ছিটমহল

(লেখক: সাইদুর রহমান সাইদুল )

saidur“মুখে মধু অন্তরে বিষ” নামরে বাহার আছে বটে । রাজমহল, ছিটমহল নামের সাদৃশ্য দেখে শান্তির আভাস পাওয়া যায়। কিনতু বাস্তবে তার লেশ মাত্র নেই। ভোগান্তি ও প্রতীক্ষার অবসানের শেষ ছিল না।
ছিটমহল আসলে কি? ইংরেজিতে এনক্লেইভ বা এক্সক্লেইভ নামে পরিচিত এই ছিটমহলগুলো আসলে এক দেশের সীমানার মধ্যে আরেক দেশের খুব ছোট অংশ। এদেরকে দ্বীপের সাথে তুলনা করা যেতে পারে, কিন্তু একটি দ্বীপ যেখানে চারদিকে পানি দিয়ে ঘেরাও থাকে, সেখানে ছিটমহলগুলো অন্য দেশের ভূখ-ের মাধ্যমে ঘেরাও থাকে ।। নিজ দেশের নাগরিক সকল সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত এরা।
আবার ছিটমহলের সংজ্ঞাটা অন্যভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়। ছিটমহল মানে মানুষের অধিকার এবং বাক স্বাধীনতাকে কন্ঠরোধ করে, কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে বন্দি করে, লবন মিশ্রিত কাঁটা দিয়ে, চার দেওয়ালে বন্দি মান্ষু গুলিকে প্রতিনিয়ত আঘাত করা।
৬৮ বছর পর্যন্ত ছিটমহলের মানুষের সমস্ত মৌলিক চাহিদা গুলিকে ভূলুন্ঠিত করে, আমরা মানবতার পক্ষে উচ্চস্বরে স্লোগান দিয়েছি । এত বছর পর্যন্ত মান্ষু গুলোর পতাকা ছিল না, ভাষা ছিল অভেক্ত , স্বাধীনতা ছিল স্বপ্ন, শিক্ষা ছিল দূরস্বপ্ন । কাঁটাতারে মানুষের বুকফাটা আর্তনাথে হয়তো বা শত- সহস্র বার আকাশ কম্পিত হয়েছে। হয়তো বা না প্রাপ্তির ব্যাকুলতায় দেহ পিঞ্জর অগ্নিস্নাত হয়েছে। এত বড় ভূ খন্ডে মাথা গোছার ঠাঁই হয়তো পেয়েছে। কিন্তুু পরিচয়হীন মান্ষুকে পৃথিবীর সমস্ত বৈষম্য গ্রাস করে । এত বছর বিশ্বের মানবাধিকার দু দেশের সরকারে কুটনেতিক বেড়াজালে আবদ্ধ ছিল ।
১৯৭৪ সালের ১৬ মে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবের মধ্যে ছিটমহল বিনিময়ের লক্ষ্যে স্থল সীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সেই চুক্তি অনুযায়ী, ভারত পাবে দক্ষিণ বেরুবাড়ি, বাংলাদেশ পাবে দহগ্রামও আঙ্গুরপোতা ।।
এর পথ ধরে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধান মন্ত্রী ছিটমহল চুক্তি বাস্তবে রূপ দিলেন । এর জন্য দু দেশের রাষ্ট্র প্রধানকে ধন্যবাদ। আরও ধন্যবাদ দিচ্ছি পাঁচ অক্ষরের ছিটমহল নামটি মুছে দিয়ে, নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করার জন্য। এই মহতি কাজের জন্য দু দেশের সরকার বিশ্বের সর্বোচ্চ পুরস্কার পাওয়ার দাবিদার।
হয়তো বা বাংলাদেশের বর্তমান অর্থেনেতিক অবস্হা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির জন্য ছিটমহলবাসী এ দেশের ভূ খন্ডকে বেছে নিয়েছেন।
আমরাও তাদেরকে সাদরে গ্রহন করেছি।
লেখকঃ সাবেক এজিএস, শহীদ স্মৃতি আদর্শ কলেজ ছাত্রসংসদ, নান্দাইল, ময়মনসিংহ।