ওসমানীনগরে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে আ.লীগ-যুবলীগের শোডাউন
ডেস্ক রিপোর্টঃ ওসমানীনগরে ১৪৪ ধারার মাঝেও শোডাউন করেছে উপজেলা আওয়ামীলীগ ও যুবলীগ। এ নিয়ে দিনভর উত্তেজনা, উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় কেটেছে উপজেলাবাসীর। এর আগের দিন দু’টি পক্ষের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষের জের ধরে সড়ক অবরোধসহ পাল্টাপাল্টি শোডাউন চলে আসছিল। বুধবার দু’টি পক্ষ একই স্থানে সমাবেশ আহ্বান করায় উপজেলা প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে। তারপরও ১৪৪ ধারার মাঝেও বিবদমান দু’টি পক্ষ ব্যাপক শোডাউন করেছে।
উপজেলার গোয়ালাবাজার, তাজপুর ও কদমতলাসহ আশপাশ এলাকায় সবধরণের সভা-সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ করে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ ধারা জারি করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ শওকত আলী। বুধবার দুপুর ১টা থেকে জারি করা ১৪৪ ধারা পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তা বলবৎ থাকবে। এর আগেও আ’লীগের দলীয় কোন্দল ও সংঘর্ষের জেরে গতমাসে দুইবার বার ১৪৪ ধারা জারি হয়েছিল।
সবধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সিলেটের সহকারী পুলিশ সুপার (সদর দক্ষিণ সার্কেল) আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে তাজপুর ও গোয়ালাবাজার এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। তবে ১৪৪ ধারা জারীর পর প্রশাসন ঢিলেঢালা অবস্থানে থাকায় দু-পক্ষই ১৪৪ ধারা জারীকৃত এলাকায় পৃথক পৃথক সমাবেশসহ ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে তাজপুর গোয়ালাবাজার অংশে উভয় পক্ষের সমর্থকদের দফায় দফায় শোডাউন দিতে দেখা গেছে।
বুধবার দুপুর থেকে থানা সংলগ্ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলতাফুর রহমান সোহেল এর বাসায় সাবেক উপজেলা আ’লীগের সভাপতি কবির উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক আব্দাল মিয়া’র উপস্থিতিতে তাদের সমর্থকরা সমাবেশ করতে দেখা যায়।
অন্যদিকে বিকাল আড়াইটায় নাজলু চৌধুরীর লোকজনসহ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আতাউর রহমানের নেতৃত্বে তাজপুর কদমতলা এলাকায় সমাবেশ করতে দেখা যায়।
দু’টি পক্ষের পাল্টাপাল্টি শোডাউনে ঠেকাতে ও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে উপজেলায় তাজপুর ও গোয়ালা বাজার এলাকায় পুলিশি টহল ছিল। তবুও সংঘর্ষের আশংঙ্কা রয়েছে।
জানা যায়, গত ২১ নভেম্বর সন্ধ্যায় উপজেলার গোয়ালাবাজারে শ্রমিকলীগের সম্মেলন চলাকালিন সময়ে উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের পরিচয় করিয়ে না দেয়ায় সম্মেলনের মধ্যে আলতাফুর রহমান সুহেল ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান চৌধুরী সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ছুরিকাঘাতসহ উভয় পক্ষের কমপক্ষে ১৫ জন আহত হন। এ ঘটনায় ২২ নভেম্বর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান চৌধুরী নাজলুর ছোট ভাই নাবেদুর রহমান চৌধুরী বাদি হয়ে উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলাতাফুর রহমান সোহেলসহ ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা দায়ের করেন। অন্য দিকে ছাত্রলীগ নেতা মিজানুর রহমান বাদি হয়ে উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজলু চৌধুরীকে প্রধান আসামি করে ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় পাল্টা মামলা দায়ের করেন। উক্ত সংঘর্ষ ও মামলা দায়েরের পর থেকে গোটা উপজেলায় আলোচনা সমালোচনা সহ উভয় পক্ষের মধ্যে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করেছিল।
বুধবার উভয় পক্ষে পৃথক পৃথক বিজয় র্যালীর আয়োজন করে। বুধবার সকাল ১১টা থেকে দু-গ্রæপের লোকজন তাজপুর ও গোয়ালাবাজার এলাকায় জড়ো হতে শুরু করলে উত্তেজনা ও মারমুখি অবস্থান দেখা দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তাৎক্ষনিক প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৪৪ ধারা জারীসহ এলাকায় পুলিশি টহল জোরদার ও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
ওসমানীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মুরসালিন জানান, তাজপুর ও গোয়ালাবাজারসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় ১৪৪ ধারা জারী করা হয়েছে। পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। এ সময় ১৪৪ ধারার মাঝেও দু-পক্ষের পৃথক পৃথক সমাবেশ ও মহড়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সমাবেশ নয় একটি পক্ষ তাঁর নিজস্ব বাসার ভিতরে ভুঁড়ি ভোজের আয়োজন করায় তাদের সমর্থকরা সেখানে গিয়ে খেয়ে এসেছেন। এছাড়া অপর পক্ষ ১৪৪ ধারা জারীকৃত এলাকা ছাড়া অন্য স্থানে শান্তিপূর্ন সমাবেশ করেছে।
ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শওকত আলী জানান, দুটি পক্ষ একই দিনে সমাবেশের আয়োজন করায় তাজপুর, গোয়ালাবাজারসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় সবধরণের সভা-সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ করে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।