জাপানি মহতী নারীর সহযোগীতায় ৪৫ জন মেয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে
আহমেদ নাসিম আনসারীঃ শারমিন আক্তার, সে মাহতাব উ্িদ্দন ডিগ্রী কলেজে বিএ কোর্সে পড়াশোনা করে। এসএসসি পড়ার সময় হঠাৎ তার পরিবার থেকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। স্বামীর পরিবার থেকে জানানো হয় তাকে আর পড়াশোন করানো হবে না। পড়াশোনার জন্য কোন টাকা খরচ করা হবে না। মেয়েটির পড়াশোনায় বেশ আগ্রহ। টাকার অভাবে তার পড়াশোনা একেবারেই প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। শারমিনের মতো মুনমুন বিশ্বাস, আমেনা খাতুন, সাথী খাতুনের মতো ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ৪৫ জন মেয়ে টাকার অভাবে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। একই সময়ে উপজেলার মোস্তবাপুর গ্রামের খাদিজা খাতুন এইচএসসি পড়ার সময় টাকার অভাবে পরীক্ষার ফি না দিতে পারায় গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা করে এমন খবর জানার পর জাপানী মহতি নারী হিরোকো কোবাইসি এই সব গরীব মেধাবী মেয়েদের পড়াশোনা চালানোর উদ্যোগ গ্রহণ করে। আর এই শিক্ষাবৃত্তি চালু করা হয় ২০০৩ সাল থেকে। আর এই নারীর শিক্ষাবৃত্তি প্রদানে সার্বিক সহযোগীতা করছে হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ড। সংগঠনের কর্মীরা কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে এসব গরীব মেধাবী শিক্ষার্থীদের খুজে বের করে। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ১৬ জন শিক্ষার্থী আজুফা, নাজমা খাতুন, মুনমুন বিশ্বাস, সাবিনা খাতুন, সীমা খাতুন, সোমা,আয়েশা,শাপলা, ঝুমুরা, কেয়া, পপি, আসমা, প্রীতি লতা,মুসলিমা খাতুন,রেহেনা,পিংকি খাতুনকে প্রতিমাসে ৩০০ টাকা হারে এবং মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ের অনামিকা, আরজিনা, লিমা বিশ্বাস, বিজলী, শাপলা নাহার, শাহানাজ, সাথী, তাসলিমা, সীমা, লিপনা, রুপা, কুলসুম, মাধবী রানীসহ ২৯জনকে প্রতিমাসে ২০০ টাকা করে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। এ বছর আরো বৃত্তি গ্রহীতা বাড়ানো হবে। তাদেরকে শিক্ষাবৃত্তি দেবার পর সংগঠনের কর্মীরা নিয়মিত খোজ খবর রাখছেন যে বৃত্তির টাকা নিয়ে তারা ঠিকমত পড়াশোনা করছেন কিনা, ঠিকমত স্কুল-কলেজে যাচ্ছে কিনা।
জাপান থেকে প্রতিছর হিরোকো কোবাইসি আসেন এইসব মেয়েদের সাথে দেখা করতে। তাদের পড়াশোনার খবর নিতে। এ বছরও ২০ মার্চ তিনি বাংলাদেশে এসেছেন বৃত্তিপ্রাপ্ত মেয়েদের সাথে দেখা করতে। হিরোকো কোবাইসি কেন মেয়েদের বৃত্তি দেন এই প্রসঙ্গে হাঙ্গার ফি ওয়ার্ল্ডের কান্ট্রি ডিরেক্টর আতাউর রহমান মিটন জানান, জাপানী এই নারী পেশায় একজন ফটোগ্রাফার। সেই সাথে জাপানে একটি ফুলের দোকানা ও নকশার দোকান ও প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। ছোট বেলায় তিনি খুব গরীব ছিলেন। অন্যের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তিনি লেখাপড়া করেছেণ। তিনি প্রতিজ্ঞা করেন যদি কখন বড় কিছু হতে পারে তাহলে তিনি গরীব মেধাবী মেয়ের লেখাপড়ায় সহযোগীতা করবেন। সেই প্রতিজ্ঞা থেকে কোবাইসি এই শিক্ষা বৃত্তি প্রদান করে থাকে।
সংস্থার কালীগঞ্জ অফিসের ইনচার্জ হাফিজুর রহমান জানান, যে সব গরীব মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেয়া হচ্ছে তাদের পড়াশোনার খোজ খবর নিয়মিত রাখা হচ্ছে। যাদের বৃত্তি দেয়া হচ্ছে তারা আমাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে কমপক্ষে এইচএসসি পাস করার আগ পর্যন্ত তারা বিয়ে করবে না। সংগঠনটির কর্মকর্তারা মনে করেন তাদের মতো যদি সমাজের ধণী শ্রেণীর মানুষ অন্যান্য গরীব মেধাবী ছাত্রীদের পড়ালেখার জন্য একটু সহযোগীতা করলে বাল্য বিবাহের হাত থেকে অনেক মেয়ে রক্ষা পাবে এবং মানুষের মতো মানুষ হয়ে আত্মনির্ভরশীল প্রতিষ্ঠত হতে পারবে।