বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)র মাধবপুরে কয়েকটি গ্রাম পরিদর্শন
আজ ২০ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখ বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)-র পক্ষ থেকে বেলা’র নির্বাহী প্রধান সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও বাপা’র কেন্দ্রীয় যুগ্মসম্পাদক জনাব শরীফ জামিল এর নেতৃত্বে সকাল ১০.০০ টায় হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার ছাতিয়াইন ইউনিয়নের একতিয়ারপুর গ্রামসহ অন্যান্য কয়েকটি গ্রাম পরিদর্শন করেন ও এক সভায় মিলিত হন।
পরিদশনকালে একতিয়ারপুর খালের দূষণ, গবাদীপশু ও হাস-মুরগী মরে পড়ে থাকতে দেখতে পান। ক্ষতিগ্রস্থ গ্রামবাসী পরিদর্শন প্রতিনিধিদলকে জানান, মার লিমিটেড কারখানা স্থাপিত হওয়ার পর গত তিন বছর যাবৎ এলাকায় ব্যাপক মানবিক ও পরিবেশ বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। একতিয়ারপুর খালের মাধ্যমে কারখানার দুষিত বর্জ্য ছড়িয়ে পড়ার ফলে কৃষি কাজ, মৎস আহরণসহ বিভিন্ন পরিবেশগত বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১২ শতাধিক হাস-মুরগী ও দুই শতাধিক গবাদিপশু মারা গেছে এবং খালসহ আশপাশের হাওড়গুলো মৎসশুন্য হয়ে পড়েছে। এছাড়াও চর্মরোগ, শ^াসকষ্টসহ বিভিন্ন জটিল স্বাস্থ্যগত সমস্যায় গ্রামবাসী আক্রান্ত হচ্ছেন।
পরিদর্শন শেষে একতিয়ারপুর বাজারে একসভা অনুষ্ঠিত হয়, এতে হাজার হাজার গ্রামবাসী অংশ গ্রহন করেন। বাপা’ হবিগঞ্জ শাখার সভাপতি অধ্যাপক ইকরামুল ওয়াদুদ এর সভাপতিত্বে এবং হবিগঞ্জ শাখা’র সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল এর সঞ্চালনায় সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও জনাব শরীফ জামিল বক্তব্য রাখেন। এসময় আরো বক্তব্য রাখেন বাপা হবিগঞ্জ শাখার সহ-সভাপতি তাহমিনা বেগম গিনি, বাপা হবিগঞ্জ শাখার কোষাধ্যক্ষ ও হবিগঞ্জ প্রেসকাবের সভাপতি জনাব সোয়েব চৌধুরী, বাপা সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম কিম, ছাতিয়াইন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জনাব খায়রুল হোসেন মনু ও শহীদুল ইসলাম বাবু প্রমুখ।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, মার লিমিটেড কারখানা কর্তৃক দূষিত বর্জ্য খালে ছড়িয়ে দেওয়ায় গত তিন বছর যাবৎ অসহনীয় দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন স্থানীয় ৩০/৪০টি গ্রামের বাসিন্দারা, যা মেনে নেয়া যায় না। তিনি বলেন, যতক্ষন পর্যন্ত উৎসে বর্জ্য পরিশোধনাগার শতভাগ নিশ্চিত না হবে এবং বিশেষজ্ঞ, এলাকার জনপ্রতিনিধি ও পরিবেশবাদীদের মতামত ছাড়া কারখানা চালুর ব্যাপারে জনগনকে সজাগ থাকতে হবে। এখন পর্যন্ত সরকারী যতগুলো রির্পোট রয়েছে তা জনগনের পক্ষে, তাই ভয়কে উপেক্ষা করে গ্রামবাসীকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানান। তিনি গ্রামবাসীর নামে দায়ের করা হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবী জানান।
জনাব শরীফ জামিল বলেন, মার লিমিটেড এর বিষয়ে বাপা’র বিভিন্ন সভা হয়েছে, বাপা’র কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এই এলাকা পরিদর্শন করেছেন। প্রশাসনের কয়েকটি সভায় উৎসে পরিশোধনাগার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত মার লিমিটেড বন্ধে সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়েছে। কিন্তু এসকল সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বিগত তিনবছর যাবৎ কোন পদক্ষেপ না নেয়ার কারণে কারখানার দূষণে আজ ব্যাপক পরিবেশ বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি ঘটনার পর আমরা বাপা’র পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এর সাথে সভা ও এলাকা পরিদর্শনসহ কারখানা কর্তৃপক্ষের সাথেও আলোচনা করেছি। এসকল আলোচনায় বর্জ্য পরিশোধনাগার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কারখানা বন্ধ এবং গ্রামবাসীর নামে দায়ের করা মিথা মামলা প্রত্যাহারের প্রতিশ্রুতি দিলেও এখন পর্যন্ত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা হয়নি। আমরা চাই, বর্জ্য পরিশোধনাগার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কারখানা বন্ধ রাখতে হবে এবং গ্রামবাসীর নামে দায়ের করা মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে; খালটি সংস্কার করে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দিতে হবে এবং দূষণকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনসহ দীর্ঘদিন চলমান দূষণে ক্ষতিগ্রস্থদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। পাশাপাশি হবিগঞ্জে চলমান অপরিকল্পিত শিল্পায়ন যাতে ভবিষ্যতে পরিবেশ বিপর্যয় সৃষ্টি না হয় তা এখনই গুরুত্বের সাথে নজর রাখতে হবে ও পদক্ষেপ নিতে হবে।