নগরীতে ভেজাল রঙয়ের তিন কারখানা, আটক ২ : মাটি দিয়ে তৈরি হয় ‘জার্মানী রঙ’
ইয়াহইয়া মারুফঃ সিলেটের বিভিন্ন স্থান থেকে লাল আর কালো মাটি সংগ্রহ করে ওই মাটির সাথে ঢাকা থেকে আনা কেমিক্যাল মিশিয়ে রঙ তৈরি করা হত। এই ভেজাল রঙের কৌটায় জার্মানির নামিদামি কোম্পানীর লেভেল লাগিয়ে বাজারে চড়া দামে বিক্রি করে আসছিলেন তারা। এই রঙ বাসা-বাড়িতে লাগানো হলে মাস দুয়ে একের মধ্যে এই রঙ দেয়াল থেকে চটকা উঠে যেত। ফলে যেসব ব্যবসাী কথিত এই ‘বিদেশী’ রঙ বিক্রি করতেন তারা পড়তেন নানা উঠকো ঝামেলায়। এক পর্যায়ে ‘বিদেশী’ এই ভেজাল রঙ তৈরির অভিযোগ পায় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গোপন সংবাদে ভিত্তিতে নগরীর দুটি স্থানে অভিযান চালিয়ে পৃথক তিনটি ভেজাল রঙের কারখানা আবিস্কার করেন গোয়েন্দারা। পৃথক অভিযানে আটক করা হয় দুই ভেজালের কারিগরকে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় নগরীর কুমারপাড়া ও সওদাগরটুলায় সিলেট মহনগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (এডিসি দক্ষিণ) জিদান আল মুসা ও এসি মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল এ অভিযান চালায়। এসময় পুলিশ ভেজাল রংয়ের ৩টি কারখানায় অভিযান চালিয়ে প্রায় ৫লাখ টাকার ভেজাল রঙ জব্দ করে। আটকের পর এই ভেজাল রঙের কারিগররাই সুরমা টাইমসকে জানায় ভেজাল রঙ তৈরির আদোপ্রান্ত। পুলিশ কর্মকর্তারা জানালেন, ভেজাল রঙের চক্রটি দেশজুড়ে বিস্তৃত। এদের মুলোৎপাটনে কাজ করছে নগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল।
আটককৃত দুইজন হচ্ছেন, শরীয়তপুর জেলার জাজিরা থানার বড়ইকান্দি গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল আজিজ বেপারীর পুত্র হজরত আলী (৪৪) ও আসমত আলী (৪০)। বর্তমানে তারা ওই এলাকায় ভাড়া বাসা নিয়ে ভেজাল ব্যবসা গড়ে তুলেন। ভেজাল এই ব্যবসার সাথে জড়িত একই জেলার কাশেম আলী, বাবুল মিয়া, আমজাদ আলী, আনোয়ার ও সেন্টুকে খোঁজছে পুলিশ।
পুুলিশ ও এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে এই চক্রটি সিলেটের বিভিন্নস্থানে ভেজাল রং বিক্রি করে মানুষের প্রতারণা করে আসছে। তাদের প্রতারণার কবলে পড়ে অনেক ব্যবসায়ী ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। এমনকি চক্রটি রংয়ের পেকেটে নকল নামিধামি লেভেল লাগিয়ে দেশী রং বিক্রি করে আসছে। গোপন সংবাদে ভিত্তিতে পুলিশ কুমারপাড়া এলাকার ৪/২ নং বাসায় আসমত আলী,আইউম ও আনোয়ারের মালিকানায় ১টি গুদামে , সওদাগরটুলার ১৫ নং বাসায় বাবুল, সেন্টু, আমজাদ মিয়া ও কাসেমের মালিকানায় ১টি গুদাম ও একই ১৬ নং বাসায় হজরত আলীর মালিকানায় আরো ১টি গুদামে গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান চালায়। এসময় এই ৩টি কারখানা থেকে ভেজাল রং উৎপাদনের কয়েক লক্ষ টাকার কাচামাল উদ্ধার করে পুলিশ। এর মধ্যে লাল, কালা মাটি ও কেমিকেল জাতিয় কাচামাল রয়েছে।
আটককৃত হজরত আলী জানান, তারা ঢাকার ইমানগঞ্জের একটি কারখানা থেকে র্জামানী ব্রান্ডের পেকেট ও কেমিকেল ৪০ টাকা ধরে প্রতি পেকেট ক্রয় করে সিলেটে তা ৫০/৬০ টাকা ধরে বিক্রি করেণ এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে লাল, কালা মাটি সংগ্রহ করত। তাদের কাছে ব্যাংক এলসি চায়নি ও এজেন্ট দেয় ঢাকার কারখানা।
ভেজাল রং উৎপাদনের কাছামাল জব্দের সত্যতা স্বীকার করে সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (এডিসি দক্ষিণ) জেদান আল মুছা জানান, এরা পন্যে ভেজাল অপরাধে জড়িত সারাদেশে তাদের এই ভেজাল পন্যের এজেন্ট রয়েছে। তাই তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হবে।