নবীগঞ্জ পৌর নির্বাচনের ৫ মেয়র প্রার্থীর হলফনামা
শিক্ষায় এগিয়ে আ.লীগ- সম্পদ ও মামলায় এগিয়ে বিএনপি!
তোফাজ্জল- এম.এ, ছাবির- সাক্ষর জ্ঞান, জাহাঙ্গীর- বি.এস.সি, মাহমুদ-এইচ.এস.সি ও জুবায়ের- স্বশিক্ষত
উত্তম কুমার পাল হিমেল, নবীগঞ্জ থেকেঃ নবীগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়ন চুড়ান্ত যাচাই-বাচাই শেষে মেয়র পদে এবার ৫ জন, সাধারন কাউন্সিলর পদে ৪১ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলফনামায় আয়-ব্যয়, সম্পদের বিবরণ, শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ বিস্তারিত তথ্য নির্বাচন কমিশনে দাখিল করেছেন। এর মধ্যে আওয়ামীলীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি থেকে মনোনিত ৩ দলের ৩ জন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন ২ জন। প্রত্যেক প্রার্থীই নোটারি পাবলিক করে তাদের সকল তথ্য দিয়ে হলফনামা দাখিল করেছেন নির্বাচন কমিশনে। আর এসব প্রার্থীর হলফনামা পর্যালোচনা করে দেখা যায় বেশীর ভাগ প্রার্থীই স্বাক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন। স্বাক্ষর জ্ঞান সম্পন্ন প্রার্থীদের নিয়ে সাধারন ভোটারদের মাঝে চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা। এমন স্বল্প শিক্ষিত প্রার্থীদের ভোট প্রদানে ভোটারদের মধ্যে শুরু হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
প্রার্থীদের হলফনামা সূত্রে জানাযায়, আওয়ামীলীগের মনোনিত ৩ বারের নির্বাচিত মেয়র প্রার্থী অধ্যাপক তোফাজ্জল ইসলাম চৌধুরীর শিক্ষাগত যোগ্যতা এম.এ পাস। আর বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আলহাজ¦ ছাবির আহমদ চৌধুরী স্বাক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন। জাতীয় পার্টির মাহমুদ চৌধুরী এইচ.এস.সি পাস। স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রবাসী জাহাঙ্গীর রানা বি.এস.সি পাস ও স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রবাসী জুবায়ের চৌধুরী স্বশিক্ষিত। শিক্ষায় আওয়ামীলীগ প্রার্থীর চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও অর্থ, সম্পদ ও মামলায় এগিয়ে আছেন আছেন বিএনপির প্রার্থী।
আওয়ামীলীগ প্রার্থী তোফাজ্জল ইসলাম চৌধুরী ৩ বারের নির্বাচিত বর্তমান মেয়র ও পৌর আওয়ামীলীগ কমিটির সদস্য। অপর প্রার্থী ছাবির আহমদ চৌধুরী ৩ বারের প্যানেল মেয়র ও পৌর বিএনপির সভাপতি।
আওয়ামীলীগের প্রার্থী তোফাজ্জল ইসলাম হলফনামায় নিজেকে কলেজ শিক্ষক উল্লেখ করেছেন। তিনি নবীগঞ্জ ডিগ্রী কলেজের সহকারী অধ্যাপক। তবে তিনি কোন মামলার আসামী নন। তোফাজ্জল ইসলামের কৃষিখাত থেকে বার্ষিক আয় ১০ হাজার টাকা, পেশা (শিক্ষকতা) থেকে বার্ষিক আয় ২ লক্ষ ৭৫ হাজার ৬ শত ৫০ টাকা, নবীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র হিসেবে বার্ষিক সম্মানী ভাতা পান বছরে ২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা। এছাড়াও নগদ আছে ৫০ হাজার টাকা, ব্যাংকে আছে ১০ হাজার টাকা। স্ত্রীর নামে আছে ২০ ভরি স্বর্ণ। ঘরে ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী আছে- রঙ্গিন টিভি, ফ্রিজ, মাইক্র অভেন, ফ্যান ইত্যাদি। এছাড়া আসবাব পত্রের মধ্যে আছে সেট সোফা, ৩টি খাট, ৩টি ষ্টীলের আলমিরা, ২টি সোকেস, ১ সেট ড্রাইনিং টেবিল ইত্যাদি। উনার নিজের নামে কোন জমি নেই। স্ত্রীর নামে আছে কৃষি জমি ১ একর, যৌথ মালিকানাধীন আছে ১০ একর ও অকৃষি আছে ১.৫০ একর। উনার টিন শেডের ঘর আছে ২টি। মেয়র তোফাজ্জল ইসলাম চৌধুরী পৌর এলাকার চরগাঁও গ্রামের আলহাজ¦ মরহুম তাজুল ইসলাম চৌধুরীর ও আলহাজ¦ সালমা চৌধুরীর ছেলে।
অপর দিকে বিএনপির মনোনিত প্রার্থী আলহাজ¦ ছাবির আহমদ চৌধুরী হলফনামায় নিজেকে ব্যবসায়ী বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি আদালতের ৪ টি মামলার আসামী, ৩ টি মামলা বিচারাধীন একটি অব্যাহতি প্রাপ্ত। পৌর এলাকার উনার ২টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। শহরের হাই স্কুল রোডে মেসার্স এম.কে চৌধুরী ষ্টোর ও হবিগঞ্জ রোডে মেসার্স চৌধুরী আটো রাইছমিল। এ দুই ব্যাবসা থেকে ছাবির আহমেদের প্রতি বছরের আয় ৪ লক্ষ ৬৬ হাজার ১ শত ৯৬ টাকা। কৃষি খাতে আয় ৩০ হাজার টাকা। পৌর কাউন্সিলর হিসেবে বার্ষিক সম্মানী ভাতা পান বছরে ৬০ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদ:- হলফনামায় উল্লেখ করেছেন ছাবির আহমদের নগদ টাকা আছে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। স্ত্রীর আছে ৫০ হাজার টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিজের নামে জমা আছে ৪৭ হাজার ৬ শত ১৭ টাকা ও স্ত্রীর নামে আছে ১ লক্ষ ৯২ হাজার ২৩ টাকা। নিজের নামে স্বর্ণ আছে ১ ভরি ও স্ত্রীর নামে আছে ১৫ ভরি এবং নির্ভরশীলের নামে আছে ৩ ভরি। নিজের নামে কোন ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী না থাকলেও স্ত্রীর নামে আছে- ১টি টিভি, ১টি ফ্রিজ, ২টি মোবাইল ফোন। আসবাবপত্র নিজের নামে আছে ১টি খাট, ১ সেট সোফা , ১টি ডাইনিং টেবিল, ৬ টি চেয়ার। স্ত্রীর নামে আছে ১ টি খাট, ১টি ড্রেসিং টেবিল, ১টি আলমিরা (উপটৌকন)।
স্থাবর সম্পদ:- কৃষি জমি নিজের নামে আছে ৬ শত ১৪ শতক, স্ত্রীর নামে ৭৭.৫০ শতক। অকৃষি নিজের নামে ১ হাজার ২ শত ৫০ শতক, স্ত্রীর নামে ১ শত ২৭ শতক। কৃষি ব্যাক নবীগঞ্জ শাখায় ছাবির আহমদের একক ঋনের পরিমান ৩০ লক্ষ ৮ হাজার ৯ শত ২৫ টাকা। আলহাজ¦ ছাবির আহমদ চৌধুরী নবীগঞ্জ পৌর এলাকার চরগাঁও গ্রামের মোঃ কবির মিয়া চৌধুরী ও মোছাঃ এলাছি কবির চৌধুরীর ছেলে।
অপর দিকে, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন লন্ডন প্রবাসী জাহাঙ্গীর আলম রানা। উনার শিক্ষাগত যোগ্যতা বি.এস.সি। নেই কোন মামলার আসামী। তিনি হলফনামায় ব্যবসা/পেশা উল্লেখ করেছেন কৃষি।
কৃষি খাতে জাহাঙ্গীর রানার প্রতি বছর আয় দেড় লক্ষ টাকা। নগদ ২লক্ষ টাকা আছে। নিজের একটি মোটরসাইকেল আছে। স্ত্রীর নামে আছে ৬ ভরি স্বর্ণ। স্থাবর সম্পদ- যৌথ মালিকানাধীণ আছে ৭ একর জমি।
স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহাঙ্গীর রানা পৌর এলাকার রাজাবাদ গ্রামের মৃত আব্দুল হেকিম ও ফরিদা খাতুনের ছেলে।
আর জাতীয় পার্টির মনোনিত প্রার্থী মামমুদ চৌধুরী। তিনি উপজেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব। শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচ.এস.সি। কোন মামলায় আসামী নেই। পেশা উল্লেখ করেছেন কৃষি। কৃষি থেকে প্রতি বছর আয় হয় ১ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা। নগদ আছে ১ লক্ষ টাকা। স্ত্রীর আছে ৫ভরি স্বর্ণ।
মামমুদ চৌধুরী মুল বাড়ী ৯ নং বাউসা ইউনিয়নে হলেও বর্তমানে তিনি পৌর এলাকার শান্তিপাড়া গ্রামের মৃত সরুজ মিয়া চৌধুরী ও মৃত বেগম খায়রুনেছার ছেলে।
এদিকে, অপর স্বতন্ত্র পার্থী লন্ডন প্রাবসী আব্দুল জুবায়ের চৌধুরী হলফনামায় তিনি স্বশিক্ষিত উল্লেখ করেছেন। কোন মামলায় আসামী নেই। তিনি লন্ডন প্রবাসী । নগদ কোন টাকা পয়সা নেই তবে ব্যাংকে আছে ২ লক্ষ ১ হাজার টাকা। ঢাকা মেট্রো চ- ১৫-১২৭৬ নাম্বারের নোহা গাড়ীর মালিক তিনি। ঘরে আছে একটি টিভি ২ টি মোবাইল। তিনি শান্তি পাড়া এলাকার মৃত আব্দুল রশিদের ছেলে।