‘কানাডার নির্বাচন ও বাংলাদেশি কমিউনিটির ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনার
কানাডা (সিবিএনএ)।। ‘কানাডার রাজনীতি ও বাংলাদেশি কমিউনিটির ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, প্রবাসে আওয়ামী লীগ-বিএনপি হিসেবে নয়, মূলধারার রাজনীতির মাধ্যমে নিজেদের পরিচিত করতে হবে।
তারা বলেন, নির্বাচন এলে নিজেদের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা না করে জনপ্রতিনিধি হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়োজনীয় যোগ্যতাও অর্জন করতে হবে।
শনিবার টরন্টোর ‘এক্সেস পয়েন্ট অন ডেথফোর্থ’ মিলনায়তনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই অ্যাসোসিয়েশন অব কানাডা আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা এই আহ্বান জানান।
সংগঠনের সভাপতি শওগাত আলী সাগরের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইলেকশন কানাডার বিচেস ইস্ট ইয়র্ক ইলেক্টোরাল ডিস্ট্রিক্ট এর রিটার্নিং অফিসার জেফ পলিন। প্যানেল আলোচক হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন জর্জ ব্রাউন কলেজের ইংরেজির অধ্যাপক ড. সুজিত দত্ত, বেসরকারি সংস্থা সেটেলমেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যান্ড ফ্যামিলি সাপোর্ট সার্ভিসেস (সাফস) এর সাবেক নির্বাহী পরিচালক ড. কাজী হক, বেসরকারি সংস্থা এক্সেস এলায়েন্স এর ব্যবস্থাপক (কোয়ালিটি অ্যান্ড একাউন্টিবিলিটি) ড. একেএম আলমগীর, টরন্টো স্টার এর সাংবাদিক তামারা খন্দকার।
নতুন প্রজন্মের অদিতি জহিরের সঞ্চালনায় সূচনা বক্তব্য রাখেন এলামনাইর সহসভাপতি সুধান রয় এবং ধন্যবাদ সূচক বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন বাহার। প্যানেল আলোচকগণ উপস্থিত শ্রোতাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
মূলধারার রাজনীতি নিয়ে টরন্টোর বাঙালি কমিউনিটিতে এই ধরনের আয়োজন এই প্রথম।
ইলেকশন কানাডার রিটার্নিং অফিসার জেফ পলিন বাঙালি কমিউনিটিকে কানাডার সকল পর্যায়ের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, কানাডার কোনো নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া তেমন কঠিন কোনো বিষয় নয়। রাজনৈতিক দলের হয়ে কিংবা ব্যক্তিগতভাবেও নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ আছে।
তিনি জানান, ইলেক্টোরাল ডিস্ট্রিক্ট-এ বাঙালি ভোটারের সংখ্যা বেশি বিধায় তারাও এই কমিউনিটির প্রতি বিশেষ নজর দিচ্ছেন। বাঙালি কমিউনিটির সঙ্গে ইলেকশন কানাডার সম্পর্ক আরো নিবিড় করার জন্য বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত একজনকে কমিউনিটি রিলেশন অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
তিনি জানান, এই নিয়োগের ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাইর সুপারিশকেই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
জেফ পলিন, আগামী নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য বাঙালি কমিউনিটির প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, এটি আপনাদের অধিকার, এই অধিকার প্রয়োগে এগিয়ে আসুন। কোনো বিষয়ে কোনো ধরনের সমস্যা থাকলে তা আমাদের জানালে ইলেকশন কানাডা সেই সমস্যা সমাদানে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে বলেও তিনি আশ্বাস দেন।
প্যানেল আলোচক ড. সুজিত দত্ত বলেন, বিভিন্ন দেশ থেকে অভিবাসন নিয়ে কানাডার নাগরিক হওয়া প্রত্যেকের জন্যই ভোট একটি গণতান্ত্রিক অধিকার। ভোট একদিকে যেমন অধিকার, অন্যদিকে এটি দায়িত্ব এবং সুযোগও বটে। ভোট দিতে না গেলে নাগরিক দায়িত্বের প্রতিই অবহেলা করা হয়।
প্রবাসে বাঙালি কমিউনিটির স্বাভাবিক প্রবণতার চিত্র তুলে ধরে ড. সুজিত দত্ত বলেন, বিদেশে এসেও বাঙালিরা ঘরে বাইরে সর্বত্রই রাজনীতি নিয়ে কথা বলেন। তারা নিজেদের আওয়ামী লীগ-বিএনপি হিসেবে পরিচিত করতে ভালোবাসেন, কিন্তু তারা কানাডার রাজনীতি নিয়ে কথা বলেন না, কানাডার রাজনেতিক দলের পরিচয়ে পরিচিত হওয়ার চেষ্টা করেন না। এটি অত্যন্ত দু:খ জনক।
তিনি বলেন, আমাদের প্রতিবেশি ভারত- পাকিস্তান এমনকি শ্রীলংকান কমিউনিটি থেকেও হাউজ অব কমন্সে, সিটি কাউন্সিলে নির্বাচিত প্রতিনিধি আছে। কিন্তু বাংলাদেশি কমিউনিটি থেকে কোনো পর্যায়েই কোনো প্রতিনিধি নেই। গত সিটি নির্বাচনে বাঙালি কমিউনিটি থেকে অনেকেই প্রার্থী হয়েছিলেন, ফেডারেল নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা করেছেন। যারা প্রার্থী হয়েছিলেন বা হতে চেয়েছেন- তাদের যোগ্যতা বিচার বিশ্লেষণের দাবি রাখে। ‘আমি বাঙালি’ কেবল এই যোগ্যতা নিয়ে কেউ প্রার্থী হলেই কি কমিউনিটি তাকে সমর্থন দেবে? নাকি তার যোগ্যতাও যাচাই বাছাই করবে।
ড. সুজিত দত্ত কোনো নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আগে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা অর্জনের উপরও গুরুত্ব আরোপ করেন।
প্যানেল আলোচক ড. কাজী হক বলেন, নতুন আসা অভিবাসীরা সম্পূর্ণ অচেনা একটি পরিবেশে এসে নিজেদের টিকিয়ে রাখার লড়াইয়েই বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েন। জীবন সংগ্রামের তীব্রতার কারণেই তাদের পক্ষে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়ে ওঠা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তিনি স্বীকার করেন, কানাডার মূলধারার রাজনীতিতে সম্পৃক্ত না হলেও তারা কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়েই মেতে থাকেন। তিনি এই প্রবণতা থেকে বেরিয়ে কানাডার রাজনীতি নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনার তাগিদ দেন।
ড. কাজী হক বলেন, কানাডার আইনে কেবলমাত্র নাগরিকরাই জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন, স্থায়ী বাসিন্দাদের ভোটাধিকার নাই। নাগরিকত্ব পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়, এই বিধানও অভিবাসীদের রাজনীতির ব্যাপারে অনাগ্রহী করে তুলে। তিনি স্থায়ী বাসিন্দাদের জাতীয় নির্বাচনে ভোটাধিকার দেয়ার প্রস্তাব তুলেন।
সাংবাদিক তামারা খন্দকার বলেন, প্রবাসে বাঙালি কমিউনিটি থেকে যারাই নির্বাচনে প্রার্থী হন- তাদের প্রায় সবাই নির্বাচনের মৌসুমে নিজেদের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেন। অথচ প্রার্থী হওয়া একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ব্যাপার, প্রস্তুতির ব্যাপার এবং অবশ্যই যোগ্যতা অর্জনের ব্যাপার। তিনি বাঙালি পরিবারের সন্তানদের স্কুল, কলেজ পর্যায়ে বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বলেন, রাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় বাঙালিদের বক্তব্যকে পৌঁছে দিতে হলে এর কোনো বিকল্প নেই।
তামারা খন্দকার বলেন, কানাডায় যারাই নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন বা প্রার্থী হয়েছেন তাদের প্রায় সবাই দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। বাঙালি কমিউনিটিকেও সেই পথেই এগুতে হবে। আর তার জন্য ব্যক্তিগত পরিমণ্ডলেও মূলধারার রাজনীতি, বিভিন্ন ইস্যু, নিজেদের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে হবে।
সভাপতির ভাষণে সাংবাদিক শওগাত আলী সাগর বলেন, কানাডার সকল পর্যায়ে বাঙালি প্রতিনিধি চাই, নির্বাচনে বাঙালি প্রার্থী চাই- তবে যোগ্য প্রার্থী চাই’- এই শ্লোগান নিয়ে কমিউনিটিতে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। প্রার্থী হওয়ার আগে তার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা অর্জন করতে হবে।
তিনি বলেন, প্রবাসে বাঙালি কমিউনিটিকে বাংলাদেশীয় দলীয় রাজনীতির চর্চ্যা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
Sadera Sujan (সদেরা সুজন) প্রধান নির্বাহী, কানাডা-বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সী ( সিবিএনএ) বাংলা নিউজ ফোনঃ ০১১ ৫১৪ ৯৩১ ৮৪১৮/০১১৫১৪ ৭১৪ ৮৪১ [email protected], [email protected]