৪ মুখোশধারীকে আসামি করে হত্যা মামলা : তদন্ত শুরু
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ পুবালী ব্যংক জাউয়া বাজার শাখার কর্মকর্তা, গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক, মুক্তমনা ব্লগার, বিজ্ঞানমনষ্ক লেখক অনন্ত বিজয় দাশকে হত্যার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতনামা চার মুখোশধারীকে আসামি করা হয়েছে। মঙ্গলবার ১১টা ৫৫ মিনিটে অনন্ত বিজয় দাশের বড় ভাই নগরীর সুবিদবাজার ১৩/১২ নূরানী বাসার রবীন্দ্র দাসের ছেলে রতেশ্বর দাস বাদি হয়ে এ মামলা দায়ের করেন।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় বিমানবন্দর থানার ওসি গৌছুল হোসেন মামলা দায়ের বিষয়টি সবুজ সিলেটকে নিশ্চিত করেছেন।
রতেশ্বর দাস এজহারে উল্লোখ করেন, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টায় তাঁর ছোট ভাই আনন্ত বিজয় দাস (৩২) কর্মস্থল পূবালী ব্যাংক জাউয়া বাজার শাখায় যাওয়ার জন্য ১৩/১২ নূরানী বাসা থেকে বের হন। বাসা থেকে সবের হয়ে সিলেট-সুনামগঞ্জ মূল সড়কের দিকে পায়ে হেটে কিছু দূর যাওয়া মাত্র চারজন অজ্ঞাতনামা যুবক ধারোলে চাপাতি হাতে আনন্তকে আক্রমন করে। আনন্ত প্রাণে বাঁচার জন্য পিছনে ফিরে বাসার দিকে দৌড় দেন। আক্রমনকারী ওই চার যুবক তাঁকে ধাওয়া করে দস্তিদার দিঘীর (নুরনী দিঘী) দক্ষিণপাড় পাঁকা রাস্তার ওপর নাগালে ধারালো চাপাতি দিয়ে কোপাতে থাকে। অনন্তের মাথা, ঘাড়, দুই হাতসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে কুপিয়ে বনকলাপাড়া রাস্তা দিয়ে পালিয়ে যায়। এরপর রতেশ্বর দাসের ছোট বোন পঞ্চতপা দাস বাসা থেকে খবর পেয়ে ছুটে এসে দেখতে পান মাটিতে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে আছেন অনন্ত। আশপাশের লোকজন নিয়ে পঞ্চতপা দাস একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা যোগে ছোটভাই অনন্তকে নিয়ে যান সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা অনন্তকে মৃত ঘোষণা করেন। রতেশ্বর দাস এজহারে বলেন, তিনি বিয়ানীবাজার ব্রাক ব্যাংক কর্মস্থল থেকে ফিরে হাসপাতালে ছোট ভাই অনন্তের লাশ দেখতে পান।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) মো. রহমত উল্লাহ গণমাধ্যমকে জানান, অনন্তের হত্যাকারীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের জন্য মঙ্গলবার রাতভর অভিযান চালানো হয়। চারজন মুখোশধারীই অনন্তকে হত্যা করেছে তা অনুসন্ধানে নিশ্চিত হওয়া গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরণের চেষ্টা করা হবে। তিনি বলেন, পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে ‘যারা অনন্তকে হত্যা করেছে তারা সাধারণ হত্যাকারী নয়, তারা প্রফেশনাল কিলার।’
বিমানবন্দর থানার ওসি গৌসুল হোসেন জানান, অজ্ঞাতনামা চারজনেকে এজাহারে আসামি করা হয়েছে। রাতেই মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে। মামলাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তাই মামলায় থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নুরুল আলমকে তদন্ত ভার দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, পুলিশ আসামি গ্রেপ্তার ও তথ্য সংগ্রহ করতে সব ধরণের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার নগরীর সুবিদবাজার এলাকায় দিনদুপুরে কুপিয়ে খুন করা হয় গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশকে। ওইদিন সকাল ৯টায় সুবিদবাজারস্থ দস্তীদারদিঘীর পাড় (নূরানী দিঘিরপাড়) এলাকায় তাকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তাৎক্ষণিক অনন্তকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। ধারণা করা হচ্ছে ঘটনাস্থলেই অনন্তের মৃত্যু হয়েছে। অনন্ত বিজয় দাশ সিলেট নগরীর সুবিদবাজার নূরানী ১৩/১২ নম্বর বাসার রবীন্দ্র কুমার দাসের ছেলে। ২ ভাই ২ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট। ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ মুক্তমনা ব্লগে লেখালেখির পাশাপাশি যুক্তি’র সম্পাদক ছিলেন। তিনি পূবালী ব্যাংক জাউয়া বাজার শাখার সহকারী উন্নয়ন কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন।