সিলেটে ২৭ ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ২৫টিই ঝুঁকিপূর্ণ!
ডেস্ক রিপোর্টঃ আগামী ৩০ ডিসেম্বর দেশব্যাপী অন্যান্য পৌরসভার সাথে সিলেটের ৩টি পৌরসভায়ও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ তিন পৌরসভার ২৭টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হবে। তন্মধ্যে ২৫টি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ!
সিলেটের গোলাপগঞ্জ, জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট পৌরসভায় প্রত্যেকটিতে ৯টি করে কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হবে। তন্মধ্যে কানাইঘাটে ২টি ভোটকেন্দ্র বাদে তিন পৌরসভার বাকি সব কয়টি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সংশ্লিষ্টরা গণমাধ্যমকে-কে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
গোলাপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্তকর্তা (ওসি) একেএম ফজলুল হক শিবলী জানান, গোলাপগঞ্জ পৌরসভায় ৯টি ভোট কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। অতীতের রেকর্ড বিবেচনা করে সব কয়টি কেন্দ্রকেই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
জকিগঞ্জ খানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুর রহমান জানান, এ পৌরসভার ৯টি কেন্দ্রের মধ্যে সব কয়টি কেন্দ্রকেই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে কানাইঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবীর জানান, কানাইঘাট পৌরসভার ৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ৭টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
সবমিলিয়ে সিলেটের তিন পৌরসভার ২৭টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ২৫টিই ঝুঁকিপূর্ণ। তবে ঝুঁকিপূর্ণ এসব কেন্দ্রগুলোতে যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থায় থাকবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে পৌর ভোটের দিন পাঁচ কারণে গোলযোগের শঙ্কার কথা জানিয়ে তা নিরসনে দুই দফা সুপারিশসহ গোয়েন্দা প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়; এবার মোট ভোটকেন্দ্রের এক তৃতীয়াংশই চিহ্নিত হয়েছে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে।
কমিশনের একজন উপ সচিব গণমাধ্যমকে জানান, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের এই প্রতিবেদন তারা বুধবার হাতে পেয়েছেন। এখন সংশ্লিষ্ট আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর কাছে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের তালিকা পাঠানো হবে, যাতে ভোটে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভোটে থাকা ২৩৩ পৌরসভার মোট ৩৪০৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ১ হাজার ১৮৪টিই ঝুঁকিপূর্ণ, যা মোট ভোটকেন্দ্রের ৩৪ দশমিক ৮০ শতাংশ।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কেন্দ্র খুলনায়। এ বিভাগের ৪৭১টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৯৫টিই ঝুঁকিপূর্ণ।
এছাড়া রংপুর বিভাগে ৩০৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ১১৮টি, বরিশাল বিভাগে ১৬৭টি কেন্দ্রের মধ্যে ৬৩টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ৪৮০টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৬৯টি, ঢাকা বিভাগে ৯৯১টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩৪৮টি, রাজশাহী বিভাগে ৮০১টি কেন্দ্রের মধ্যে ২৪৬টি এবং সিলেট বিভাগে ১৮৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ৪৫টি ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ মঙ্গলবার বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও তাদের গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা বাড়ানো হবে। জেলা ও পুলিশ প্রশাসন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয় করে এ ব্যবস্থা নেবে।
গোলযোগের শঙ্কা
ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে গোলযোগের পাঁচটি সম্ভাব্য কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে। তাতে বলা হয়েছে- বিএনপি, জামায়াত ও শিবির নেতাকর্মীরা তাদের প্রার্থীদের জয়ী করতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে ‘ভোটকেন্দ্রে যাওয়া থেকে বিরত রাখার’ চেষ্টা করতে পারে, ‘নাশকতা বা গোলযোগ সৃষ্টির’ চেষ্টা চালাতে পারে; এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও একচেটিয়া ভোট পাওয়ার চেষ্টায় ‘বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সমর্থিত প্রার্থীরা’ কিছু কেন্দ্রে গোলযোগ সৃষ্টি করতে পারে; নির্বাচনকে ‘বিতর্কিত কিংবা রাজনৈতিক পরিবেশ অস্থিতিশীল করতে’ বিএনপি-জামায়াত ‘গোলযোগ’ সৃষ্টি করতে পারে।
এছাড়া ভোটের পর পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকরা ‘বিক্ষুব্ধ হয়ে বা পূর্ব শত্রুতার জের ধরে কিংবা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে’ এলাকায় গোলযোগ সৃষ্টি করতে পারে এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল, একাধিক প্রার্থীর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টায় গোলযোগ সৃষ্টি হতে পারে বলে প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারাদেশে বিভিন্ন কেন্দ্রে দলীয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অনেক পৌরসভায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক প্রার্থী (বিদ্রোহী) থাকায় দলীয় অর্ন্তকোন্দলের কারণে বিভিন্ন কেন্দ্রে সহিংসতা হতে পারে।
এছাড়া বিভিন্ন ধর্মীয় উগ্রপন্থি গোষ্ঠী দেশকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে বিভিন্ন কেন্দ্রে গোলযোগ করতে পারে বলেও গোয়েন্দারা মনে করছেন।