ওসি আতাউরের বিরুদ্ধে মামলা : গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি : গ্রেফতার এড়াতে ভারতে পালানোর পাঁয়তারা
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ কনেস্টেবল থেকে অতি দ্রুত পদন্নোতি পেয়ে ওসি আতাউরের অবশেষে ব্যাবস্থা নেয়া হয়েছে। সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সিলেট কতোয়ালী থানার ‘ক্লোজড’ হওয়া ওসি আতাউর রহমানের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে। (মামলা নং ৮, তারিখ-০৩/০৮/২০১৪) রবিবার রাত ৮.৪৫ মিনিটে কতোয়ালী থানায় মামলাটি দায়ের করেন ছাতক পৌর চেয়ারম্যানের ভাই শামীম আহমদ চৌধুরী। মামলা হওয়ার তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম।
মামলায় আতাউর ছাড়াও কোতোয়ালি থানার ওসি (তদন্ত) শ্যামল বণিক, উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রহিম, উপ-সহকারি পরিদর্শক (এএসআই) তাহের ও কনস্টেবল অধিরকেও আসামি করা হয়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশনার ১০ দিন পর আতাউরসহ অন্যদের বিরুদ্ধে এই মামলা হলো। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে এসএমপি-র সহকারী কমিশনার দেবজিৎ সিং চৌধুরীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
কতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম জানান- নির্যাতন, হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন-২০১৩ এর ৩২৪/৩২৫/৩২৬/৩০৭/৩৪১/৩৪২/৩২৭/১০৯/৩৪/১৫/১৩১ এর ধারাসহ সংশ্লিষ্ট ধারানুযায়ী মামলাটি এজাহারভূক্ত করা হয়েছে। এখন আইনানুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এদিকে দেশ ছেড়ে পালাতে পারেন এমন আশংকায় সিলেট কোতোয়ালি থানার সাবেক ওসি (বরখাস্তকৃত) আতাউর রহমানের উপর গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে সিলেটের জকিগঞ্জ পৌরসভাধীন নোয়াগ্রামের নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন। সেখানে তর গতিবিধি লক্ষ করছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। রবিবার রাত পৌণে ৯টার দিকে আতাউরের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর তার পালানোর সম্ভাবনা বেড়ে যাওয়ায় গোয়েন্দা তৎপরতা আরো বাড়ানো হয়েছে। বরখাস্ত হওয়ার পর থেকে তিনি গ্রামের বাড়িতে রয়েছেন। ঈদও করেছেন গ্রামের বাড়িতে। জকিগঞ্জে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত রেখা নির্ধারণ করেছে কুশিয়ারা নদী। জকিগঞ্জ বাজার থেকে কুশিয়ারা নদী পার হলেই ভারতের করিমগঞ্জ। আর করিমগঞ্জের হাদারগ্রামে ওসি আতাউরদের আদিনিবাস।
সূত্র জানায়, ওসি আতাউর সীমান্ত পেরিয়ে পুরনো আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ি উঠার কথা রয়েছে। সেখান থেকে সুযোগ বুঝে মেয়ের কাছে লন্ডনে যাওয়ার চেষ্টা করবেন তিনি। জকিগঞ্জ সীমান্তের উত্তরকুল, সহিদাবাদ, বারঠাকুরী, ছবড়িয়া, নরসিংপুর অথবা মাদারখাল এলাকা দিয়ে তিনি ভারতে পালাতে পারেন।
তবে এ ক্ষেত্রে ছবড়িয়া ও নরসিংপুর দিয়ে পালানোর সম্ভাবনাই বেশি। এই দুই এলাকার একটি দিয়ে পালাতে পারলে তার আদিনিবাস হাদারগ্রামে সহজে পৌঁছতে পারবেন তিনি। তবে রবিবার সকাল থেকে গোয়েন্দা নজরধারী শুরু হওয়াতে গোয়েন্দাদের চোখে ধুলা দিয়ে ওসি আতাউর সীমান্ত পার হতে পারবেন কি-না তা এখন দেখার পালা।
প্রসঙ্গত, গত ১৭ জুলাই সিলেট নগরীর নয়াসড়কস্থ এলাকায় গাড়ি পার্কিংকে কেন্দ্র করে ছাতক পৌরসভার মেয়র কালাম আহমদ চৌধুরীর ভাই কামাল আহমদ চৌধুরীকে কোতোয়ালি থানার ওসি আতাউর রহমান ও ওসি (তদন্ত) শ্যামল বণিক, উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রহিম, উপ-সহকারি পরিদর্শক (এএসআই) তাহের ও কনস্টেবল অধির থানার ভেতর শারীরিক নির্যাতন করেন।
এ ঘটনায় কামাল আহমদ চৌধুরীর ছোট ভাই শামীম আহমদ চৌধুরী ২৪ জুলাই, বৃহস্পতিবার দুপুরে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন দায়ের করেন। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারক সালমা মাসুদ চৌধুরী ও মো. হাবিবুল গনির সমন্বয়ে গঠিত একটি বেঞ্চ পুলিশের আইজিপি এবং সিলেটের পুলিশ কমিশনারকে ওসি আতাউরসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা রুজুর নির্দেশ দেন। ঘটনাটি তদন্ত করে চার সপ্তাহের মধ্যে এ সংক্রান্ত একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য মানবাধিকার সংস্থার চেয়ারম্যানকেও নির্দেশনা দেয়া হয়।
হাইকোর্টের এমন নির্দেশনার প্রেক্ষিতেই নির্যাতিত কামাল আহমদ চৌধুরীর ছোট ভাই শামীম আহমদ চৌধুরী রবিবার রাতে কোতোয়ালি থানায় গিয়ে মামলাটি দায়ের করেন।