যে গ্রামের নামে উপজেলা, সেই গ্রামকেই অবহেলা!
হাসান বশির, বিশ্বম্ভরপুর: বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ঐতিহাসিক গ্রাম বিশ্বম্ভরপুর। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা’র নাম করণ হয় এ গ্রামের নামে। কিন্তু যে গ্রামের নামে উপজেলা, সে গ্রাম আজও অবহেলায়, যেন বাতির নিচে অন্ধকার প্রবাদ কথার চিত্র। গ্রামের ওপারে বিশ্বম্ভরপুর বাজার, দূরত্ব মাত্র ১শ মিটার, অথচ গ্রামকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা রূপসা নদীতে আজও তৈরী হয়নি মাত্র ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে একটি ব্রিজ। তৈরী হয়নি একটি আবুরা রাস্তা। পৌছেনি বিদ্যুৎ তাই আজও বিদ্যুতের আলো আর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছেন এ গ্রামের জনসাধারণ। একটি ব্রিজের না হওয়ার কারনে সাকু আর নৌকায় চলে পারাপার। এ গ্রামের মানুষের জন্য যেন বারো মাসই বর্ষা।
জানা যায়, ১৯৩১ সালে গ্রামে স্থাপিত হয় বিশ্বম্ভরপুর আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়, পরে ১৯৭৭ খ্রিঃ বিশ্বম্ভরপুর থানার কার্যক্রম শুরু হয় এ গ্রামের আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তখন বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম চলে সাবেক ফতেপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল খালেকের বিশ্বম্ভরপুর বাজারের টিনসেড ঘরে। ক’দিন পর থানা স্থানান্তরিত হলে গ্রামের এ বিদ্যালয়ে চলে উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কার্যক্রম। পরে শিক্ষা অফিস স্থানান্তরিত হলে পূনঃবিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়। বিশ্বম্ভরপুর থানা- উন্নিত হয় উপজেলায়, পরে অবশ্যই উপজেলার প্রশাসনিক ভবন তৈরী হয় বিশ্বম্ভরপুর গ্রাম থেকে কিলো মিটার দূর মুক্তিখলাগ্রামে। তবে এ বিশ্বম্ভরপুর গ্রামেই স্থাপন করা উপজেলা রিসোর্স সেন্টার ও উপজেলা খাদ্যগোদাম, কিন্তু থানা ও উপজেলা গঠনের প্রায় ৩৮বছরেও গ্রামের মানুষের যোগাযোগের জন্য একটি মাত্র ব্রিজ আর একটি মাত্র রাস্তা স্থাপন হয়নি আজও। ২০০৩ খ্রিঃ বিশ্বম্ভরপুরে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হলেও ১ যুগ পরও বিদ্যুতের আলো পৌছে নি এ গ্রামে। অন্য দিকে এ গ্রামে স্থাপিত বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষকদের ট্রেনিং সেন্টার-উপজেলা রিসোর্স সেন্টারে শিক্ষক/কর্মচারীদের যাতায়াতে ভোগান্তি পোহাতে। খাদ্যগোদামে রক্ষিত খাদ্য শষ্য উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে (রিলিফ-ভিজিএফ,ভিজিডিসহ অন্যান্য কাজে সরকার প্রদত্ত চাল,গম) পৌছাতে যাতায়াতের কারনে বাড়তি বিড়ম্ভনায় পরতে হয় ভুক্তভোগীদের। অন্য দিকে এ প্রতিষ্ঠান ২টিতে বিদ্যুৎ সংযো দেয়া হয়নি। ফলে খাদ্যশষ্য’র বস্তা রাতে অন্ধকারে পরে থাকায় পোকা-মাকড়ের আক্রমনে খাদ্য শষ্য’র ক্ষতি সাধিত হয়। যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কারনে যে কোন দূর্ঘটনায় থেকে খাদ্যগোদামের খাদ্যশষ্য রক্ষায় খাদ্যগোদামে পৌছানো খুবই কঠিন হেমন্তে কিছুটা সহজ হলেও বর্ষায় একেবারেই কঠিন। আবার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের গোদাম না থাকায় এ গ্রামের আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবন গোডাউন হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তাই পুরো উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয় সমূহের বই এখানে বছরে একবার সংরক্ষন করে, বিতরণ করা হয় এখান থেকেই, তাই শিক্ষকগন এখান থেকে বই ক্যারি করতে নদী পারাপারে প্রতিজনকে গুনতে হয় ১/২শ টাকা এমন বক্তব্য শিক্ষক সমিতির সম্পাদক হরিষ চন্দ্র বর্মনের। বিশ্বম্ভরপুর গ্রামের নিজাম উদ্দিন বলেন দু’বছর আগে এ গ্রামের মানুষ বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার জন্য সব প্রস্তুতি শেষ করলেও এখনও বিদ্যুতের আলো পৌছেনি। গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য অবঃ শিক্ষক প্রেমানন্দ,স্কুল কমিটির সভাপতি কফিল উদ্দিন,ব্যবসায়ী আব্দুস সাহিদ,সাবেক ইউপি সদস্য অশ্বিনী বাবু বলেন গ্রামের নামে উপজেলা কিন্তু গ্রামের আশানুরূপ উন্নতি না হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেন। গ্রামের প্রবীন সাংবাদিক নেছার আহমদ বলেন আলোর নিচে অন্ধকার প্রবাদ কথার মতই আমার এ গ্রামের চিত্র। তিনি গ্রামের উন্নয়নের জন্য সংশ্লিষ্টদের দাবি জানান।