অর্ধযুগ পর মাতৃভূমিতে প্রাণহীন কোকো : জানাজায় লাখো জনতার ঢল : বনানীতে সমাহিত
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ অর্ধযুগ পর মাতৃভূমিতে ফিরলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো। তবে জীবিত নয় মৃত। মঙ্গলবার বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে কোকোর মরদেহ বহনকারী মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের এমএইচ ১০২ ফ্লাইটটি শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মরদেহ গ্রহণ করবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ এবং আর্ন্তজাতিক বিষয়ক সম্পাদক গিয়াস কাদের চৌধুরী।
জানাজায় অংশ নিতে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর ও দক্ষিণ গেটে দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের ঢল ছিল। জনতার ঢল দক্ষিণ গেট থেকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল। মঙ্গলবার জোহরের নামাজের পর থেকেই জানাজায় অংশ নিতে বায়তুল মোকাররম মসজিদে সমবেত হতে থাকেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী ও সাধারণ মানুষ। অন্যান্যদের মধ্যে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্পধারার চেয়ারম্যান বদরুদ্দোজা চৌধুরী, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তম, গাজিপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র এমএ মান্নান কোকোর জানাজায় অংশ নেন। বায়তুল মোকাররমের খতিব মাওলানা মো. সালাউদ্দিন কোকোর নামাজে জানাজায় ইমামতি করেন।
বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিন পাশে দোতলার উন্মুক্ত স্থানে একটি অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়। এখানেই সবাই তার মরদেহের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বায়তুল মোকাররম মসজিদে শেষ জানাজা সম্পন্ন হওয়ার পর আরাফাত রহমান কোকোর মরদেহ বনানী কবরস্থানে সমাহিত করা হয় । দুই নম্বর গেট সংলগ্ন ভিআইপিদের জন্য নির্ধারিত স্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।
সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে তাকে বনানী কবরস্থানে নেয়া হয়। তাকে সমাহিত করার পর রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। এসময় তার আত্মীয়-স্বজন ও দলের নেতা-কর্মীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে তার কবরটি বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে দেয়া হয়।
মামলার খড়গ মাথায় নিয়ে প্রায় সাড়ে ৬ বছর ধরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছিলেন কোকো। গত শনিবার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৪৫ বছরে মারা যান তিনি।
গত ওয়ান ইলেভেনের সময় ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সেনানিবাসের বাড়ি থেকে মা বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে গ্রেপ্তার হন আরাফাত রহমান কোকো। এর পর ২০০৮ সালের ১৭ জুলাই তৎকালীন সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পাওয়ার পর চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড যান তিনি। এরপর দেশে না ফিরে তিনি মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান।
২০ কোটি টাকার বেশি অর্থ সিঙ্গাপুরে পাচারে অভিযোগে ২০০৯ সালের ১৭ মার্চ মানিলন্ডারিং আইনে আরাফাত রহমান কোকোর বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১১ সালের ২৩ জুন আদালত এ মামলায় কোকোকে ছয় বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। ওই মামলার রায়ে তাকে সাড়ে ১৯ কোটি টাকা জরিমানার আদেশও দেন বিচারক। আওয়ামী লীগ সরকার সিঙ্গাপুর থেকে কোকোর পাচার করা অর্থের একটা অংশ দেশে ফিরিয়ে এনেছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়কর ফাঁকির অভিযোগে কোকোর বিরুদ্ধে ২০১০ সালের মার্চ মাসে আরেকটি মামলা করে। এছাড়াও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে কোকোর বিরুদ্ধে গুলশান থানায় দু’টি চাঁদাবাজির মামলা এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদক একটি মামলা করে। আর সোনালী ব্যাংকের ঋণখেলাপের মামলায় বড়ভাই তারেক রহমানের সঙ্গে এবং গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় মা খালেদা জিয়ার সঙ্গে কোকোও আসামি। এসব মামলার কারণে কোকো বিদেশে অবস্থান করছিলেন। মাঝেমধ্যে মাকে দেখতে উদগ্রীব হতেন কোকো। ফিরে আসতে চাইতেন মায়ের কাছে, ঢাকায়। দেশে ফিরলেই তাকে কারাবন্দি হতে হবে- এ জন্য পরিবারের সদস্যরা তাকে আসতে দেননি। কিন্তু এবার আর আটকে রাখতে পারলেন না। কোকো ফিরেই এলেন মাতৃভূমিতে, লাশ হয়ে।
https://www.youtube.com/watch?v=3sV_sDX0hPM