্র) পর্যায় ও পরিনতি (অভ্যূধ্যয়) ঘটে।

১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষকে বিভক্ত করে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটার জন্মের পর থেকে তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) এর বাংগালী জনগন তাদের নিজস্ব ভাষা, কৃষ্টি, সংস্কৃতি তথা জাতিসত্তাকে রক্ষা করা এবং স্বাধিকার আদায়ের জন্য দীর্ঘ ২৩ বছর সময় ধরে বিভিন্ন সময়ে বহুবার বহু আন্দোলন, বহু সংগ্রাম ও বহু আত্মত্যাগের মত স্মরনীয় ও ঐতিহাসিক ঘটনার জন্ম দিয়েছে, এসব ঘটনা ও ইতিহাসের কথা সবই আমাদের জানা। তবে পৃথিবীর আরো অন্যান্য স্বাধীনতাকামী জনগন তথা সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনকারী দেশসমূহের মত বাংগালীরাও জাতি, ধর্ম, বর্ন নির্বিশেষে বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে গড়ে উঠা বা জন্ম লাভকারী জাতীয় তথা বাংগালী নেতৃবৃন্দের সফল নেতৃত্ব, জোরালো আহ্বান (বজ্রকন্ঠ) এবং বলিষ্ঠ ও বীরত্বপূর্ন ভূমিকায় আকৃষ্ট ও সংগঠিত হয়ে এসব আন্দোলন, সংগ্রাম ও সশস্ত্র স্বাধীনতা যুদ্ধে সম্পৃক্ত হয়েছিল ও অংশগ্রহন করেছিল। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সালের মধ্যে তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তানে সংগঠিত বাংগালীদের বিভিন্ন ঐতিহাসিক আন্দোলন ও সংগ্রামে নেতৃত্ব দানকারী সনামধন্য, জনপ্রিয় ও স্মরনীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে অন্যতম শীর্ষ নেতা ছিলেন মরহুম মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী এবং শেখ মুজিবুর রহমান। পূর্ব পাকিস্তানের বাংগালী জনগোষ্টিকে দীর্ঘ ২৩ বছরে বিভিন আন্দোলন, সংগ্রাম ও আত্ম-ত্যাগের মধ্য দিয়ে একটা স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টির জন্য চুড়ান্তভাবে সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ করতে এ দুই নেতার অবদানের কথা বাংগালী জাতির কাছে নতুন করে বলার প্রয়োজন নাই। তবে অন্যতম প্রধান ও ঐতিহাসিক ঘটনার মধ্যে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে ১৯৬৯ সালের গন-অভ্যূত্থান পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটার অখন্ডতার বিরুদ্ধে ছিল একটা প্রলয়ংকারী ভূমিকম্প – যে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে আসেন বাংগালী জাতির তখনকার একমাত্র স্বপ্নের মহাপুরুষ ও বলিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব শেখ মুজিবুর রহমান। মূলত তখন তাকে ঘিরেই বাংগালী জনগন তাদের অধিকার ও দাবী আদায়ের সংগ্রামকে সফলতার চুড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সংগঠিত হতে থাকে। ১৯৭০ সালের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের জনগন (বাংগালীরা) শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে পাকিস্তানের একমাত্র সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। এ ফলাফলের পর বাংগালীরা স্বভাবতই প্রত্যাশা করেছিল শেখ মুজিবুর রহমান হবেন পাকিস্তানের পরবর্তি প্রধানমন্ত্রী বা প্রেসিডেন্ট এবং তারই ক্ষমতাবলে বাংগালীরা তাদের অধিকার ও ন্যায্য দাবী-দাওয়া আদায় করতে পারবে এবং শোষণ ও বঞ্চনার হাত থেকে মুক্তি পাবে। কিন্তু বাংগালীদের এ স্বপ্ন বা প্রত্যাশা পূরন হয়নি, নির্বাচন পরবর্তি পাকিস্তানী সামরিক শাসক গোষ্টির সাথে যোগসাজোশে তদানিন্তন পশ্চিম পাকিস্তানের প্রধান রাজনৈতিক দল (নির্বাচনে দ্বিতীয় স্থানকারী) পাকিস্তান পিপল্স পার্টির প্রধান জুলফিকর আলী ভুট্টোর ক্ষমতা দখলের জন্য ষড়যন্ত্র ও কূট-কৌশলের কথা আমাদের সবারই জানা।
পাকিস্তানের সামরিক শাসক গোষ্টি ও ক্ষমতালোভীদের এহেন ষড়যন্ত্রের প্রেক্ষাপটে শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ঢাকার রেইস-কোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরোয়ার্দী উদ্যান) লাখ লাখ বাংগালীর উদ্দেশ্যে যে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন তাকেই আজ (স্বাধীনতার ৪৩ বছর পর) দলীয় রাজনৈতিক দৃষ্টিভংগি নিয়ে মূল্যায়ন করে আওয়ামী লীগ ও এর সমর্থক গোষ্টি / মহল এই দাবীই প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে যে, ৭ই মার্চের ভাষণেই শেখ মুজিবুর রহমান সর্বপ্রথম বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং এ বিবেচনায় তিনিই স্বাধীনতার ঘোষক, তদুপরি তারা এখন দাবী করছে ২৬ মার্চ শেখ মুজিবই স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছিলেন, অর্থাৎ এ ব্যাপারে তারা শেখ মুজিব ছাড়া আর কারো কৃতিত্ব বা অবদানের কথা মেনে নিতে নারাজ। ৭ই মার্চের ভাষণে শেখ মুজিব বজ্রকন্ঠে ঘোষণা করেছিলেন “এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” তার ভাষণের ঐ উক্তিতে শেখ মুজিব প্রকৃত অর্থে বাংগালীদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি ও স্বাধীনতার কথা বলেছিলেন নাকি বাংগালীদের ভৌগলিক স্বাধীনতার কথাও বলেছিলেন অথবা সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়লাভকারী দলের (আওয়ামী লীগ) প্রধানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য পাকিস্তানী শাসক গোষ্টির উপর রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ৭ মার্চের ভাষণে ঐ উক্তি করেছিলেন তা সঠিকভাবে একমাত্র শেখ মুজিব ছাড়া আর কেউ বলতে পারে বলে এমন কোন ঐতিহাসিক প্রমান, সাক্ষ্য বা দলিল নাই। ইদানিং বা আজকাল এ ব্যাপারে যা কিছু বলাবলি হচ্ছে তা কেবলই স্বীয় স্বার্থে বা দলীয় স্বার্থে বলা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে স্মর্তব্য যে, ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনের ফলাফল  পরবর্তি সংবাদ সম্মেলনে শেখ মুজিব এক পর্যায়ে বলেছিলেন “জয় পাকিস্তান।” এ সংক্রান্ত সচিত্র প্রতিবেদন ইত্তেফাকসহ ঐ সময়কার অনেক জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছিল। শুধু তাই নয় ৭ই মার্চের ভাষণের শেষ পর্যায়ে শেখ মুজিব জয় বাংলা বলার পর “জিয়ে পাকিস্তান” অর্থাৎ পাকিস্তান বেঁচে থাকুক এ শব্দ দুটিও উচ্চারন করেছিলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তার ভাষণ থেকে এ অংশটুকু কেটে ফেলা হয়।
৭ মার্চের ঐ ভাষণের পর পাকিস্তানী সামরিক জান্তা ও ষড়যন্ত্রকারীরা সংকট নিরসনে শেখ মুজিব তথা পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতাদের সাথে কথিত সংলাপ বা লোক-দেখানো আলাপ-আলোচনার উদ্যোগ নিলেও পাকিস্তানের অখন্ডতা টিকিয়ে রাখার ব্যাপারে তারা বাংগালীদেরকে সন্দেহ করা শুরু করল। পাকিস্তানের তৎকালীন সামরিক উর্দি-পড়া প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ঢাকায় শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন বাংগালী নেতাদের সাথে একটানা ১০ দিন আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার অন্তরালে মূলত পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে জেনারেল টিক্কা খান জেনারেল রাও ফরমান আলীদের মত হিংস্র সামরিক কমান্ডারদের নিয়োগ দান ও বিপুল পরিমান গোলা-বারুদ এনে মওজুদ করতে শুরু করেছিল। ইয়াহিয়া খানের সাথে শেখ মুজিবের কথিত সংলাপ বা লোক-দেখানো আলোচনা কোন সর্বসম্মত সমঝোাতায় বা ফলপ্রসূ উপসংহারে পৌছানোর আগেই পাকিস্তানী সামরিক জান্তারা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ঢাকাসহ সারা পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতা ও নীরিহ বাংগালীদের হত্যা করার উদ্দেশ্যে পৈশাচিকভাবে ঝাপিয়ে পড়ল। ঐ রাতেই পাকিস্তানী সামরিক জান্তারা শেখ মুজিবকে আটক করে নিয়ে যায় (যদিও অনেকে বলে থাকেন ঐ রাতে শেখ মুজিব পালিয়ে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত, পরিচালিত ও নেতৃত্ব দেওয়ার পরিবর্তে নিরীহ ও নিরস্ত্র বাংগালী জনগনকে পাক বাহিনীর অস্ত্রের মূখে ঠেলে দিয়ে / অস্ত্রের সামনে ফেলে রেখে পাকিস্তানী সামরিক জান্তার  কাছে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পন করেছিলেন)। এখানে উল্লেখ্য, আমেরিকা যখন ইরাক আক্রমন করেছিল সাদ্দাম হোসেন তখন আত্মসমর্পন করেনি, লিবীয় নেতা কর্নেল গাদ্দাফিও আত্মসমর্পন করেনি, ফিলিস্তিন নেতা ইয়াসির আরাফাত, তামিল নেতা ভিলুপিল্লাই প্রভাকরন, নেপালের মাওবাদী গেরীলা সংগঠনের নেতা প্রচন্ড এমনকি ভিয়াতনামের স্বাধীনতা সংগ্রামের মহান নেতা নেলসন মেন্ডেলা বা হু চি মিনও আত্মসমর্পন না করে আত্মগোপনে  থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে কেউ জয়লাভ করেছিল, পরবর্তিতে ধরা পরেছিল বা কেউ জীবন দিয়েছিল, কিন্তু নিরস্ত্র সমগ্র জাতিকে শত্র“র বন্দুকের সামনে একা ফেলে স্বেচ্ছায় তারা কেউ আত্মসমর্পন করেনি। আওয়ামী পন্থী বিশ্লেষকরা এখন আরো বলে যে সেদিন যদি শেখ মুজিব পালিয়ে যেতেন তবে পাকিস্তানী সৈন্যরা বাঙ্গালীদের উপর আরো বেশী নির্যাতন চালাত। এ কথা ভেবেই নাকি শেখ মুজিব সেদিন স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পন করেছিলেন। কিন্তু তাদের কাছে প্রশ্ন হলো ২৫ মার্চের রাত থেকে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত দীর্ঘ নয় মাস যাবত পাকিস্তানী সৈন্যরা কি শেখ মুজিব তাদের কাছে আত্মসমর্পন করেছিল বলে বাঙ্গালীদের উপর অত্যাচার নির্যাতন কম করেছিল ? এর চেয়ে বেশী আর কি করত ? পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বা অঞ্চলে স্বাধীনতাকামী বা বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনে / সশস্ত্র বিপ্লবে যারা নেতৃত্ব দিয়েছে বা এখনও দিচ্ছে তারা প্রত্যেকেই নিজেদেরকে গোপন অবস্থানে রেখে তারা নিজেরাই এসব আন্দোলন বা সশস্ত্র বিপ্লব/মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন বা দিচ্ছেন, তারা কেউ সহজলভ্য অবস্থানে থেকে বিরুদ্ধ শক্তি বা সরকারী বাহিনীর কাছে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পন করেননি বা সহজে তাদেরকে গ্রেফতার করার সুযোগ দেননি।
আসল কথা হলো মার্চ মাসে ইয়াহিয়া খানের সাথে আলোচনার শেষ দিন পর্যন্ত শেখ মুজিব হয়ত পাকিস্তানী সামরিক জান্তার আসল উদ্দেশ্য বুঝে উঠতে পারেননি অথবা পাকিস্তানী শাসক গোষ্টি শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের শাসনভার তার হাতেই তুলে দিবে বলে তিনি আশ্বস্ত বা আশাবাদী ছিলেন। যে কারণে ৭ মার্চের ভাষণের পর থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত দীর্ঘ সময়ের মধ্যেও শেখ মুজিব বাংগালীদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানী সামরিক জান্তার সম্ভাব্য সামরিক অভিযান বা সশস্ত্র আক্রমন শুরু হলে তিনি কিভাবে নিজেকে নিরাপদ অবস্থানে রাখবেন এবং পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে কিভাবে বাংগালীরা সশস্ত্র প্রতিরোধ তথা মুক্তিযুদ্ধ শুরু করবে তার কোন সুনির্দিষ্ট রূপরেখা বা পরিকল্পনা ছিলনা বা তৈরী করে যেতে পারেননি। আওয়ামী লীগ ও এর সমর্থকদের আজকের দাবী অনুযায়ী যদি ৭ মার্চের ভাষণেই শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে থাকেন তবে ৮ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ ( তার গ্রেফতার হওয়ার আগ পর্যন্ত ) পর্যন্ত স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য শেখ মুজিব কেন কোন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রনয়ন করেননি ? এমনকি তার অনুপস্থিতিতে দলকে এবং সমগ্র জনগনকে সশস্ত্র সংগ্রাম বা যুদ্ধের জন্য কারা নেতৃত্ব দিবে বা পরিচালিত করবে ২৫ মার্চ পর্যন্ত তারও কোন বিকল্প ব্যবস্থা স্থির করে যাননি। যদি সেই প্রস্তুতি থাকত (তবে বিজ্ঞজনদের মতে) ২৫ মার্চ রাত থেকে পাকিস্তানী সৈন্যরা বাংগালীদের উপর (বিনা বাধায় বা প্রতিরোধে) নির্বিচারে গনহত্যা চালাতে পারতনা এবং সশস্ত্র জোরালো প্রতিরোধের সম্মুখীন হলে পাকিস্তানীরা সশস্ত্র পথ পরিহার করে বাংগালীদের সাথে আপোষ করতে বাধ্য হতো এবং মুক্তিযুদ্ধের জন্য বা লাখ লাখ শরনার্থীকে ভারতে আশ্রয় নিতে হতোনা। এ প্রসঙ্গে আরো উল্লেখ্য যে, মাওলানা ভাসানী ও শেখ মুজিবের স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের প্রতি ভারতের যদি আগে থেকেই কোন নৈতিক সমর্থন থাকত তবে ভারত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হওয়ার ব্যাপারে বাংগালী নেতৃত্বকে পূর্ব পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই ( বিশেষ করে যখন থেকে বাংগালী জাতি তাদের স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সোচ্চার হয়েছিল ) প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সাহায্য সমর্থন করে যেত – যেমন তারা পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য শান্তিবাহিনীকে সর্বাত্মকভাবে সাহায্য সহযোগিতা করেছে। বরং শোনা যায় তদানিন্তন পাকিস্তান আমলে যে ঐতিহাসিক “আগড়তলা ষড়যন্ত্র” এর ঘটনা ঘটেছিল তা ছিল পূর্ব পাকিস্তানকে ভারতের পেটে গিলে ফেলার জন্য ( যেভাবে সিকিমকে ভারত গিলেছে )। তাই বলা যায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতি ভারতের নৈতিক এবং প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সমর্থন থাকলে ২৫ মার্চের রাতে শেখ মুজিব হয়ত ভারতে পালিয়ে যেতে পারতেন এবং ৭ মার্চের ভাষণের পর থেকেই ভারতের সহযোগিতায় মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র পরিকল্পনা তৈরী করে রাখতে পারতেন, যার ফলে তার অনুপস্থিতিতেও বাংগালীরা সে পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৫ মার্চ রাত থেকে পাকিস্তানী সৈন্যদের সশস্ত্রভাবে প্রতিরোধ করতে পারত। তাছাড়া ভারতও শেখ মুজিবের ৭ মার্চের ভাষণকে সেভাবে মূল্যায়ন করে ২৫ মার্চের আগেই সেভাবে শেখ মুজিবকে সহযেগিতার হাত বাড়িয়ে দিত। অর্থাৎ অপরিকল্পিত ও অপরিনামদর্শী পরিস্থিতি এবং দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যেই শেখ মুজিব ৭ মার্চের ভাষণ দিয়েছিলেন, যে কারণে ২৫ মার্চ রাতে তার কাছে পাকিস্তানীদের বন্দুকের নলের সামনে নিরস্ত্র বাংগালীদের ফেলে রেখে আত্মসমর্পন করা ছাড়া আর কোন বিকল্প ছিলনা।
২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানী বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হওয়ার পর পুরো বাংগালী জাতি শেখ মুজিব বিহীন (কান্ডারীহীন নৌকার মত) অজানা অন্ধকার চরম হতাশাময় এক নারকীয় অধ্যায়ের মধ্যে নিপতিত হয়। ঐ রাতে ও পরের দিন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে কিছু বিচ্ছিন্ন প্রতিরোধের ঘটনা ছাড়া বাংগালীদেরকে সংগঠিত করে সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য উদ্বুদ্ধ ও প্রস্তুত করার জন্য আওয়ামী লীগ বা অন্য কোন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এমনকি ৪-খলিফার (ঐ সময়কার দূর্দান্ত চার ছাত্র নেতা) তরফ থেকেও বাংগালী জাতি কোন দিক-নির্দেশনা বা সাড়া-শব্দ পায়নি। হয়ত তখন স্বভাবতই নিজেদের জীবন বাঁচানোর জন্য সবাই নিরাপদ আশ্রয় খুজতে দিশেহারা ছিলেন। শেখ মুজিব তার অনুপস্থিতিতে কেন্দ্রীয় কমান্ডের অধীনে সংগঠিতভাবে সংগ্রাম বা যুদ্ধ পরিচালনার জন্য কোন লিখিত / সুনির্দিষ্ট নির্দেশ বা আদেশ ২৫ মার্চের আগের দিন পর্যন্ত কাউকে দিয়ে যাননি বা যেতে পারেননি।

এহেন পরিস্থিতিতে বাংগালী জাতি যখন অমানিশার ঘোর অন্ধকারে আচ্ছন্ন তখন ২৭ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে এক বাংগালী সৈনিক মেজর জিয়ার কন্ঠ থেকে ঘোষণা শোনা গেল, “আমি মেজর জিয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি”। মেজর জিয়া আরো বলেছিলেন, পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে আমরা যুদ্ধ ঘোষণা করলাম। ঐ ঘোষণার পাশাপাশি মেজর জিয়া কালুর ঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংগালী সৈনিক, বিডিআর (তদানিন্তন ইপিআর), আনছারসহ সবাইকে যার কাছে যা অস্ত্রসস্ত্র আছে সব নিয়ে চট্টগ্রামের লালদিঘি ময়দানে সমবেত হতে আহ্বান জানিয়েছিলেন। বাংগালীরা প্রায় সবাই মেজর জিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণার বলিষ্ট কন্ঠস্বর ঐদিন শুনতে পেয়েছিল। সে সময় বাংগালীদের মুক্তি আন্দোলন ও স্বাধীনতা সংগ্রামের মূর্ত প্রতিক শেখ মুজিবের প্রতি বাংগালী সৈনিক হিসেবে মেজর জিয়ারও পূর্ন শ্রদ্ধা ও আনুগত্য ছিল বলেই হয়ত ২৭ মার্চ পরবর্তি ২ দিন স্বাধীনতার ঘোষণা বাক্য উচ্চারন করার সময় তিনি বলেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষ থেকে আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি। সে সময় আরো শত শত বাংগালী অফিসারের মত মেজর জিয়াও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন অফিসার ছিলেন, শেখ মুজিবুর রহমানের মত কোন রাজনৈতিক দলের নেতা তিনি ছিলেননা, তাই স্বাধীনতার ঘোষণা তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষেই ঘোষণা করাকে তখন যথার্থ মনে করেছিলেন। নিজেকে শেখ মুজিবের মত সমান্তরাল নেতা বানানোর উদ্দেশ্যে বা ভবিষ্যত স্বাধীন বাংলার রাষ্ট্রনায়ক হওয়ার স্বপ্নে অথবা স্বাধীনতার ঘোষক হওয়ার কৃতিত্ব নেওয়ার জন্য তিনি তখন কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংগালী জাতির প্রতি কর্তব্য ও দায়িত্ববোধ থেকেই সেদিন তিনি সুযোগ ও সময়কে কাজে লাগিয়েছেন মাত্র। স্বাধীনতার দীর্ঘ সময় পর আওয়ামী লীগ মাঝে মধ্যে বলে থাকে ঐদিন কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে মেজর জিয়া স্বাধীনতার যে বাক্য পাঠ করেছিলেন তা চট্টগ্রামের জনৈক আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল হান্নান লিখে দিয়েছিলেন এবং জিয়া শুধু তার পক্ষ থেকে তা পাঠ করেছিলেন মাত্র।
এর জবাবে অপর পক্ষের পাল্টা বক্তব্য হলো স্বাধীনতার ঘোষণা উল্লেখ করে মাত্র দুই লাইন বাংলা লেখার মত শিক্ষাগত যোগ্যতাও কি মেজর জিয়ার ছিলনা যে আব্দুল হান্নানকে তা লিখে দিতে হয়েছিল ? অথবা আব্দুল হান্নান কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে গিয়ে নিজে তা কেন পাঠ করলনা অথবা মরহুম জহুর আহমেদ চৌধুরীর মত চট্টগ্রামের শীর্ষ আওয়ামী লীগ নেতারা কেন তা পাঠ করলেননা, তারা তখন কোথায় ছিলেন ? এর জবাবে হয়ত তারা বলবে ঐ সময়কার পরিস্থিতিতে জনগনকে সশস্ত্র যুদ্ধের জন্য উৎসাহিত ও উদ্বুদ্ধ করতে একজন সামরিক অফিসারের কন্ঠেই তা উচ্চারিত হওয়াকে যথার্থ মনে করা হয়েছিল, যদি তাই সত্য হয় তবে জিয়াউর রহমানকে কেন বেছে নেওয়া হল, চট্টগ্রামে তখন কি আর কোন বাংগালী সামরিক অফিসার ছিলনা – যখন আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছেন মেজর জিয়া নাকি ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানী সৈনিকদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারী বাংগালী সৈনিকদের গুলি করে হত্যা করেছিলেন। আওয়ামী মহল থেকে এখন এমন কথাও বলা হচ্ছে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের নেতারা যখন জিয়াউর রহমানের কাছে গিয়ে তাকে রেডিওতে ভাষণ দিতে বলেছিল তখন নাকি সে রাজী হয়নি, অনেক অনুরোধের পর  জিয়াউর রহমান ভাষণ দিতে রাজী হয়েছিলেন। উল্লেখ্য জিয়াউর রহমান যখন জীবিত ছিলেন তখন আওয়ামী বুদ্ধিজীবি বা মহল ২৭ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণাকে নিয়ে নিজেদের মত করে এমন ব্যাখ্যা কখনও দেয়নি। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর এসব কাহিনী তৈরী করে জাতিকে নতুন ইতিহাস শেখানো হচ্ছে। জিয়াউর রহমানই স্বাধীনতার ঘোষক – বি,এন,পি’র এ দাবীকে প্রত্যাখ্যান করার জন্যই এখন এ ধরনের ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে। তবে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর আজ যারা যেভাবেই সেদিনের (২৭ মার্চ) এই ঐতিহাসিক ঘটনাকে ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ করুক না কেন এই ঐতিহাসিক সত্যকে অস্বীকার করার কোন উপায় বা সুযোগ নাই। ২৫ মার্চের কালো রাত থেকে নীরিহ ও নিরস্ত্র বাংগালীরা যখন পাক হানাদার বাহিনীর বুটের নীচে ও বেয়োনেটের খোচায় পিষ্ট ও ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছিল তখন চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে মেজর জিয়ার কন্ঠে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার বলিষ্ঠ উচ্চারন ও আহ্বান শোনে বাংগালীরা মুক্তিযুদ্ধের তথা সর্বাত্মক সংগ্রামের জন্য যেখানে যেভাবে সম্ভব প্রস্তুত ও সংগঠিত হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহিত হয়ে উঠেছিল। মেজর জিয়ার ঐ ঘোষণা ও আহ্বানের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা (বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্ট থেকে পালিয়ে আসা) অন্যান্য বাংগালী সৈনিক ও অফিসাররাও সশস্ত্র যুদ্ধের জন্য সংগঠিত হতে লাগল। এদের মধ্যে অন্যতম হলেন মেজর জলিল, কর্নেল শফিউল্লাহ, কর্নেল খালেদ মোশার্রফ, মেজর হায়দার প্রমূখ বেঙ্গল রেজিমেন্ট এর বীর সেনা অফিসাররা। মুক্তিযুদ্ধে এসব সেক্টর কমান্ডার ও স্ব স্ব নামে (জেড-ফোর্স, এস-ফোর্স, কে-ফোর্স) গড়ে তোলা সশস্ত্র ইউনিট/বাহিনীর বীরত্বপূর্ন অবদানের কথা বাংগালী জাতির কাছে স্মরনীয় হয়ে আছে ও থাকবে। এ কথা অবশ্যই স্বীকার্য যে ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ পর্যন্ত শেখ মুজিবসহ অন্যান্য রাজনৈতিক নেতারা বাংগালী জাতিকে স্বাধীনতা তথা স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য মানষিকভাবে প্রস্তুতির তুঙ্গে তুলে দিয়েছিলেন, কিন্তু ২৫ মার্চের পর (রাজনৈতিক শক্তির অনুপস্থিতিতে) জিয়াউর রহমানসহ বাংগালী সেনা অফিসাররাই পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধের জন্য বাংগালী জাতিকে সংগঠিত করে ও নেতৃত্ব দিয়ে ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছিল।

চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে ২৭ মার্চ জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার ঐতিহাসিক ঘটনাটার গুরুত্ব যে কারণে বৈশিষ্ট্যপূর্ন ও অনন্য তা হলো, পাক বাহিনী ২৫ মার্চ রাতে তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তানের সমস্ত শহর ও স্থাপনা (রেডিও স্টেশনসহ) তাদের নিয়ন্ত্রনে নিয়ে সেদিন চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রটা শুধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করার উদ্দেশ্যে মেজর জিয়ার জন্য উম্মুক্ত ও প্রস্তুত করে রাখে নাই, যুদ্ধ করে চট্টগ্রামকে পাক বাহিনীমুক্ত রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন বলেই ২৭ মার্চ নির্বিঘেœ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে গিয়ে মেজর জিয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করতে পেরেছিলেন। ঐ সময় চট্টগ্রাম ছাড়াও ঢাকায়, রাজশাহীতে, সিলেটে ও খুলনায় রেডিও স্টেশন ছিল এবং মেজর জিয়া ছাড়াও তখন তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তানে আরো অনেক বাংগালী সেনা অফিসার ছিলেন (যাদের নাম পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে), কিন্তু শেখ মুজিবের অনুপস্থিতে আওয়ামী লীগের বা অন্য কোন রাজনৈতিক দলের কোন নেতার ছত্রছায়ায় বা আহ্বানে সাড়া দিয়ে (যদিও তখন এমন কেহ প্রকাশ্যে ছিলনা) কেউই তখন যুদ্ধ করে অন্য কোন রেডিও স্টেশন পাক বাহিনীর দখলমুক্ত রেখে বা দখলমুক্ত করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে সক্ষম হননি, মেজর জিয়াই তা করতে সক্ষম হয়েছিলেন, বাংগালীরা তখন (২৫ মার্চ শেখ মুজিবের গ্রেফতার হওয়ার পর) আর কারো কন্ঠ থেকেই স্বাধীনতার ঘোষণা শুনতে পায় নাই, মেজর জিয়ার কন্ঠ থেকেই শুনেছিল।  এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত সাংবাদিক এন্থনী মাসকারেনহাস এর লেখা বই – Bangladesh : a legacy of blood ও অন্যান্য সুত্র অবলম্বনে বাংলাদেশ উইকিপেডিয়া বা সতন্ত্র এনসাইক্লোপেডিয়ার উল্লেখযোগ্য উদ্ধৃতির মধ্যে রয়েছে : A Major in the Pakistan Army, Zia’s unit (2/5 East Bengal Regiment) took control of the Kalurghat radio station in Chittagong at the onset of the Bangladesh Liberation War and on behalf of Bengali nationalist leader Sheikh Mujibur Rahman, made the most widely transmitted declaration of independence of Bangladesh which was the third and last in a series of such declarations.

এ প্রসঙ্গে এখানে আরো উল্লেখ করা হয়েছে : One of the highest-ranking Bengali officers, Zia led his unit in mutiny of the Pakistan Army, killing the West Pakistani officers and capturing a radio station in Kalurghat near Chittagong and calling it the Shadhin Bangla Betar Kendro. On March 27, addressing the people via radio, Zia read independence declaration on behalf of Sheikh Mujibur Rahman.
মেজর জিয়া তার ঘোষণায় বলেছিলেন : This is Shadhin Bangla Betar Kendro. I, Major Ziaur Rahman, on behalf of Bangobondhu Sheikh Mujibur Rahman, hereby declare that the independent People’s Republic of Bangladesh has been established. I have taken command as the temporary Head of the Republic. I call upon all Bengalis to rise against the attack by the West Pakistani Army. We shall fight to the last to free our Motherland. By the grace of Allah, victory is ours.

১৯৭১ সালের মার্চ মাসে মেজর জিয়াসহ অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এর সৈনিকদেরকে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আনা অস্ত্রসস্ত্র খালাস করার কাজ তদারকি করার জন্য চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়োজিত করা হয়েছিল, ২৪ মার্চ ঢাকায় শীর্ষ পদমর্যাদার একমাত্র বাংগালী সেনা অফিসার ব্রিগেডিয়ার মজুমদারকে আটক করে পশ্চিম পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত অপর বাংগালী অফিসার ক্যাপ্টেন সালাউদ্দীন (জামালপুর সেক্টরে জেড-ফোর্সের অধিীনে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে বীরত্বপূর্ন সম্মূখ যুদ্ধে যিনি শহীদ হয়েছিলেন) চট্টগ্রাম বন্দরে দায়িত্বে নিয়োজিত মেজর জিয়াকে ২৫ মার্চ এ খবর দেয়। এ খবর জানার পর মেজর জিয়া তাৎক্ষনিকভাবে বন্দরে ইস্ট বেঙ্গলের অপর সেনা অফিসার ও সৈনিকদের নিয়ে সভা করে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন। ঐ সময় অন্যতম বীর সেক্টর কমান্ডার মীর শওকত আলীও অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মেজর হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরে ডিউটীতে ছিলেন, সভায় তারা সবাই মেজর জিয়ার বিচক্ষনতা, সাহসিকতা ও যুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়ার দক্ষতার প্রতি আস্থা রেখে জিয়াউর রহমানকেই তাদের নেতা/লীডার অর্থাৎ কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব দিলেন। সভা শেষে মেজর জিয়ার নেতৃত্বে বাংগালী সৈনিকরা বন্দর থেকে সোজা অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সদর দফতর চট্টগ্রামের ষোলশহরে গিয়ে রেজিমেন্ট কমান্ডার পশ্চিম পাকিস্তানী কর্নেল জাঞ্জুয়াকে গ্রেফতার করে তাদের হেফাজতে নিয়ে যান। পরবর্তিতে মেজর জিয়া ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইপিআর, আনসার সবাইকে সংগঠিত করে পাক বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করে চট্টগ্রামকে ১৭ দিন পর্যন্ত শত্র“মুক্ত রেখেছিলেন এবং যে কারণে ২৭ মার্চ তিনি কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে পেরেছিলেন। ইতমধ্যে পাক বাহিনী চট্ট্গ্রাম শহরের নিয়ন্ত্রন নেওয়ার জন্য তাদের শক্তি বৃদ্ধি করতে থাকে, পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পাকিস্তান নৌবাহিনীর যুদ্ধ জাহাজ বাবরও বঙ্গোপসাগরে অবস্থান নিয়ে চট্টগ্রাম শহরের উপর অনবরত সেল ও ক্ষেপনাস্ত্র নিক্ষেপ শুরু করে, মেজর জিয়া তখন সীমিত জনবল ও গোলাবারুদ নিয়ে পাক বাহিনীর সাথে মোকাবেলা করতে না পেরে ১৭ দিন পর চট্টগ্রাম শহর ছেড়ে নিকটস্থ ভারত সীমান্তবর্তি এলাকায় চলে যান, সেখান থেকে তিনি গেরীলা ও সম্মুখ যুদ্ধের জন্য তার নিজস্ব জেড-ফোর্স (জিয়া ফোর্স) গড়ে তুলেন – মুক্তিযুদ্ধে যে বাহিনীর বীরত্বপূর্ন ভূমিকার কথা সবারই জানা (এসব তথ্য স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সেক্টর কমান্ডার ও উর্ধতন মুক্তিযোদ্ধা সামরিক অফিসারদের লেখনী হতে সংগৃহীত)। অথচ আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোন্ ইতিহাস বা কোন্ সূত্র থেকে এ মন্তব্য করলেন যে মেজর জিয়া ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানী সৈনিকদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারী বাংগালী সৈনিকদের গুলি করে হত্যা করেছিলেন।

আওয়ামী লীগ এখন বলছে শেখ মুজিবই ২৬ মার্চ স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে গেছেন, তাদের এ দাবীর কোন ঐতিহাসিক প্রমান বা দলিল আছে বলে এতদিন দেশবাসীর কাছে স্পষ্ট ছিলনা, ২০০৮ সালে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়লাভ করে তারা এ দাবী করছে যাতে আর অন্য কোন দল (বি,এন,পি) এ দাবী করতে না পারে তার পাকাপোক্ত আয়োজন সমাপ্ত করতে চাচ্ছে। বিরোধী পক্ষের বক্তব্য হলো শেখ মুজিব ২৫ মার্চ রাতেই পাক বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হয়ে যান, তাহলে ২৬ মার্চ ( ২৫ মার্চ রাত ১২টার পর ) তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার সময় ও সুযোগটা পেলেন কোথায় , পাক বাহিনী কি তাকে তার “শেষ ইচ্ছা” হিসেবে এ সুযোগ দিয়েছিল ? অপর পক্ষ আরো যে যুক্তি দেখায় তা হলো, শেখ মুজিব ৭ মার্চের ভাষণের পর পাকিস্তানের অখন্ডতাকে মেনে নিয়ে ৬-দফা দাবী (যার মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার কথা ছিলনা) আদায়ের জন্য ২৪ মার্চ পর্যন্ত ইয়াহিয়া খানের সাথে একটা আপোষমূলক সমঝোতায় পৌছানের জন্য আলোচনা চালিয়ে গেছেন। তাহলে তিনি স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার কথা ভাবলেন কখন ? ভাবার আগেইতো তাকে ২৫ মার্চ রাতে গ্রেফতার করা হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ করতে হয় ১৯৭১ সালে আমার বয়সও ছিল ২১ বছর, অমিও প্রত্যক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। কিন্তু আজ যারা বলছে শেখ মুজিব ২৫ মার্চ রাতেই গ্রেফতারের আগে ওয়ারলেছ বার্তার মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে গেছেন এবং তখন তার এ ঘোষণার কথা উল্লেখ করে সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগ বা ছাত্র লীগের তৎকালীন নেতারা মাইকিং করেছিল এমন কোন আজগুবী ওয়ারলেছ বার্তার কথা বা মাইকিং এর আওয়াজ তখন আমি কোথাও বা কখনও শুনিনি। একমাত্র চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকেই ২৭ মার্চ পর পর বহুবার মেজর জিয়ার কন্ঠে স্বাধীনতার ঘোষণা ও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনের আহ্বানের কথা স্পষ্ট শুনেছিলাম। জিয়াউর রহমান (মেজর জিয়া) ২৭ মার্চ স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন বা তিনি স্বাধীনতার ঘোষক বি,এন,পি’র এ দাবীর শুধু বিরোধিতা করেই আজ আওয়ামী লীগ সীমাবদ্ধ থাকছেনা, তারা জিয়াউর রহমানকেও কটাক্ক করে অখ্যাত মেজর, সামান্য একজন সৈনিক, কখনও কখনও গনতন্ত্রের ও মুক্তিযোদ্ধা হত্যাকারী, রাজাকার, সামরিক ডিক্টেটর, ইত্যাদি বিশেষণেও বিশেষিত করতে দ্বিধা করেনা। আওয়ামী লীগ জিয়াউর রহমানের ন্যূনতম কৃতিত্বের কথাও তাচ্ছিল্যের সাথেই প্রত্যাখান বা অস্বীকার করে, তারা যখন ক্ষমতায় থাকে তখন শেখ মুজিবকে ৪থা আশমানে তুলতে এবং জিয়াউর রহমানকে মাটির নীচে নামাতে চায়, আবার বি,এন,পি যখন ক্ষমতায় থাকে তখন শেখ মুজিবকে তার ন্যায্য পাওনা মর্যাদা ও সম্মান দিতে চায়না – যে কারণে এ দুই ব্যক্তিত্বের প্রতি প্রত্যাশিত শ্রদ্ধা, সম্মান ও ভালোবাসা জানাতে এবং যার যা প্রাপ্য ততটুকু মর্যাদা দিতে জনগনের মাঝে স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরেও কোন সর্বসম্মত ঐক্যমত বা সমঝোতা প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

আওয়ামী মহল আজ দাবী করছে শেখ মুজিবই ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন, কিন্তু শেখ মুজিব জীবিত থাকাকালীন এ ধরনের তথ্য জনগন জানতে পারেনি বা জানানোর প্রয়োজন হয়নি, কারণ তখন বি,এন,পি’রও জন্ম হয়নি এবং জিয়াউর রহমানকেও স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে দাবী করা হয়নি। তাছাড়া  জিয়াউর রহমান জীবিত থাকা অবস্থায় নিজেকে কখনও স্বাধীনতার ঘোষক বলে কৃতিত্ব নিতে চাননি, তার মৃত্যুর পর তার দল বি,এন,পি জিয়াউর রহমানকে এ কৃতিত্বে ভূষিত করে রাজনৈতিক ফায়দা বা সুবিধা নেওয়ার কৌশল অবলম্বন করে যাচ্ছে – যেমনিভাবে আওয়ামী লীগও শেখ মুজিবের মৃত্যুর পর এখন বলছে শেখ মুজিব ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং এ ব্যাপারে তারা অতি সম্প্রতি হাইকোর্টের রায়ও পেয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক বি,এন,পি’র এ দাবী তাদের শাসনকালেও ছিল, কিন্তু বি,এন,পি তাদের এ দাবী প্রতিষ্ঠার জন্য আওয়ামী লীগের মত আদালতে যাননি। আসলে কে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছে বা কে স্বাধীনতার ঘোষক এটার একমাত্র বিচারক হল ইতিহাস ও জনগন, এ ইস্যুকে নিয়ে আজ যারা টানাটানি করছে তারা শুধু নিজ নিজ রাজনৈতিক দলের পাল্লা ভারী করার উদ্দেশ্যেই তা করছে, কারণ শেখ মুজিব ও জিয়াউর রহমান ছাড়া দৃশ্যত আওয়ামী লীগ ও বি,এন,পি’র রাজনৈতিক অস্তিত্বই অচল বা ভিত্তিহীন। দুই প্রয়াত নেতাকে পুজি করেই এ দল দুইটার রাজনৈতিক ভবিষ্যত আবর্তিত হয়ে থাকে। তাই এ দুই নেতার পক্ষে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ঘটনার কৃতিত্ব যত বেশী যেভাবে প্রতিষ্ঠা করা বা টেনে নেওয়া যায় এ প্রতিযোগিতাতেই আওয়ামী লীগ ও বি,এন,পি বিগত দুই যুগেরও বেশী সময় ধরে পাল্টাপাল্টির রাজনীতিতে জড়িয়ে আছে। স্বাধীনতার ঘোষক কে শেখ মুজিব নাকি জিয়া এ ঐতিহাসিক ঘটনা নিয়ে চলছে দল দুইটার মধ্যে সর্বশেষ লড়াই বা টানাটানি। আওয়ামী লীগ শেখ মুজিবকে জাতির পিতা বানিয়েছে, বাংলাদেশের স্থপতি বানিয়েছে বাংলাদেশের ন্বপ্ন-দ্রষ্টা ও হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ট বাংগালী হিসেবে আখ্যায়িত করতেও সক্ষম হয়েছে, এখন শেখ মুজিবকে স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষক হিসেবেও প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে অর্থাৎ বাংলাদেশের স্বাধীনতার কোন অবদান বা কৃতিত্ব তারা শেখ মুজিব ছাড়া আর কাউকে দিতে নারাজ। তবে এ কথাও সত্য ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশের মুক্তি তথা স্বাধীনতার জন্য শেখ মুজিবের অবদানের কথা যেমন অন্য কারো সাথে তুলনা করা যায়না তেমনিভাবে ২৭ মার্চ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে ততকালীন মেজর জিয়া বাংগালী জাতিকে সশস্ত্র যুদ্ধের জন্য উদ্বুদ্ধ, প্রস্তুত ও সংগঠিত করতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার যে ঘোষণা দিয়েছিলেন তার গুরুত্বও কোনভাবেই ছোট বা খাটো করে দেখার কোন অবকাশ নাই। বাস্তবতাকে স্বীকার করে নিতে পারলেই ইতিহাস নিয়ে আর নেক্কারজনক টানাটানি হবেনা এবং জাতীয় নেতা ও বীর সন্তানরা যার যার ন্যায্য ও প্রত্যাশিত মর্যাদা পাবেন।