জঙ্গি সংগ্রহে বাংলাদেশে এসে ব্রিটিশ জিহাদি সামিয়ুন আটক
সুরমা টাইমস রিপোর্টঃ জঙ্গি সংগ্রহেই বাংলাদেশ এসেছিলো ব্রিটিশ জিহাদি সামিয়ুন। রোববার রাতে ব্রিটিশ জঙ্গি সামিয়ুনকে গ্রেফতারের পর সোমবার অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানায় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ(ডিবি)।
ডিবি আরও জানায়, আইএস জঙ্গিরা তাদের জনবল বাড়ানোর জন্য বিশেষ করে ফেইসবুকে স্ট্যাটাস ও কমেন্টসকে প্রাধান্য দেয়। শুধু ফেইসবুকই নয় অনলাইনে অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তারা তৎপরতা চালিয়ে থাকে।
সম্প্রতি কমলাপুর থেকে গ্রেফতার হওয়া আইএস ও নুসরা ব্রিগেডের সদস্য সংগ্রহকারী ব্রিটিশ নাগরিক সামিয়ুন রহমান ওরফে ইবনে হামদান জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য দেয় বলে জানিয়েছে ডিবি। গ্রেফতারকৃত সামিয়ুন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক। তার পূর্বপুরুষ হবিগঞ্জের নবীগঞ্জের বাসিন্দা ছিলেন। ব্রিটেনে জন্মগ্রহণের পর সেখানেই উচ্চ শিক্ষা নেন তিনি।
ডিবি জানিয়েছে, সিরিয়া ফ্রন্টে সশস্ত্র জিহাদী কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে আইএস ও নুসরা বিগ্রেডের জন্য মুজাহিদ সংগ্রহ করতে বাংলাদেশে এসেছিলো সামিয়ুন। জিজ্ঞাসাবাদে সামিয়ূন জানিয়েছে এই সংগঠনে যোগদানের আগে তিনি আইয়্যামে জাহিলিয়্যাতের যুগের মানুষের মতো ছিলেন। এখন তিনি সঠিক পথের সন্ধান পেয়েছেন। তাই তাদের উদ্দেশ্য হলো সম্প্রতি আল কায়দার নেতা আইমান আল জাওয়াহিরির ঘোষিত একিআইএস বা আল কায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাব কন্টিনেন্ট এর জন্য বাংলাদেশ ও মায়ানমার এ জঙ্গি নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করা।
সোমবারের প্রেস ব্রিফিংয়ে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, গত ২৪ সেপ্টেম্বর গোয়েন্দা পুলিশ আসিফ আদনান ওরফে জুলকারনাইন ও ফজলে এলাহি তানজিলকে গ্রেফতার করে। পরে তাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা একিউআইএস এর কার্যক্রম সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা ব্রিটিশ নাগরিক সামিয়ুন রহমান ওরফে ইবনে হামদান সম্পর্কেও বিস্তারিত তথ্য দেয়।
তাদের তথ্যের ভিত্তিতে গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাত সোয়া ১১টায় কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে সামিয়ুনকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। এ সময় তার কাছ থেকে ৬টি মোবাইল, ১টি ব্রিটিশ পাসপোর্ট ও এটিএম কার্ড, ব্যাংক চেক ও অন্যন্য সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত সামিয়ুন আরো জানায়, ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে একই বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সিরিয়ায় নুসরা ব্রিগেডের সদস্য হয়ে জিহাদী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছেন তিনি। এই কার্যক্রমে অংশ নিতে এক বন্ধুসহ বৃটেন থেকে তুরস্ক হয়ে সিরিয়ায় যান তিনি। জিহাদী কার্যক্রমে অংশগ্রহণের জন্য সক্ষম যুবক সংগ্রহে ইতোপূর্বে মৌরতানিয়া ও মরক্কোতেও ভ্রমণ করেন তিনি।
পিস টিভির এর উপস্থাপক অ্যান্থনি এর ফেসবুক পেজের সূত্র ধরে সিরিয়ায় জিহাদে অংশগ্রহণে ইচ্ছুক বাংলাদেশি নাগরিক আসিফ আদনান ওরফে জুলকারনাইন এর সাথে তার পরিচয় হয়। পরে বাংলাদেশ থেকে সিরিয়ায় মুজাহিদ প্রেরণের লক্ষ্যে গত ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে তিনি পুনরায় বাংলাদেশে আসেন।
ডিবি আরও জানায়, ইতোপূর্বে গ্রেফতারকৃত আসিফ আদনান, ফজলে এলাহি তানজিল, সেকান্দর আলী নকি ও তাসনিম ওরফে নাহিদের মাধ্যমে বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি গোষ্ঠীর সক্রিয় সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করে সিরিয়ায় একটি জিহাদি টিম পাঠানোর পরিকল্পনা করে সামিয়ুন। এ বিষয়ে তার উদ্দেশ্য ছিল সিরিয়ায় জিহাদী কার্যক্রম শেষে বাংলাদেশ ও মায়ানমারে আল কায়েদার আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক স্থাপন করা।
গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে তাদের যোগাযোগ সম্পর্কিত বেশ কিছু ক্ষুদে বার্তা মামলার আলামত হিসেবে সংগ্রহ করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত সামিয়ুন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানায় যে, আসিফ আদনান ওরফে জুলকারনাইন, জাবের, আবু নায়না, আব্দুল করিম ও আব্দুল্লাহ তার সহযোগী ছিল।
ডিবি জানিয়েছে, গ্রেফতারকৃত সকলেই একে অপরের সহায়তায় নিষিদ্ধ সংগঠন আল-কায়দার নেতা জাওয়াহিরির বক্তব্যে প্ররোচিত হয়ে বাংলাদেশে আল-কায়দার জঙ্গি নেটওয়ার্ক তৈরি করে নানা রকম নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা করছিলো।