তাঁবুতে রাত কাটালেন নেপালের প্রেসিডেন্টও
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ কাঠমান্ডুর রাজপথ এখন ফাটলে ফাটলে চৌচির। তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছে বেশির ভাগ বহুতল। শহরটা যেন প্রকৃতির তাণ্ডবে রাতারাতি দুভাগ হয়ে গিয়েছে। যার একটা অংশ ঘুমিয়ে মাটির নিচে। অনড়, প্রাণহীন। অন্যটা তাঁবু খাটিয়ে খোলা আকাশের নীচে। শহরের মাঝখানে প্যারেড গ্রাউন্ডে তাঁবু খাটানো হয়েছে। আশ্রয় নিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। ভয়ে বাড়ি ফিরতে চাইছেন না কেউ।
রাস্তায় নেমে আসতে হয়েছে দেশের প্রেসিডেন্টকেও। কাল সারা রাত তাঁবুর মধ্যেই কাটিয়েছেন নেপালের প্রেসিডেন্ট রামবরণ যাদব। প্রেসিডেন্টের দেড়শো বছরের পুরনো দপ্তর-আবাসন ‘শীতল নিবাস’-এ একাধিক জায়গায় ফাটল ধরেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালার বাসগৃহও।
নেপালে মৃতের সংখ্যা আরও তিন গুণ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ এখনও বহু মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে রয়েছেন। খোঁজ নেই কয়েক হাজারের।
শুধু কাঠমান্ডুতেই এখনও পর্যন্ত হাজারের বেশি মৃত্যুর খবর মিলেছে। কাঠমান্ডু লাগোয়া জেলা রাসুয়া, গোর্খা, সিন্ধুপালচক, ধারিং, কাভরেপালানচক এবং ঢোলাকাতেও একই চিত্র।
আবহাওয়াবিদদের দাবি, বিশেষত দেশটির পূর্ব অংশে আগামী দুদিন ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এরই মধ্যে গতকাল ফের তুষার-ধস হয়েছে এভারেস্টে। পরিস্থিতির কারণে ১০ দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে নেপাল সরকার।
ধ্বংস হয়েছে ঐতিহ্যশালী কাষ্ঠমণ্ডপ, বসন্তপুর দরবার, দশাবতার এবং কৃষ্ণ মন্দির। ক্ষতিগ্রস্ত পশুপতিনাথ মন্দিরও। ধরাহরা মিনারের ধ্বংসস্তূপ থেকে ২০০টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বাতাসে ধুলোর গন্ধ, মাটিতে রক্তের দাগ। আর স্বজনহারা কান্নায় ভারি চারপাশ।
চিকিৎসকদের আশঙ্কা, এ দিনের দ্বিতীয় কম্পনের পর আহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এ দিকে ওষুধপত্রের মজুত দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। পোখরায় চিকিৎসা চলছে হাসপাতালের বাইরেই। হাসপাতাল ভবনের মধ্যে ঢুকতে ভয় পাচ্ছেন চিকিৎসক-কর্মীরা। বেশির ভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ নেই শনিবার থেকে।
রবিবার নতুন করে ভূমিকম্পের পরে অবশ্য দীর্ঘক্ষণ বন্ধ রাখা হয়েছিল অসামরিক বিমান পরিষেবা।
উদ্ধারকাজ ও ত্রাণে আন্তর্জাতিক সাহায্য চেয়েছে নেপালও। সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, চীন, পাকিস্তান ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষে। বিপর্যয়ের মুখে নেপালের পাশে দাঁড়াতে প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছে ইসরাইল।