ব্যবসায়ী দিনারের মৃত্যু নিয়ে রহস্য ! আত্মহত্যা নাকি হত্যা

dinar picসুরমা টাইমস ডেস্কঃ নগরীর দক্ষিণ সুরমা থানার মেনিখলার বাসিন্দা মৃত ইসমাইল আলীর ছেলে ও নগরীর সুরমা মার্কেটের তরুন ব্যবসায়ী ইফতেখার হোসেন দিনারের মৃত্যুর রহস্য নিয়ে নানা রকম প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অভিযোগ উঠছে প্রকৃত রহস্য আড়াল করতে দিনারের পরিবার ও আত্মীয়স্বজন লাশের ময়না তদন্ত করতে দেয়নি । কি কারণে দিনার আত্মহত্যা করতে পারে তা স্পষ্ট করে এখনও বলতে পারছেনা তার পরিবার, তারা একেক সময় একেক রকম কথা বলে আসছে। তবে কি দিনারের মৃত্যুর পিছনে অন্য কোন কারণ রয়েছে? দিনারের পরিবার তা যেনেও না জানার ভান করছে। নাকি তার পরিবার কোন অজানা ভয়ে মুখ খুলতে চাইছেনা, এমন প্রশ্ন বিভিন্ন মহলের।
দিনারের লাশের প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবী, এভাবে কেউ আত্মহত্যা করতে পারেনা, তাকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। লাশটি পোষ্ট মার্ডাম করলে মৃত্যুর আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে।
দিনার যে ভাবে আত্মহত্যা করেছে তা দেখলেই অনুমান করা যায় দিনারকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে। ঈদের দু দিন পূর্বে শুক্রবার দিবাগত রাত দেড়টা পর্যন্ত নিজের ব্যবসা প্রতিষ্টানে ব্যবসা করেছে দিনার। দোকানে ফোন ফ্যাক্সের ব্যবসা থাকায় দিনারকে প্রায়ই গভির রাত করে বাড়িতে ফিরতে হত। সারাদিন ঘুমাত আবার সন্ধ্যার সময় ঘুম থেকে উঠে সুরমা মার্কেটে এসে কাজে যোগ দিত। দিনে বিকেল ৪/৫ টার আগে কেউ তাকে ঘুম থেকে ডেকে দিতনা।
যানা যায় ঐ দিনও রাত ২টার দিকে দিনার তার বাড়ি মেনিখলায় যায়। প্রত্যক্ষদর্শী দিনারের বন্ধু রিকেল গাজী জানান যাবার সময় দোকানের হিসাব নিকাশ করে গিয়েছে । কিন্তু তার পরিবারের দাবী পরদিন বিকেল দুই টার দিকে ঘরের দরজা ভেঙ্গে জানালার সাথে গলায় শার্ট পেচানো অবস্থায় দিনারে মৃত দেহ পাওয়া যায়। তারা জানান দিনারের লাশ যখন উদ্ধার করা হয় তখন দিনারের মৃতদেহ তার ঘুমানোর খাটের উপর বসা অবস্থায় ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা দিনারের লাশ dinar pic2দেখেই তাৎক্ষনিক ভাবে সন্দেহ পোষন করেন। দিনারের বন্ধুবান্ধব দিনারের মৃত্যুর খবর শুনে তার লাশ দেখতে গিয়ে প্রথমেই হোচট খান। লাশটি পড়ে ছিল দিনারের কামরায়। পাশে বসা ছিলনা পরিবারের কোন সদস্য। দিনারের ছোটভাইকে ডেকে আনেন বাড়ীর এক যুবক। তাকে প্রশ্ন করা হল কিভাবে কি ঘটল? দিনারের ছোট ভাই জানান, প্রতিদিনের মত দিনার তার কামরায় ঘুমান। দুপুর দেড় দুটার দিকে তার কামরায় তাকে ডেকে কোন সাড়া না পেয়ে ঘরের দরজা ভেঙ্গে দেখতে পান জানালার গ্রিলের সাথে গলায় ফাস দিয়ে দিনার আত্মহত্যা করেছে। এ সময় বিছানার উপর বসা অবস্থায় তার দু’পা বাধা ছিল,  সার্ট দিয়ে জানালার গ্রীলের সাথে তাকে দেখতে পান তারা।
বিছানার সাথে জানালার গ্রীলে কেমন করে আত্মহত্যা করল, এটাকি বিশ্বাসযোগ্য ? তাছাড়া গলায় এত চিকন কাটা দাগত সার্টের দাগ মনে হচ্ছেনা এমন প্রশ্ন করলে তিনি এড়িয়ে যান। প্রতিদিন দিনারকে পাচ ছয়টার আগে ঘুম থেকে ডাকা হয়না, আজ এত তাড়াতাড়ি ডাকার কারন ও তিনি জানাতে ব্যার্থ হন। ঘরের দরজা ভাঙ্গার আগে পুলিশ ডাকা হলনা কেন? গলায় ফাস দিয়ে আত্মহত্যা করলে লাশের ঘাড় যেকোন দিনে বাকা থাকে, জিহ্বা বের করা থাকে, কিন্তু দিনারের বেলায় এমনটি নয় কেন? বিছানায় বসে জানালার গ্রীলের সাথে আত্মহত্যা করল, কিন্তু বিছানা এত পরিপাটি কেন? তার পা বাধল কে, পায়ে জখমের চিহ্ণ কেন? দরজার নিচের সিটকিনি ভাঙ্গা, তাহলেকি দিনার দরজা লাগায়নি, কেউ তাকে হত্যা করে নিচের সিটকিনি টান দিয়ে লাগিয়ে দিয়েছে। নাকি তাকে হত্যা করে ঘরের ভিতরের দরজা দিয়ে চলে গেল, এমন প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে।
Dinar Houseপ্রত্যদর্শীরা অনুমান করেছিল দিনার সার্ট দিয়ে পেঁচিয়ে ফাঁস দেয়নি, তাকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করে গলায় সার্ট পেঁচিয়ে জানালার সাথে বেধে রাখা হয়েছে। যার জন্য দিনারে লাশ পোষ্ট মার্ডাম না করেই তড়িগড়ি করে রাতের আধারে কবর দেওয়া হয়। রহস্যজনক কারনে দিনারের জানাযার খবরটি পর্যন্ত মসজিদের মাইকে প্রচার করা হয়নি। নিহতের লাশ জানাযার জন্য মসজিদে নেওয়ার পর মাইকে ঘোষনা দিতে গেলে কেনইবা তার পরিবারের সদস্যদের থেকে মাইকে ঘোষনা দিতে বাধা আসে? দিনারের পরিবারিক সূত্র বলছে, কথিত ঐ প্রেমিকাকে বাঁচাতে দিনারে লাশ পোষ্টমার্ডাম করা হয়নি। তবে কি কথিত ঐ প্রেমিকার সাথে দিনারের কোন স্বজনের দফা-রফা হয়েছে লাশ পোষ্ট মার্ডাম না করে প্রকৃত বিষয়টি আড়াল করার জন্য। দিনারে লাশ দেখে আসা প্রত্যদর্শী সুরমা মার্কেটের ব্যবসায়ী কমরু মিয়া জানান, দিনার যে রাতে মারা গেছে সে রাতে মার্কেটে তার সাথে রাত ১২ টার দিকে কথা হয়েছে এবং তাকে কফি খাওয়ার জন্য দিনার অনুরোধ করেছে, এসময় তার আচরন সাভাবিকই ছিল। কিন্তু পরদিন বেলা ২টার দিকে দিনারের মৃত্যুর খবর শুনে তার বাড়িতে ছুটে যান লাশ দেখে এবং গলায় আঘাতের চিহ্ণ দেখে তিনি প্রায় নিশ্চিত হয়েছেন দিনার নিজে আত্মহত্যা করেনি তাকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে। দিনারের ঘনিষ্ট বন্ধুরা কমরু মিয়ার বক্তব্যর সাথে একমত পোষন করে বলেছেন দিনারকে হত্যা করা হয়েছে। প্রত্যদর্শী প্রায় সকলেরই একই মত দিনার কে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু দিনারে পরিবারে বক্তব্য কেন ভিন্ন রকম!
মৃত্যুরহস্য নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা রকম প্রশ্ন। দিনারের একাধিক বন্ধুদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দিনার বিয়ানীবাজার কসবা গ্রামের যে মেয়েটিকে ভালবাসতো সে প্রেমিকার বড়ভাই দিনারকে একাধিকবার প্রাণে হত্যার চেষ্টা করেছে প্রেমিকার ঐ বড় ভাই নাকি বিয়ানীবাজার ছাত্রদলের সাবেক ক্যাডার ছিল। প্রেমিকার ভাই মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে দিনারকে হত্যা করে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়েছে। এছাড়া আরেকটি ভিন্ন কারণ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, দিনারের আত্মীয় স্বজনের সাথে পারিবারিক জায়গা জমি নিয়ে দীর্ঘ দিনের বিরোধ চলে আসছিল তার এনিয়ে একাধিকবার সালিশ বিচার বৈঠকও হয়েছে। তবে কি দিনারের কথিত প্রেমিকার পরিবার পরিকল্পিত ভাবে বড় অংকের টাকার বিনিময়ে দিনারকে হত্যা করিয়েছে। কারণ তার ঐ কথিত প্রেমিকার বিয়ে সম্প্রতি ঠিক করা হয়েছে জনৈক লন্ডন প্রবাসী একটি ছেলের সাথে, আর এ পথের কাঠা হয়ে দাড়িয়ে ছিল দিনার। তাই তাকে সরিয়ে দিয়েছে চিরতরে এ পৃথিবী থেকে। মৃত্যুর ৩ দিন আগে ঐ প্রেমিকা নাকি দিনারকে তার বাড়ীতে খবর পাঠিয়ে নিয়েছিল বিয়ের কথা বলার জন্য বিষয়টি দিনার ফিরে এসে একাধিক বন্ধুদের অবগত করেছিল। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, নিহত দিনারের আত্মীয় স্বজনের যোগসূত্রেই তাকে হত্যা হতে পারে। তাই দিনারের মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটন করতে শিঘ্রই দিনারের লাশের পোষ্ট মার্ডাম করা উচিত বলে সচেতন মহল মনে করেন।
দিনারের মৃত্যুর পিছনে ২০ লক্ষ টাকার খেলা বৃদ্ধমান রয়েছে এমন সংবাদ এখন চাউর হয়ে সবার মুখে মুখে বিরাজ করছে। দিনারই বলেছিল তার কথিত প্রেমিকার ভাই তাকে হুমকি দিয়েছে ২০-৩০ লক্ষ টাকা লাগলে প্রেমিকা রুপার জীবন থেকে তাকে সরিয়ে দিবে, তবুও দিনারের সাথে তার বোনকে বিয়ে দিবে না। তা হলে কি কথিত প্রেমিকার ভাইয়ের সেই টাকাই কাজ করেছে দিনার হত্যার পিছনে। নাকি দিনারের কথিত প্রেমিকার ভাইয়ের ঘোষনাকৃত সেই টাকার লোভ পেয়ে বসেছিল দিনারের কোন স্বজনদের। এমন প্রশ্ন এখন দিনারের বন্ধু মহলসহ সর্বত্র বিরাজ করছে। দিনারের মৃত্যুর খবর শুনার পরপরই কথিত প্রেমিকার মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে যায় কেন? ঐ প্রেমিকা নাকি দিনারের মৃত্যুর খবর শুনার পর ফোন করে দিনারের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়ার পর পরই তার ফোন বন্ধ করে দেয়। নগরীর সুরমা মার্কেটস্থ দিন-রাত ওহাব টেড্রার্সের ব্যবসায়ী ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল সুরমার ডাকের সংবাদকর্মী ইফতেখার হোসেন দিনার মোবাইলে ক্রস কানেকশনের মাধ্যেমে বিয়ানীবাজার থানার কসবা গ্রামের রুপা নামের একটি মেয়ের সাথে পরিচয় হয়। এ পরিচয় থেকে এক সময় প্রনয় গড়ে উঠে। একে অপরের সাথে দেখা সাাক্ষাত ও হতো নিয়মিত, কখনো সিলেট নগরীতে কখনো বিয়ানীবাজার গিয়ে প্রেমিকাকে এক নজর দেখে আসতো দিনার।এ ভাবে প্রায় ছয়টি বছর চলছিল দিনার ও রুপার প্রেম। প্রেমিকার বিভিন্ন বায়না মিঠাতে দিনার কয়েক লক্ষ টাকা ব্যায় করে ছয়টি বছরে। প্রেমের সুযোগ কাজে লাগিয়ে হাতিয়ে নেয় ঐ কথিত প্রেমিকা অনেক উপহার, নিজে রুজী করে প্রেমিকার বায়না মিঠাতে না পারলে বন্ধুদের কাছে হাত পেতে ধার নিয়ে প্রেমিকার বায়না মিঠাতো সে। কিন্তু সম্প্রতি সময়ে দিনার ঐ প্রেমিকাকে বিয়ের জন্য প্রস্তুত হলে মাঝ পথে বাধ সাধে প্রেমিকার লন্ডন প্রবাসী বড় ভাই, মৃত্যুর ৪দিন আগেও দিনারকে বিয়ানীবাজার বাড়িতে ফোন করে নেয় রুপা,এ সময় বিয়ের কথা নিয়ে প্রেমিকার ভাইয়ের সাথে দিনারের বড় ধরণের ঝামেলা হয়। কিন্তু এ ঘটনার ৩ দিন পরই দিনারের রহস্যজনক মৃত্যু হয়। তবে দিনারের পরিবার বলছে যে, রুপার পরিবার বিয়েতে রাজি না হওয়ায় দিনার আত্মহত্যা করতে পারে।