কুলাউড়ায় বিদ্রোহীতে বিপাকে দলীয় প্রার্থীরা

20371ডেস্ক রিপোর্টঃ ৩য় ধাপে ২৩ এপ্রিল অনুষ্ঠিতব্য ইউপি নির্বাচনে কুলাউড়ার কাদিপুর, ব্রাহ্মণবাজার কুলাউড়া সদর ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণে বিপাকে রয়েছেন দলীয় প্রার্থীরা। স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী ও জনপ্রিয় থাকায় বিদ্রোহী প্রার্থীরা দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। কাদিপুরে বিএনপির কোন প্রার্থী না থাকলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিদ্রোহী প্রার্থীরা থাকায় বড় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছে আ’লীগের জন্য।
ব্রাহ্মণবাজার ও কুলাউড়া সদরে এই দুই দলেই রয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী। এদিকে কুলাউড়া সদরের বর্তমান চেয়ারম্যান দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে কৌশলে নিজ স্ত্রীকেই প্রার্থী করেছেন। ভোটারদের সমর্থন আদায়ে কৌশলে চালিয়ে যাচ্ছেন প্রচারণা। কয়েক ঘণ্টা পরই নির্বাচন তাই শেষ মুহূর্তে নিজেদের পক্ষে জনসমর্থন আদায়ে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রাথীরা।
কুলাউড়া, কাদিপুর, ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নে সরেজমিনে ঘুরে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, দলীয় এবং বিদ্রোহী প্রার্থীদের অনেকেই স্থানীয় প্রভাবশালী ও জনপ্রিয় থাকায় এসব ইউনিয়নে ভোটযুদ্ধ বেশ জমে ওঠেছে। দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দল থাকায় ও প্রার্থী নির্ধারণে তৃণমূলের মতামত উপেক্ষিত হওয়ায় বিপাকে রয়েছেন অনেক দলীয় প্রার্থী। এই তিন ইউনিয়নে ১৮ জন চেয়ারম্যান পদে ৩৩জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। এদের মধ্যে আ’লীগের ৩, বিএনপির ৩, আ’লীগের বিদ্রাহী ২ ও বিএনপির বিদ্রাহী ৩জনসহ ১২জন স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন।
download (2)কাদিপুর ইউপি: চেয়ারম্যান পদে বিএনপির হাবিবুর রহমান ছালাম, আ’লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) মানিক মিয়া, জাসদ সমর্থিত (স্বতন্ত্র) আলমগীর আলম শাহান, স্বতন্ত্র জিয়াউল হক মুহিত, আ’লীগের সেলিম আহমদ, খেলাফত মজলিসের এমদাদ হোসেন ও ছালিক আহমদ নিলয় প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। এই ইউনিয়নে প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি স্থানীয়দের পছন্দ। স্থানীয় ভোটার জামাল আহমদ, রুজেল, সবুজ মিয়া, মঈন আহমদ, জয়নাল জানান, প্রার্থীর যোগ্যতা দেখে বুঝে শুনে ভোট দিব। ইউনিয়নের চুনঘর, উছাইল, আমতৈল, হোসেনপুর, মনসুর গ্রামের ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় আ’লীগের দলীয় প্রার্থী অনেকটাই কোনঠাসা। অপরদিকে দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকায় বিএনপির হাবিবুর রহমান ছালাম ভালো অবস্থানে রয়েছেন।
আওয়ামী লীগের স্থানীয় কয়েকজন নেতার সাথে আলাপকালে জানা যায়,এই ইউনিয়নে দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশী সময় ধরে আ’লীগের প্রভাবশালী প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়ে আসছিলেন। তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করে রাজনীতিতে হঠাৎ করে অপরিচিত মুখ প্রবাসী সেলিম আহমদকে ক্ষমতাসীন আ’লীগের প্রার্থী মনোনীত করায় এই ইউনিয়নের আসনটি হাতছাড়া হতে পারে বলে ধারণা তাদের। এদিকে শেষ মুহূর্তে স্বতন্ত্র প্রার্থী আলমগীর আলম শাহান ও আ’লীগের বিদ্রোহী মানিক মিয়া চলে এসেছেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
নির্বাচনে ত্রিমুখী লড়াই হলেও শেষতক আলমগীর আলম শাহান এবং মানিক মিয়া ভোটের হিসেব নিকেশ পাল্টে দিতে পারন এমনটাই অভিমত স্থানীয়দের।
কুলাউড়া সদর ইউপি- চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের লুৎফুর রহমান চৌধুরী, বিএনপির আবু সুফিয়ান, বিএনপির বিদ্রোহী জুবের আহমদ খান, স্বতন্ত্র (বর্তমান চেয়ারম্যানের স্ত্রী) নার্গিস আক্তার বুবলি ও আকমল হোসেন শুভ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। জানা যায়, বর্তমান চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান আ’লীগের দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে কৌশলে নিজের স্ত্রী নার্গিস আক্তার বুবলিকে নির্বাচনে প্রার্থী করেছেন।
download (3)চা বাগান অধ্যুষিত এই ইউনিয়নে এখানকার চা শ্রমিকদের রায় যার পক্ষে যাবে সে প্রার্থী ভোট যুদ্ধে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবেন। স্থানীয় ভোটাররা জানান, এখানে দুই দলেই বিদ্রোহীরা শক্তিশালী থাকায় আ’লীগ ও বিএনপির প্রার্থীরা চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছেন।
বর্তমান চেয়ারম্যান মো. শাহজাহানের নিজ্স্ব ভোট ব্যাংক তাঁর স্ত্রী নার্গিস আক্তার বুবলি ভালো অবস্থানে রয়েছেন। লুৎফুর রহমান চৌধুরী, নার্গিস আক্তার বুবলি বিএনপির আবু সুফিয়ান ও জুবের আহমদ খানের মধ্যেই হাড্ডা হাড্ডি লড়াই হবে। চর্তুমুখী লড়াই হওয়ায় খুবই অল্প ভোটের ব্যবধানে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন এমনটাই জানান স্থানীয়রা।
ব্রাহ্মণবাজার ইউপি: বিএনপির বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) বর্তমান চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন, আ’লীগের মমদুদ হোসেন, আ’লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) মুহিবুর রহমান, জাপা’র জয়নাল আবেদিন খান, বিএনপির বদরুল খান ও স্বতন্ত্র জাহাঙ্গীর হোসেন এলাইছ চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ইউনিয়নের শ্রীপুর, গোবিন্দপুর, পশ্চিম জালালাবাদ, গুড়াভুই, হিঙ্গাজিয়া এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মূসা খান, মোস্তাক আহমদ, হোসাইন আহমদ, কবির মিয়া, জাভেদ আলী, সামছুল ইসলাম, শাহজাহান, শ্রীকান্ত দাস, কানু মালাকারসহ বেশ কয়েকজন বলেন দক্ষ ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ প্রার্থীকেই ভোট দিব। দলীয় কোন্দল এবং আ’লীগ ও বিএনপিতে বিদ্রোহী থাকায় এখানকার দুই দলের প্রার্থীরা রয়েছেন বেকায়দায়। চা বাগান অধ্যুষিত এই ইউনিয়নে চা শ্রমিকদের ভোট জয় পরাজয়ে অনেকটাই ভূমিকা রাখবে। স্থানীয় বেশ কয়েকজন ভোটারদের ভাষ্যমতে বর্তমান চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন, মুহিবুর রহমান ও আ’লীগের মমদুদ হোসেনের মধ্যে মূল লড়াই হলেও অনেকটাই এগিয়ে রয়েছেন বিএনপি ও আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী।