জান্নাতে যাবে না খোঁটাদাতা
ডেস্ক রিপোর্টঃ বুখারি ও মুসলিম শরিফে হজরত আবু হোরায়রা (রা:) কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে রাসূল সা: বলেছেন, যখনই আল্লাহর বান্দারা ভোরে ঘুম থেকে ওঠে, তখন আকাশ থেকে দুইজন ফেরশতা দুনিয়ার জমিনে অবতীর্ণ হন। ফেরশতাদের একজন বলেন, ‘হে আল্লাহ! তুমি দাতাকে প্রতিদান দাও’ এবং অপরজন বলেন, ‘হে আল্লাহ! তুমি বখিলের সর্বনাশ করো।’
দান সদকা একটি উত্তম কাজ। দানের হাত সব সময় উত্তম। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা দানকারীকে পছন্দ করেন। দানকারীর পিতা-মাতাকে কিয়ামতের দিন আল্লাহ নূরের টুপি পরিয়ে হাশরের মাঠে উঠাবেন। এ ছাড়া বিপদ-আপদের সময় অসহায় অভাবগ্রস্ত ব্যক্তিকে দান করলে আল্লাহ দানকারী ব্যক্তির বিপদ-আপদ দূর করে দেন। দান বিপদ-আপদ দূর হওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ উসিলা হিসেবে ভূমিকা পালন করে। দান শুধু সওয়াব বৃদ্ধি করে না। দান ধনী ও গরিবের সম্পর্ক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করে। দানের মাধ্যমে কিছুটা হলেও সামাজিক বৈষম্য দূর হয়। যার মধ্যে মনুষ্যত্ববোধ ও মমত্ববোধ আছে’ যিনি অপরের প্রতি সহানূভূতিশীল এবং আল্লাহর সৃষ্টিকে ভালোবাসেন শুধু তিনিই দানকারী হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন।
মানুষ মাত্রই সামাজিক অবস্থান ও মর্যাদা আছে। অতিরিক্ত গর্ববোধ আত্মমর্যাদা মানুষকে অহঙ্কারীর পর্যায়ভুক্ত করে ফেলে। তখন কেউ কেউ তার পেছনের কর্ম নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করে ফেলেন। কেউ হয়তো একটি মসজিদ নির্মাণের জন্য জায়গা দান করেছেন। গরিব কোনো ছাত্রছাত্রীর পড়াশোনার জন্য কোনো একসময় বই কিনে দিয়েছেন। অভাবী ব্যক্তির মেয়ের বিয়েতে আর্থিক সাহায্য করেছেন। দেখা যায়, একটু ঝগড়া বিবাদ হলে কিংবা মন কষাকষি হলে পেছনের উপকারের সূত্র টেনে খোঁটা দেয়া হয়। আল্লাহ কালামুল্লাহ শরিফে ঘোষণা করেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা (উপকারের) খোঁটা দিয়ে এবং কষ্ট দিয়ে তোমাদের দান সদকা বরবাদ করে দিয়ো না, ঠিক সে (হতভাগ্য) ব্যক্তির মতো, যে শুধু লোক দেখানোর উদ্দেশ্যেই দান করে, সে আল্লাহ পাক ও পরকালের ওপর বিশ্বাস করে না; তার (দানের) উদাহরণ হচ্ছে, যেন একটি মসৃণ শিলা খণ্ডের ওপর কিছু মাটির আস্তরণ ছিল, সেখানে মুষলধারে বৃষ্টিপাত হলো, তারপর পাথর শক্ত হয়েই পড়ে থাকলো। (দান খয়রাত করেও) তারা (মূলত) এ অর্জনের ওপর থেকে কিছুই করতে পারল না।’ (সূরা বাকারা: ২৬৪)
খোঁটা দানের মাহাত্ম্যকে বিনষ্ট করে। খোঁটা দানের সুফল থেকে বঞ্চিত করে। আমরা অজ্ঞতাবশত দান করে পরে খোঁটা দিয়ে থাকি। হজরত রাসূল সা: বলেছেন, ‘তোমরা কখনো দান করে দানের প্রতিদান চাইবে না। কখনো দানের পরিমাণ গণনা করবে না। কারণ দানের প্রতিদান নিয়তের ওপর নির্ভর করে। আল্লাহ অদৃশ্যের মালিক। আল্লাহ তায়ালা উত্তম দাতা। কোনো ব্যক্তি কী জন্য দান করেছেন আল্লাহ সে সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত রয়েছেন। যিনি দান করেন আল্লাহ তার সম্পদ বহু গুণ বৃদ্ধি করে দেন। দান করে কিংবা সহযোগিতা করে পরে খোঁটা দিলে দানের ফজিলত পাওয়া যায় না। হাশরের মাঠে একধরনের দানকারী দানের ফজিলত তার আমলনামায় না দেখতে পেয়ে আশ্চর্যন্বিত হয়ে বলবেন, ‘হে আল্লাহ! আমি দুনিয়াতে অনেক দান করেছি। আজ ফলাফল দেখতে পাচ্ছি না।’ প্রত্যুত্তরে আল্লাহ বলবেন, ‘দান তুমি ঠিকই করেছ। কিন্তু দানের পর খোঁটা দেয়ায় তুমি দানশীল হিসেবে অন্তর্ভুক্ত না হয়ে আজ খোঁটা দানকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়েছো।’ সুতারাং আল্লাহ বান্দার দানের পরিমাণ দেখেন না। তিনি মানুষের অন্তরের তাকওয়া দেখেন। সূরা হাজ্জের ৩৭ নং আয়াতে এরশাদ করা হয়েছে, ‘আল্লাহর কাছে পৌঁছে না ওগুলোর গোশত এবং রক্ত (কোরবানির গোশত) বরং তাঁর কাছে পৌঁছে বান্দার (অন্তরের) তাকওয়া অর্থাৎ আল্লাহর ভয়।’