অদম্য মেধাবীদের গল্প
টিউশনী আর সবজি চাষের আয় দিয়েই জুগিয়েছে নিজেদের লেখাপড়ার খরচ
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:
আফরোজা বেগম: পরিবারের অর্থনৈতিক দৈন্যদশা ধমিয়ে রাখতে পারেনি মেধাবী আফরোজা বেগমের প্রতিভাকে। দারিদ্রতার কারনে পরিবার থেকে এক সময় বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল আফরোজার লেখাপড়া। কিন্তু নিজের আগ্রহ আর প্রতিভার কাছে এক সময় পরাজিত হয় দারিদ্রতা। দোয়ারাবাজার উপজেলার সমুজ আলী স্কুল ও কলেজ থেকে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় আফরোজা বেগম মানবিক বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে। উপজেলার বোগলাবাজার ইউনিয়নের বহরগাঁও গ্রামের দিনমজুর ওয়ারিস আলীর দ্বিতীয় মেয়ে আফরোজা। চার ভাই বোনের মধ্যে দারিদ্রতার কারনে একমাত্র আফরোজা ছাড়া পরিবারের আর কেউই লেখাপড়া করতে পারেনি । কোনো রকম দিন মজুরী করে সংসারের হাল ধরে আছেন বয়োবৃদ্ধ পিতা ওয়ারিস আলী। আর্থীক সামর্থ না থাকায় ওয়ারিস আলী এক সময় আফরোজার লেখাপড়া বন্ধ করে দিলেও প্রতিনিয়ত বিদ্যালয়ের ক্লাস শেষে আফরোজা গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিউশনী করিয়ে যে সামান্য অর্থ পেয়েছে তাই দিয়ে নিজের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে গেছে। আফরোজার এখন একটাই স্বপ্ন সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেলে ইংরেজিতে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহন করে ভভিষ্যতে শিক্ষকতা করার মধ্য দিয়ে আলোকিত সমাজ গড়ার। কিন্তু দিন মজুর ওয়ারিস আলীর পক্ষ্যে মেয়েকে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করানোর সামর্থ নেই, তাই আফরোজা ভালো ফলাফল করলেও এখন উচ্চ শিক্ষা গ্রহনে সবচেয়ে বড়বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছে তাদের পরিবারের দারিদ্রতা ।
সোহাদা আক্তার: বাল্য বিবাহের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করে অভাবের সংসারে অন্যের বাড়িতে টিউশনী করে ও বাড়ির আঙ্গিনায় নিজের সবজি চাষের আয় থেকেই নিজের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে মেধার স্বাক্ষর রেখেছে সোহাদা আক্তার । শহুরে সুযোগ সুবিধা না থাকলেও অজপাড়াগাঁওয়ে যে প্রতিভা থাকতে পারে তারই প্রমাণ দিল সোহাদা। দোয়ারাবাজার উপজেলার সমুজ আলী স্কুল ও কলেজ থেকে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় সোহাদা আক্তার মানবিক বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে। সোহাদা আক্তার উপজেলার বোগলাবাজার ইউনিয়নের বালিছড়া গ্রামের বয়োবৃদ্ধ দরিদ্র কৃষক নুরুল ইসলামের মেয়ে। নুরুল ইসলাম বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়েছেন, একসময় তার সব কিছু থাকলেও নিজের অসুস্থতা আর সংসারের ঘানি টানতে গিয়ে আজ তার সবই শেষ। দুই ভাই চার বোনের সংসারের হাল ধরেছেন একমাত্র উপার্জন ক্ষম দিনমজুর ভাই আরিফ। পরিবারের অসচ্চলতার কারনে এসএসসি পাস করার পরই মেয়ের লেখাপড়া বন্ধ করে দিতে চেয়েছিলেন নুরুল ইসলাম। অভাবের সংসারে এক সময় মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দায়মুক্তি নিতে গেলেও লেখাপড়া করার প্রবল আগ্রহ থাকায় বাল্য বিবাহে বাঁধ সাধে সোহাদা নিজেই। তারপর বিদ্যালয়ে ক্লাস শেষে প্রতিনিয়ত গ্রামের অন্যান্য বাড়িতে গিয়ে টিউশনী করা আর বাড়ির আঙ্গিনায় সবজি চাষের সামান্য আয় দিয়েই সোহাদা চালিয়েছে গেছে তার লেখাড়ার খরচ। দিন মজুর এক ভাই চালিয়ে যাচ্ছেন পরিবারের অপর এক ভাই ও দুই বোনের লেখাড়ার খরচ। সোহাদা আক্তারের স্বপ্ন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেলে ভবিষ্যতে সে একজন বিসিএস ক্যাডার হতে চায়। কিন্তু অসুস্থ্য বযোবৃদ্ধ পিতা ও দিনমজুর বড় ভাইয়ের পক্ষ্যে সোহাদাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করানোর সামর্থ নেই। দরিদ্র পরিবারের মেয়ে সোহাদা মেধার স্বাক্ষর রাখলেও তার বিশ্বদ্যিালয়ে লেখাপড়া করার সুযোগ বঞ্চিত হওয়া ও স্বপ্ন পুরনের পথে শুধু মাত্র দারিদ্রতাই যে বড় বাঁধা হয়ে দারিয়েছে এমনটি চিন্তা করেই হতাশায় পড়েছে সোহাদা ও তার পরিবারের লোকজন।