সহসা আর দেশে ফিরছেন না সিইসি!

CECসুরমা টাইমস রিপোর্টঃ উপজেলা নির্বাচন চলছে। কিন্তু প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ দেশে নেই। কবে ফিরবেন তার জানে না কেউ। কমিশন সচিবালয় থেকে বলা হয়েছে, সিইসি কমিশনকে দুই লাইনের একটি চিঠি দিয়ে গেছেন। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ৩ মার্চ থেকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করবেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে না ফেরা পর্যন্ত তাঁর অবর্তমানে আবদুল মোবারক সিইসির দায়িত্ব পালন করবেন। কবে ফিরবেন, তা সুনির্দিষ্ট করে বলেননি তিনি।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন নির্বাচন কমিশনার বলেন, সরকারের সঙ্গে সিইসির একটা সমস্যা চলছে। প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা ও সাবেক একজন মন্ত্রীর খবরদারির কারণে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। ওই উপদেষ্টার কারণে কমিশনকে প্রায়ই বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হচ্ছে। সিইসিও তাঁর আচরণে বিরক্ত। ওই কমিশনার বলেন, উপজেলা নির্বাচনের সময় সরকারের প্রশাসন কমিশনের কথা অনেক ক্ষেত্রেই শুনছে না। মূলত প্রশাসনে ওই উপদেষ্টার প্রভাবের কারণে উপজেলা নির্বাচনের সময় কোথাও কোথাও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হচ্ছে।
দলগুলোর মধ্যে অবিশ্বাস আর অনাস্থার মধ্যে বিএনপির মতো বৃহৎ রাজনৈতিক দল সহ প্রায় সব বিরোধী দলকে ছাড়াই সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানটা ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। আর সরকারের চাপে সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে চরম বিতর্কিত একটি নির্বাচন জাতিকে উপহার (!) দিয়ে ক্ষমতাসীন সমর্থক বাদে সব মহলেরই সমালোচনার মুখে পরেন তিনি। এরপরই শুরু হলো উপজেলা নির্বাচন। পাঁচ দফার মধ্যে প্রথম দুই দফা শেষ করেই দেশ ছাড়লেন তিনি। ক্ষমতাসীনদের চাপের মধ্যে একটি নির্বাচন পরিচালনা করতে যাওয়া যে কতটা ঝামেলার তা তিনি টের পান দ্বিতীয় দফার নির্বাচনেই।
রকিবউদ্দিন আহমদের দেশ ছাড়ার পরেই গুঞ্জন ওঠে যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ক্ষমতাসীনদের চাপ সইতে না পেরে বিদেশ পাড়ি দিয়েছেন। হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন তিনি। কিন্তু দেশে না থাকলেও তো পদে আছেন। তাই বিদেশেও হয়ত অস্বস্তি পিছু ছাড়ছে না। তাই শোনা যাচ্ছে তিনি নাকি আর এ আমলে দেশে ফিরছেন না। সেখান থেকেই রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিবেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ আর দায়িত্বে থাকছেন না এমন গুঞ্জন খোদ নির্বাচন কমিশনেই চাউর হয়েছে। অনেক কর্মকর্তা তো নিশ্চিত হয়ে বসে আছেন! বিশেষ করে আজ কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের অনুপস্থিতিতেই তার একান্ত সচিব এ কে এম মাজহারুল ইসলামকে বরখাস্ত করার পর কমিশনের অনেকেই মনে করছেন আর ফিরছেন না তিনি।
সূত্র জানায়, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি বিহীন ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দিন নিজেও অস্বস্থির মধ্যে ছিলেন। মুখে সরকারের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে কথা বললেও এ নির্বাচনের পক্ষে ছিলেন না তিনি। এ কারণে সংসদ নির্বাচনের আগেও তিনি পদত্যাগের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু গৃহিত না হওয়ার আশঙ্কায়- আর পদত্যাগ করলে তার পরিনতি নিয়ে চিন্তিত হয়েই শেষ পর্যন্ত পদত্যাগপত্র জমা দেননি। নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধেই নির্বাচন পরিচালনা করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নির্বাচন কমিশন সচিবলায়ের এক কর্মকর্তা জানান, ‘আমরা যতুটুক জানি তিনি (সিইসি) আর দেশে ফিরবেন না। এছাড়া ছোট্ট একটি কারণে সিইসি স্যারের পিএসকে বরখাস্ত করায় এ অশঙ্কায় আরো বেড়ে গেছে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘স্যার (সিইসি) আমেরিকা থেকেই পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিতে পারেন। যেমন করে সোহেল তাজ বিদেশ থেকে পদত্যাগ পত্র পাঠিয়েছিলেন।’
তবে সিইসি’র পদত্যাগ সম্বন্ধে ক্ষমতাসীনদের কেউই মুখ খুলতে চাননি। তিনি ইতিমধ্যেই তার পদত্যাগের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন কিনা তা ণইয়েও মুখ খুলতে রাজি নন কেউ।