শাবি ভিসি আমিনুল হক ভূইয়া ও ড. জাফর ইকবাল মুখোমুখি?
শাবি প্রতিনিধিঃ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর আমিনুল হক ভূইয়ার সঙ্গে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ও ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের ঠান্ডা লড়াই চলছে। শুধু তাই নয় অবস্থাটা এমন হয়েছে যে ভিসি যে প্রোগ্রামে প্রধান অতিথি থাকেন সে প্রোগামে ড. জাফর ইকবাল উপস্থিত থাকেননা।
তাদের প্রেস্টিজ ইস্যু নিয়ে তারা ভিন্ন অবস্থানে রয়েছেন। তাদের দু’জনের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই নিয়ে শাবি ক্যাম্পাসে এখন গুঞ্জন চলছে। অনেকে বিষয়টিকে মনস্তাত্বিক দ্বন্দ্ব হিসেবে দেখছেন। বিষয়টি ক্যাম্পাসের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে হয়ে উঠেছে টক অব দ্যা ক্যাম্পাস।
মূলত ভিসি ড. আমিনুল ও ড. জাফর ইকবালের মধ্যে দ্বন্দ্বের শুরুটা হয়েছে শাবি ও যবিপ্রবির সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষাকে ঘিরেই। একাডেমিক কাউন্সিলে সমন্বিত পদ্ধতি বাতিল, জাফর ইকবালের পদত্যাগে ভিসির নিরব থাকা, ২০১৪ সালের ভাষা দিবসে আলোচনায় জাফর ইকবালকে নিয়ে ভিসির ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য নিয়ে এ দ্বন্দ্ব ডালপালা গজাতে থাকে।
জানা গেছে, সম্প্রতি ইয়ুথ ভয়েসের একটি প্রোগামে দাওয়াত দিতে সিলেটের কয়েকজন ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিক জাফর ইকবালের কাছে গেলে তিনি সাংবাদিকদের জানান ওই প্রোগ্রামে ভিসি থাকলে তিনি এতে অংশ নেবেননা। পরে তাদের নিয়ে আলাদা আলাদাভাবে প্রোগ্রাম করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক শিক্ষার্থীল বলেন, তারা যখন ড. জাফর ইকবালের পদত্যাগ প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন করছিলেন তখন ভিসির অবস্থান রহস্যজনক ছিল। কেননা তিনি একাডেমিক কাউন্সিলে সমন্বিত পদ্ধতি বাতিল করে জাফর ড. ইকবাল স্যারকে পদত্যাগের জন্য পরোক্ষভাবে সুযোগ করে দিয়েছেন।
শাবিতে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও ভিসি ড. আমিনুল হক ভূইঁয়ার এমন ছবি খুব কমই দেখা যায়।
এছাড়া ২০১৪ সালে মিনি অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ভাষা দিবসের আলোচনা সভায় এক বক্তব্যে ভিসি বলেন, আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সকলকে এক করে সুষ্ঠুভাবে সামনে এগিয়ে নিতে চাই তখন কতিপয় আমাকে বাধাগ্রস্থ করছেন। এবং এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি একজন জাফর ইকবাল, নয় যতজন অধ্যাপক আছে ততজন জাফর ইকবাল চাই।
এর আগে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত বাংলা বিভাগের প্রভাষক সোহেল রানার একটি মন্তব্যের সমালোচনা করে কোষাধ্যক্ষ ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, আমরা জাফর ইকবালের নের্তৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে চাই। তখন ভিসি প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এরপরই ভিসি এই কথার প্রতি উত্তর হিসেবে উপরোক্ত মন্তব্য করেছেন বলে জানিয়েছেন আলোচনা সভায় অংশ নেয়া শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকরা।
এছাড়া সমন্বিত পদ্ধতি বাদ হয়ে যাওয়ার কারণে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী প্রফেসর ড. ইয়াসমীন হক একাডেমিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে অংশ নিবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এদিকে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করে দেয়ার পর থেকে ড. জাফর ইকবাল প্রচন্ড নাখোশ হন শাবির বর্তমান ভিসি প্রফেসর ড. আমিনুল হক ভূঁইয়ার প্রতি। এক পর্যায়ে তিনি ক্ষোভে দুঃখে দম্পতিসহ পদত্যাগও করেন। পরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভালোবাসার টান ও সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা বহাল করায় তিনি ওই অবস্থান থেকে সরে আসেন। পরে সিলেটবাসীর আন্দোলনের মুখে আবারো সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করায় দ্বন্দ্ব অনেকটা প্রকাশ্যে রূপ নেয়।
সর্বশেষ একটি জাতীয় দৈনিকে শাবি ভিসি সম্পর্কে ড. জাফর ইকবালের একটি মন্তব্যে বিষয়টি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।
এক সাক্ষাতকারে ড. জাফর ইকবাল বলেন, ‘অধ্যাপক হাবিবুর রহমান যখন উপাচার্য ছিলেন, তখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমিত বাজেটের মধ্যেও আমি তাঁর কাছে যখন যা চেয়েছি, তিনি আমাকে তা দিয়েছেন। তিনি আমাকে পুরোপুরি বিশ্বাস করতেন। এ ছাড়া সবার কাছ থেকেই সব সময় সাহায্য পেয়ে এসেছি। ফলে অনেক কিছু করতে পেরেছি। এখন যিনি উপাচার্য, তিনি সেভাবে সাহায্য করেন না। আমাদের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষাটা তিনি বন্ধ করে দিলেন। হেরে গেলাম…।’
এব্যপারে শাভি ভিসি প্রফেসর ড. আমিনুল হক ভূঁইয়া বলন, ‘আমার ব্যাপারে ড. জাফর ইকবাল কি বলেছেন, এব্যাপারে আমি কোন প্রতিক্রিয়া দেখাতে চাই না। এটা সম্পূর্ণ উনার ব্যাপার। তবে আমি এটুকু বলবো সমন্নিত ভর্তি পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত আমার একার নয়। একাডেমিক কাউন্সিলে সকলের মতামতের ভিত্তিতেই এটা বাতিল করা হয়েছে।’