সিলেটে হচ্ছে দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় শহীদ মিনার
সুরমা টাইমস রিপোর্টঃ সিলেটে নির্মিত হচ্ছে দেশের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন শহীদ মিনার। প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক স্থাপত্যে নির্মিত এই শহীদ মিনার কাজ শেষ হবার আগেই মানুষের নজর কাড়ছে। এটি নির্মাণের মধ্য দিয়ে সময়ের প্রবাহে সিলেটের ঐতিহ্যের সাথে আরেকটি গৌরব যুক্ত হবে বলে মনে করছেন সিলেটবাসী। দৃষ্টিনন্দন শহীদ মিনারটি দেখে যে কেউ মুগ্ধ হবে। স্থাপত্য কলার অনন্য নিদর্শন শহীদ মিনারটিতে স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন ঐতিহ্য ব্যবহার করা হয়েছে। উন্নত মম শিরের মতো স্তম্ভের মধ্যে রাখা হয়েছে আমাদের মহান অর্জন স্বাধীনতার লাল সুর্য। আছে মাথা উচু করে দাড়াবার প্রত্যয়। কখনো দূর থেকে দেখলে মনে হবে উচু নিচু একটি পাহাড়, সবুজের হাতছানি। চারপাশে যেন লেগে আছে সারাক্ষণ পাহাড়ের ঢেউ। পাহাড়কে কেউ আবার ভাবতে পারে বহমান কোনো নদী। সিলেটের এ রকম নানা ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং বাঙ্গালীর দীর্ঘ সংগ্রামী চেতনাকে মাথায় রেখে নির্মিত হয়েছে আধুনিক স্থাপত্যে বাংলাদেশের অন্যতম আকর্ষণীয় শহীদ মিনার। এখন অপেক্ষা কেবল উদ্বোধনের। নানা কারণে পর্যটকদের কাছে ঐতিহ্যবাহী জনপদ সিলেট। কালের বহু স্মৃতি, বহু স্থাপনা, তার নির্মাণশৈলী আজো সিলেটেকে দিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যের মর্যাদা। নিসর্গের ছায়া ডাকা সিলেট সময়ের প্রবাহে সেই ঐতিহ্যের সাথে আরেকটি দৃষ্টিনন্দন আধুনিক স্থাপত্য যোগ হলো। যার রুপ ঐশ্বর্য বিমোহিত করবে পর্যটকদের।
সিলেটের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অনেকেই মনে করেন, সবুজের অপরুপ সাজে সজ্জিত সিলেটে নির্মিত বিশাল আকৃতির শহীদ মিনারটি সিলেটের ইতিহাস ঐতিহ্যকে আরো সমৃদ্ধ করবে। পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাক দেবে তার স্থাপত্য। সৌন্দর্য পিপাসুদের জন্য একটি দর্শনীয় স্থানও হতে পারে এটি।
১৯৮৮ সালে এ অঞ্চলের ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধের সুতিকাগার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার স্থাপন করা হয়। সিলেটের কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও কিছু প্রতিশ্রুতিশীল মানুষ তখন সেই শহীদ মিনারের বীজ বপন করেন। তারপর সেই শহীদ মিনারই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মর্যাদা লাভ করে। এই শহীদ মিনারকে কেন্দ্র করেই সিলেটের সকল প্রগতিশীল আন্দোলন, এ অঞ্চলের তাবৎ সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড বেগবান হয়। গত বছরের ২২ ফেব্রুয়ারী সিলেট নগরীতে হেফাজতের একটি মিছিল জিন্দাবাজার থেকে আম্বরখানার দিকে যাচ্ছিল। এসময় মিছিল থেকে চৌহাট্টাস্থ সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ব্যাপক ভাংচুর করা হয়। তারপর শহীদ মিনারটি দীর্ঘদিন ভাঙ্গা অবস্থায় ছিলো। পরে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত শহীদ মিনারটি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পুন:নির্মাণের জন্য সিলেট সিটি কর্পোরেশনকে নির্দেশ দেন। পরে বিষয়টি নিয়ে অর্থমন্ত্রীর সাথে বসেন সিলেটেন সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সবাই। তারা বর্ধিত পরিসরে নতুন আঙিকে শহীদ মিনারটি পুন:প্রতিষ্টার দাবী জানান। সেই প্রস্তাব অনুযায়ী সিলেট সিটি কর্পোশেন কাজ শুরু করে। এতে ব্যয় ধরা হয় প্রায় তিন কোটি টাকা। বর্তমানে কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ১শ ফুট চওড়া বিশিষ্ট ভূমির উপর ৪৫ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট শহীদ স্তম্ভটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে আধুনিক স্থাপত্যে নির্মিত এটি হবে বাংলাদেশের অন্যতম শহীদ মিনার। সিটি কর্পোরশন সুত্রে জানা যায়, শহীদ মিনারটি দৃষ্টিনন্দন করে তুলতে বিভিন্ন পরিকল্পনা রয়েছে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজও চলছে। যেমন মূল স্তম্ভের পাশাপাশি শহীদ মিনার এলাকায় মুক্তমঞ্চ রাখা হবে। সাথে থাকবে বাগান, প্রদর্শনী কেন্দ্র, পাঠাগার, ব্যাক স্টেইজ, অনুশীলন পরিসর, ড্রেসিং রুম। শহীদ মিনারের সম্মুখ চত্বরে নির্মিত হবে সিড়িঁ। শহীদ মিনারের আন্ডার গ্রাউন্ডে প্রায় চারশত মানুষ বসার মতো জায়গা রাখা রয়েছে। আন্ডার গ্রাউন্ডের সেই খালি জায়গাটুকুও যাতে কাজে লাগানো যায় এজন্য অর্থমন্ত্রীকে বেশ কিছু প্রস্তাব দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সংস্কৃতিকর্মীদের পক্ষ থেকে। এসব প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও সিলেটের লোকসংস্কৃতির উপর একটা সমৃদ্ধ ভান্ডার গড়ে তোলা। তরুণরা সেখানে বসে যাতে মুক্ত চর্চা ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে গবেষণা করতে পারে। এগুলো ছাড়াও পুরো শহীদ মিনারের সৌন্দর্য বর্ধনে আরো কিছু কাজ করার পরিকল্পনাও রয়েছে সিটি কর্পোরেশনের।
শহীদ মিনারটির নকশা এঁেকছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শুভজিৎ চৌধুরী। এছাড়াও তার সহযোগী স্থপতি হিসেবে সাথে রয়েছেন কৌশিক সাহা, সিপাউল বর চৌধুরী, ধীমান চন্দ্র বিশ্বাস ও জিষ্ণু কুমার দাস। প্রকৌশলী হিসেবে আছেন হুমায়ুন খান ও দেবাশীষ ভট্টাচার্য।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীব বলেন, আগামী ১৬ ডিসেম্বর শহীদ মিনারটি উদ্বোধন করার লক্ষে দ্রুতগতিতে কাজ চলছে। এ ধরণের শহীদ মিনার দেশে খুব কমই আছে জানিয়ে তিনি বলেন, একদিকে দৃষ্টিনন্দন বিশাল শহীদ মিনার অন্যদিকে পাশাপাশি আছে বুদ্ধিজীবিদের সমাধিক্ষেত্র। এটি দেখে যে কেউ মুগ্ধ হবে।
সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানান, শহীদ মিনারের সৌন্দর্য রক্ষার জন্য সার্বক্ষণিক কিছু লোকও থাকবে। সেই সাথে নিরাপত্তার বিষয়টিও তদারকি করা হবে। এজন্য সিটি কর্পেরেশনের পক্ষ থেকে লোক নিয়োগ দেয়া হবে।