পিডিবির মাছ চুরির ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা : আড়ালে থেকেই কলকাঠি নাড়ছেন সিবিএ নেতারা
সোহেল আহমেদঃ সিলেটের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের পুকুরের মাছ চুরির ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। মাছ চুরির সাথে জড়িত পিডিবির রাঘব বোয়ালরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও তাদের নাম এজাহারে উল্লেখ করা হয়নি। ঘটনাস্থলে থাকা দুই নিরাপত্তা প্রহরীসহ পিডিবির কয়েক কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত থাকলেও রহস্যজনক কারণে এজাহারে তাদের নাম উল্লেখ করা হয়নি। বিউবোর একটি সংঘবদ্ধ চক্র তাদের রক্ষার্থে অজ্ঞাত আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার বাদী বিউবোর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পরিচালন ও সংরক্ষণ সার্কেলের সহকারী পরিচালক রুহুল আমীন জানিয়েছেন, মাছ চুরির কালে কাউকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি, তাই অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
জানা গেছে, ২০১০ সালে পিডিবির চেয়ারম্যান আলমগীর কবির এই পুকুরে ৩০ হাজার টাকা ব্যয়ে ২৫ হাজার বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা অবমুক্ত করেন। কয়েক বছরে পোনাগুলো বড় হয়ে উঠায় সিবিএ নেতাদের নজরে পড়ে। মাছগুলো হাতিয়ে নিতে তারা সময় ও দিনক্ষণ ঠিক করে রাখেন। ঈদুল ফিতরের ছুটিতে কর্মকর্তা কর্মচারীরা যখন ব্যস্ত ঠিক এই সুবাদে বহিরাগতদের দিয়ে তারা মাছ লুটের পাঁয়তারা করে।
গত ২৬ জুলাই রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিউবোর কয়েক কর্মকর্তা-কর্মচারী বহিরাগত লোকজন নিয়ে বাগবাড়িস্থ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) আবাসিক এলাকায় ডুকে জাল দিয়ে পুকুর থেকে মাছ ধরতে থাকেন। এ সময় বিউবো কর্মচারী ইউনিয়ন শাখার সভাপতি শুকুর আহমদ, সাধারণ সম্পাদক সুরমান আলী, যুগ্ন সম্পাদক আব্দুল জলিল, সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন, শাহাব উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন সিবিএ নেতা উপস্থিত ছিলেন। বিউবোর দুই নিরাপত্তা প্রহরী মোহাম্মদ আলী ও আব্দুল মজিদ ঘটনা পর্যবেক্ষন করেন। তাদের উপস্থিতিতে কয়েক লাখ টাকার মাছ লুট করা হয়। পরদিন এ ঘটনায় নগরজুড়ে তুলপাড় শুরু হলে বিভিন্ন জাতীয় ও দৈনিক প্রত্রিকাগুলোতে বিউবোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জড়িয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ফলে টনক নড়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের। এ ঘটনায় বিউবোর পরিচালন ও সংরক্ষণ সার্কেলের সহকারী পরিচালক রুহুল আমীন দুই নিরাপত্তা প্রহরীর মনগড়া স্বাক্ষ্য নিয়ে অজ্ঞাত আসামি করে কোতয়ালী থানায় মামলা দায়ের করেছেন। অভিযোগ উঠেছে, সহকারী পরিচালক রুহুল আমীন বিউবোর প্রভাবশালী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাচাতে তাদের নাম এজাহারে উল্লেখ করেননি।
অভিযোগ রয়েছে, প্রভাবশালী সিবিএ নেতা সুরমান আলী এ ঘটনা ভিন্নখ্যাতে প্রভাবিত করতে পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতির দায়ে ১/১১’র তাকে কারাভোগ করতে হয়েছে। পিডিবির বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল কাদিরকে পিডিবি ডিভিশন-২ এর এসডি থাকাকালে অবৈধ্য প্রস্তাবে রাজি করাতে না পেরে অফিসে কর্মরত অবস্থায় শারিরীকভাবে লাঞ্ছিত করেন। পরে তাকে অন্যত্র বদলী করা হলে পরবর্তীতে খুটির জোরে আবারও সিলেট বিউবোতে জয়েন্ট করেন। সুরমান আলীর রয়েছে সিলেটের বিভিন্ন স্থানে কোটি টাকার সম্পত্তি। সামন্য এসবি পদে কর্মরত সুরমান আলী ক্ষমতার প্রভাব কাটিয়ে এসব সম্পত্তির মালিক হয়েছেন বলে বিউবোর অনেক কর্মচারীরা জানিয়েছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা লামাবাজার পুলিশ ফাঁড়ির আই সি সিরাজুল ইসলাম জানান, পিডিবির পুকুর থেকে মাছ চুরির কালে ঘটনাস্থলে বিউবোর একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন বলে জানাগেছে। তবে মামলার এজাহারে বিউবোর পক্ষ থেকে কারো নাম উল্লেখ না করায় ঘটনাটি রহস্যজনক বলে মনে হচ্ছে। নিরাপত্তা প্রহরী মোহাম্মদ আলী ও আব্দুল মজিদ লিখিতভাবে যে স্বাক্ষ্য দিয়েছেন তা যৌতিক মনে হচ্ছেনা। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করা হবে।