সিলেটে ডাকাত আতঙ্কে ঘুম হারাম
ডেস্ক রিপোর্টঃ সিলেটে বেপরোয়া সশস্ত্র ডাকাত দল। শহরতলির চারপাশকেই টার্গেট করে একের পর এক ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। টার্গেটে রয়েছে প্রবাসী পরিবারগুলো। এ অবস্থায় শঙ্কিত সাধারণ মানুষ। গ্রামে গ্রামে দলবেঁধে টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ধরাও পড়ছে ডাকাত বাহিনীর সদস্যরা। গণপিটুনিতেও মারা যাচ্ছে কুখ্যাত ডাকাতরা। এর পরও ডাকাতির ঘটনা কমছে না। এ কারণে চলতি বর্ষা মৌসুমে ডাকাত নিয়ে ঘুম হারাম মানুষের। সম্প্রতি এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সিলেটে গত এক মাসে অনন্ত ২৫টির মতো ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। গ্রেপ্তারও হয়েছে অন্তত ২০ ডাকাত। সর্বশেষ সোমবার একসঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয় ৭ ডাকাতকে। এর মধ্যে ডাকাতির ঘটনার কয়েকটি গ্যাংকেও খুঁজে বের করে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এর পরও ডাকাতির ঘটনা না কমায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার অন্ত নেই। গত এক সপ্তাহের ডাকাতির ঘটনাকে ভিন্নভাবে দেখছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। শহরতলির জালালাবাদ, হাটখোলা, খাদিমপাড়া, খাদিমনগর ইউনিয়নের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এক সপ্তাহ ধরে কালবৈশাখী ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়েছে সিলেট। ঝড়ের কারণে এখনও শহরতলির সব স্থানে পুরোপুরি বিদ্যুৎব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়নি। অন্ধকারে রয়েছে অনেক এলাকা। ফলে অন্ধকারময় এলাকায় ডাকাতির ঘটনা বেড়েই চলেছে। সোমবার ভোররাতে নগরীর জালালাবাদ থানাধীন জাঙ্গাইল গ্রামে একদল ডাকাত প্রবেশ করে। এ সময় জনতা ধাওয়া করে জয়নাল নামের এক ডাকাতকে আটক করে গণপিটুনি দেয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে পুলিশ ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত জয়নাল সিলেট সদর উপজেলার হাটখোলা ইউনিয়নের আলতা মিয়ার ছেলে বলে জানিয়েছেন জালালাবাদ থানার ওসি আখতার হোসেন। তিনি জানান, ডাকাত জয়নাল ৮টি ডাকাতি মামলার আসামি ছিল। সপ্তাহখানেক শিবেরবাজারের একটি ডাকাতি মামলায় কারাগার থেকে সে জামিনে বেরিয়ে আসে। তার বাবা আলতা মিয়াও ডাকাতি মামলায় ৫-৬ বার কারাভোগ করে। এদিকে, সোমবার ভোররাতে শাহপরাণ থানাধীন খাদিমপাড়া ইউনিয়নের কল্লোগ্রামে তেরা মিয়ার বাড়িতে একদল ডাকাত হানা দেয়। ডাকাতি শেষে পালানোর সময় স্থানীয় জনতা ঘেরাও দিয়ে ৭ ডাকাতকে আটক করে গণধোলাই দেন। পরে পুলিশ এসে তাদের আটক করে থানায় নিয়ে যায়। আটক ডাকাতদের কাছ থেকে লুণ্ঠিত স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা ও মোবাইল ফোনসেটসহ মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শাহপরাণ থানার ওসি শাহজালাল মুন্সি। আটককৃত ডাকাতরা হলো হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার শালদিঘি গ্রামের বাবুল (২০), সুনাম মিয়া (২৮), একই জেলার সদর উপজেলার রামনগর গ্রামের আব্বাস (৩৫), দরিয়াপুর গ্রামের কুদরত আলী (৩৫), সুনামগঞ্জ জেলার সদর থানার গুদিগঞ্জ গ্রামের শাহ আলম (২১), সিলেটের শাহপরাণ থানার ইসলামপুর কলোনির খায়রুল (৩৭) ও কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার কালিপুর পশ্চিমকান্দার শাহ আলম (২০)। একই গ্রামে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার রুকনপুর গ্রামে ডাকাত দল প্রবেশ করলে টহল পুলিশ ধাওয়া করে। পুলিশের ধাওয়া খেয়ে ডাকাতরা একটি পাইপগান, কার্তুজ ও একটি কুড়াল ফেলে পালিয়ে যায় বলে জানিয়েছেন থানার ওসি নন্দন কান্তি ধর। এর আগে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার তেতলি এলাকায় জনতা রাতে পাহারা বসিয়ে প্রাইভেট কারসহ দুই ডাকাত সদস্যকে আটক করে। এ অবস্থায় সিলেট শহরতলির শিবেরবাজার, হাটখোলা, খাদিম এলাকায় রাত জেগে পাহারা শুরু করেছেন স্থানীয়রা। হাতে লাঠি নিয়ে দলে দলে লোকজন ডাকাত প্রতিরোধে পাহারা দিচ্ছেন। একই সঙ্গে পুলিশও রয়েছে টহলে। এর পরও গতকাল ভোররাতে নগরীর আখালিয়া নিহারীপাড়ায় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। নিহারীপাড়া ডি-ব্লকের ৪১নং বাসায় এ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় ডাকাত দল ১১ ভরি স্বর্ণ, নগদ ৪৯ হাজার টাকা, কয়েকটি মোবাইলসহ দামি মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। বাসার মালিক হাজি লিয়াকত আলী গতকাল জানিয়েছেন, মঙ্গলবার ভোররাত সাড়ে ৩টায় ঘরের পেছনের দুই গ্রিল কেটে ৫ ডাকাত তাদের ঘরে প্রবেশ করে। এ সময় পরিবারের সব সদস্যের মুখ বেঁধে একটি কক্ষে আটকে রাখে এরা। এ ছাড়া লিয়াকত আলীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ১১ ভরি স্বর্ণ, নগদ ৪৯ হাজার টাকা, মোবাইলসহ দামি মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। কোতোয়ালি থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। শিবেরবাজারে জয়নাল ডাকাতের মৃত্যুর ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরে। এই আনন্দকে উপভোগ করতে এলাকাবাসী আনন্দ মিছিল ও সমাবেশ করে এবং মিষ্টি বিতরণ করেন। (মানবজমিন)