সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় দিতি, ‘শেষ সময়ে সবার দোয়া চাইলেন মেয়ে লামিয়া’
ডেস্ক রিপোর্টঃ অভিনেত্রী পারভীন সুলতানা দিতির শারীরিক অবস্থা ভালো না। অনেকদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন । অবশেষে হাসপাতালে ভর্তি হলেন আর সেখানেই জানা গেল ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত হয়েছেন অভিনেত্রী দিতি।চিকিৎসার জন্য বেশ কিছুদিন আগে থেকেই ভারতের চেন্নাইয়ে গেছেন তিনি। অবশ্য নিজের অসুস্থতা সম্পর্কে কিছু বলতে রাজি হননি দিতি। সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে বিস্তারিত জানাতে চেয়েছিলেন এই অভিনেত্রী ।
কিন্তু এ দফায় আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন দিতি। কেমোথেরাপি-পরবর্তী শারীরিক সমস্যা বেড়ে গেছে। ‘দুই জীবন’ তারকার মেয়ে লামিয়া বলেন, ‘কেমোথেরাপি নেওয়ার পর নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা হয়। আমাদের এ ব্যাপারে চিকিৎসকেরা কিছুটা ধারণা দিয়েছেন। তবে মায়ের সমস্যা একটু বেশি মনে হচ্ছে।
বর্তমানে চিত্রনায়িকা দিতির শারীরিক অবস্থা ক্রমশ সঙ্কটাপন্ন অবস্থার দিকেই ঝুকছে । আইসিইউতে নেয়া হয়েছে তাকে । গত তিনদিন ধরেই আইসিইউতে আছেন বলে জানিয়েছেন তার মেয়ে লামিয়া চৌধুরী। ফেসবুকে লামিয়া জানিয়েছেন, তৃতীয় বারের মতো তার শরীরের সার্জারী করা দরকার। কিন্তু ডাক্তাররা বলেছেন তার জন্য কিছু সময় নিতে হবে। মারাত্মক অবস্থা থেকে তাকে ফিরে আনতে আমরা সবাই চেষ্টা করছি।’
তিনি আরো জানিয়েছেন, ‘ঠিক এই মুহুর্তে আমি বলতে পারছিনা পরের মিনিটে তার শরীরিক অবস্থাটা কেমন হবে। সময় তো গতিশীল। সবাইকে তার জন্য দোয়া করার অনুরোধ করছি। এই সময়টায় দোয়া খুব জরুরী।’
উল্লেখ্য, মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অব অর্থোপেডিকস অ্যান্ড ট্রমাটোলজি (এমআইওটি) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন তিনি। গত ২৯ জুলাই প্রথমবারের মতো তার মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার হয়েছিল। কয়েকদিন সুস্থ থাকলে গত সপ্তাহে ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। সেখানে শারীরিক অবস্থার কোন উন্নতি না হওয়ায় নভেম্বরে মাদ্রাজ নেয়া হয়।
ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ভারতের চেন্নাইয়ে এমআইওটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দিতি এর আগে ভক্তদের উদ্দেশে একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন। সে চিঠিটি তার মেয়ে লামিয়া চৌধুরী ফেসবুকে প্রকাশ করেছেন। দিতির সেই খোলা চিঠিটি পাঠকের উদ্দেশ্যে উপস্থাপিত হলো
প্রিয় বন্ধু, সহকর্মী ও ভক্তরা, আমি জানি আমাকে না দেখে তোমরা বেশিদিন থাকতে পারো না। এর জন্য তাড়াতাড়ি ভাল হয়ে এসে একটা কাচ্চি বিরিয়ানির পার্টি দিব। এখানে আমি ভাল আছি, মনে হচ্ছে পাঁচ তারকা হোটেলে ছুটি কাটাতে এসেছি। দিনে হাজারটা ইনজেকশান দেয়, খালি এইটাই বিরক্ত লাগে। ডাক্তার বলছে আমার ব্রেইনে ছোট্ট একটা টিউমার হইছে, তেমন দুঃশ্চিন্তার কিছু নেই ইনশাল্লাহ। সব কিছু শেষ, খালি ওইটা (টিউমার) মাথা থেকে ফেলতে পারলেই হয়। পরশুদিন (বুধবার) অস্ত্রোপচারের তারিখ দিয়েছে।
আবার তোমাদের সাথে খুব শিগগিরই মজা করতে চলে আসবো ইনশাল্লাহ। ততদিন পর্যন্ত ধৈর্য্য ধর, আর দোয়া কর। আমার উপর তোমাদের এত দোয়া, কিছু হবে না ইনশাল্লাহ। খালি দোয়া কর। তোমারা ভাল থাক, আমিও ভাল থাকার জন্য দোয়া কর। আল্লাহ আমাকে এত ভাল মানুষদের সঙ্গে মিলামেশা করার তৌফিক দিয়েছে, যারা আমাকে এত ভালোবাসে। অসংখ্য ধন্যবাদ। আল্লাহকেও ধন্যবাদ সকল সহায়তার জন্য।
সেই দিতি, এই দিতি
গত ২৯ জুলাই ভারতের চেন্নাইয়ের মাদ্রাজ ইন্সটিটিউট অব অর্থোপেডিক্স অ্যান্ড ট্রমালোজিতে(এমআইওটি) উনার মস্তিষ্কে সফল অস্ত্রোপাচার শেষে শুরু হয় দেশে আসার দিন গুনার পালা। আর মায়ের স্বাস্থের আপডেট সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে নিয়মিত জানাচ্ছেন মেয়ে লামিয়া চৌধুরী। লামিয়ার মা পারভিন সুলতানা দিতি আশির দশকের শেষের দিক আর নব্বইয়ের শুরুতে ঢাকাইয়া সিনেমার শুধু পরিচিত মুখই ছিলেন না; বলা চলে ঢালিউড সে সময় শাবানা ও দিতির উপর নির্ভর ছিল।
আর শাবানা মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রি ছেড়ে গেলে পুরো নির্ভর হয়ে পড়ে দিতির উপর। তবে সে যাত্রায় খৈ হারিয়ে ফেলেন দিতি। একসময় দেশ ছেড়ে পাড়ি জামান সুদূরে। পরবর্তীতে ১৯৯৫ সালে দেশে ফিরেনও বটে। তবে, বেশ দেরি হয়ে গেছে। কেননা, এর কিছুদিন পরই ঢাকার সিনেমার মান অবনমন শুরু হতে যাচ্ছিল। আর সে সিনেমার সাথে নিজেকে মানানোর চেষ্টা না করে আস্তে আস্তে সরে সরে যেতে থাকলেন দিতি। তবে, এ নিয়ে অভিযোগও আছে দিতির বিরুদ্ধে। বিদেশফেরত দিতিকে নিয়ে কাজ করতে ভয় পেত পরিচালকরা। আবার কখন বিদেশে চলে যায়। অবশ্য দিতির ভাষ্য ছিল, তার মধ্যে কাজের সততা ছিল। দেশে ফেরে একসঙ্গে সাইন করা ১২টি সিনেমার কাজই শেষ করেছিলেন দিতি।
পরিচালকদের অভিযোগের জবাব দিতি দিলেও তার অভিনয় করা প্রথম ছবি যে এখনও মুক্তি পায়নি তা নিয়ে অবশ্য বেশ দুঃখ থাকাটা স্বাভাবিক দিতির। ১৯৮৪ সালে ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ কার্যক্রমের মাধ্যমে ঢাকাই সিনেমাতে পদার্পণ করেন তিনি। উদয়ন চৌধুরী পরিচালিত ‘ডাক দিয়ে যাই’ ছিল দিতির ক্যারিয়ারের প্রথম সিনেমা। কিন্তু সিনেমাটি মুক্তি পায়নি। দিতি অভিনীত মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র ‘আমিই ওস্তাদ’, আর পরিচালক ছিলেন আজমল হুদা মিঠু। এ ছবিতে দিতির অনবদ্য অভিনয় দর্শকদের বেশ নজর কাড়ায় আর পেছনে তাকাতে হয়নি। এরপর দর্শকদের বহু জনপ্রিয় চলচ্চিত্র উপহার দিয়ে গেছেন ঢাকার সিনেমার সোনালি যুগের এ নায়িকা। এরপর ২৮ বছরে প্রায় দুইশ মত ছবিতে অভিনয় করেছেন। পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার। সুভাষ দত্ত পরিচালিত ‘স্বামী-স্ত্রী’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য এ পুরষ্কার ঘরে তুলেন তিনি। এ ছবিতে দিতি আলমগীরের স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেন।