‘খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা’
সুরমা টাইমস রিপোর্টঃ খাদ্য পণ্যে ভেজাল মিশ্রণকারী ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত থাকবে। পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণসহ ভেজাল পণ্য ও খাদ্য সামগ্রী থেকে জনগণকে রক্ষার লক্ষ্যে সরকার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
এসব কার্যক্রম গ্রহণের ফলে খাদ্য-পণ্যে ভেজাল মিশ্রণসহ ভোক্তা স্বার্থ বিরোধী কার্যক্রম ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে এবং ভোক্তারা এর সুফল পেতে শুরু করেছেন।
বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে তাঁর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের সদস্য এনামুল হকের এক প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ প্রণয়ন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ফরমালিনের আমদানি নিয়ন্ত্রণ, ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৩ প্রণয়নের কার্যক্রম গ্রহণ, জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ, নিয়মিতভাবে বাজার মনিটরিং ও ফরমালিনের আমদানি, বিক্রয় ও ব্যবহার তদারকির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খাদ্য পণ্যে ভেজাল নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে ২০১০ সাল থেকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯-এর অধীনে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। ওই আইনে ভোক্তা অধিকার বিরোধী অন্যান্য অপরাধসহ খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধে বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ড এবং অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইনে লাইসেন্স ব্যতিত ফরমালিনের উৎপাদন, আমদানি, পরিবহন, মজুদ, বিক্রয় ও ব্যবহারের জন্য শাস্তির পরিমাণ হচ্ছে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং সর্বনিম্ন ৭ বছর কারাদণ্ড। এছাড়া ২০ লাখ টাকা সর্বোচ্চ এবং ৫ লাখ টাকা সর্বনিম্ন অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের আওতায় খাদ্যে বিভিন্ন প্রকার ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ না মিশানোর জন্য বিভিন্ন প্রকার উদ্বুদ্ধকরণ ও জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া খাদ্য-পণ্যে ভেজাল প্রতিরোধে সরকার দেশব্যাপী নিয়মিত বাজার মনিটরিং অব্যাহত রয়েছে। ঢাকাসহ সারাদেশে প্রতিদিন বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। খাদ্য পণ্যে ফরমালিনের মিশ্রন প্রতিরোধের লক্ষ্যে ফরমালিন সনাক্তকরণ মিটার (ডিজিটাল ফরমালডিহাইড মিটার) সংগ্রহ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে ভেজাল পণ্য বা ওষুধ বিক্রয়, খাদ্য পণ্যে ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য মিশ্রণ এবং অবৈধ ও অস্বাস্থ্যকর প্রক্রিয়ায় খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্য বা ওষুধ বিক্রয় বা বিক্রয়ের প্রস্তাব করার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে ২০১০ সালের ৬ এপ্রিল থেকে ২০১৪ সালের ৩১ মে পর্যন্ত ৮ হাজার ৭৯৬টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে মোট ৮ কোটি ৮ লাখ ৯৮ হাজার ৩শ’ টাকা জরিমানা ও আদায় করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, শুধু খাদ্যপণ্যে ফরমালিন মিশ্রণের কারণে ১৮৬টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে ২৪ লাখ ৫১ হাজার ১শ’ টাকা জরিমানা করা হয়েছে এবং ফরমালিন মিশ্রিত ফল ও মাছ স্পটে ধ্বংস করা হয়েছে। মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রির কারণে ৪৬৩টি ফার্মেসিকে ৪২ লাখ ৬৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ ভোক্তা অধিকার আইন ২০০৯-এর আওতায় সারাদেশে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে আসছে। এ পর্যন্ত তারা এ আইনের আওতায় ১ হাজার ৭০২টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে ২ হাজার ৮৩৩টি প্রতিষ্ঠানকে ১ কোটি ২৩ লাখ ৭১ হাজার ৮৫০ টাকা জরিমানা করেছে এবং ১৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করেছে।
মৌসুমী ফলে রাসায়নিক দ্রব্য মিশ্রণ প্রতিরোধে দেশব্যাপী প্রতিদিন ১৪/১৫টি মনিটরিং টিমের মাধ্যমে বাজার তদারকিমূলক কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।