বিনামূল্যে বই দেয়া দুনিয়ার ইতিহাসে বিরল ঘটনা
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, দরিদ্র মাতা-পিতার সন্তানদের শিক্ষার অধিকার বাস্তবায়নে সরকার বিনামূল্যে বই দেয়া কর্মসূচি চালু করেছে। তিনি বলেন, দারিদ্রের কারণে বই কিনতে পারতো না বলে দরিদ্র সন্তানরা স্কুলে আসতে পারতো না। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকারের যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের কারণে আজ দেশের প্রায় শতভাগ শিশু স্কুলে যাচ্ছেছ। তিনি আরো বলেন, সরকারের এই দূরদর্শিতার কারণেই বিগত ৬ বছরে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ঝরে পড়ার হারও কমে এসেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মতিঝিল সরকারী বালক বিদ্যালয় মাঠে নতুন বছরের পাঠ্যপুস্তক উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
আড়ম্বরপূর্ণ এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান। বক্তৃতা করেন শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব কাজী আখতার হোসেন, মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফাহিমা খাতুন, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো: আবুল কাসেম মিয়া প্রমুখ।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ২০১০ সালে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মোট শিক্ষার্থী ছিল ২ কোটি ৭৬ লাখ ৬২ হাজার ৫২৯ জন। আর এখন শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪ কোটি ৪৪ লাখ ৫২ হাজার ৩৭৪ জন। এতেই প্রতীয়মান হয় শেখ হাসিনার সরকারের দূরদর্শিতার কারণে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে, ঝরে পড়ার হার কমে এসেছে।তিনি বলেন, বই উৎসবের আজকের দিনে সরকার সারা দেশে বই বিতরণ করছে ৩২ কোটি ৬৩ লাখ ৪৭ হাজার ৯২৩টি। আর ২০১০ সালে এ সরকার বই বিতরণ করেছিল ১৯ কোটি ৯০ লাখ ৯৬ হাজার ৫৬১টি। ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সরকার মোট বই বিতরণ করেছে ১৫৫ কোটি ৮৩ লাখ ৫৬ হাজার ১২৩টি।
নাহিদ বলেন, দুনিয়ার ইতিহাসে এ ঘটনা বিরল। বিশ্বের অনেক ধনী দেশও বিনামূল্যে বই দিতে পারেনি। কিন্তু বাংলাদেশ পেরেছে।তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের এ সাফল্যের কারণেই জাতিসংঘরের মহাসচিব বাংলাদেশকে বিশ্বের রোলমডেল বলে উল্লেখ করেছেন। ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী বলেছেন, এটা শুধু বাংলাদেশই পারে, আর কেউ নয়। আর ইউনেস্কো বলেছে, বাংলাদেশ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল (এমডিজি) অর্জনে বাংলাদেশের সাফল্য আকাশচুম্বী। নারী-পুরুষের সমতা বা শিক্ষাক্ষেত্রে ছেলেমেয়েদের সমতা লক্ষ্যমাত্রার ৩ বছর আগেই বাংলাদেশ অর্জন করেছে। যা বিশ্বের কোন দেশ পারেনি।
তিনি বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে যারা ষড়যন্ত্র করেছিল, তারা আজ ভয় পেয়ে গেছে। বছরের প্রথম দিন সারা দেশে শিশুকিশোর শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মুখরিত পদচারণায় তারা আজ ভীত সন্ত্রস্ত। তবে তাদের ষড়যন্ত্র এখনও অব্যাহত রয়েছে। এ জন্য বই উৎসবের দিন তারা হরতাল দিয়েছে। যুদ্ধাপরাধীর রায়ের বিরুদ্ধে তাদের এ হরতাল বলে তারা প্রচার চালালেও তাদের মূল উদ্দেশ্য- শিশুদের শিক্ষা জীবনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি।নাহিদ বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন প্রজন্মকে বিশ্বমানের শিক্ষা দিয়ে জ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিশ্বমানের করে গড়ে তুলতে চাইছি। এ জন্যই সরকার ২০১০ সালে সর্বজন স্বীকৃত জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছে।
তিনি বলেন, সেই আলোকে শিক্ষার্থীদের নৈতিক শিক্ষা দেয়ার ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে। যেন গুরুজনদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের পাশাপাশি বাংলাদেশকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে নিজেরাই নিজেদের প্রস্তুত করতে পারে, বর্তমানে সে শিক্ষাই দেয়া হচ্ছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন,শেখ হাসিনার সরকার ধারাবাহিকভাবে শিক্ষাক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়িয়ে চলেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে এ বিনিয়োগ কখনই বৃথা যাবে না। কারণ, এখাতের বিনিয়োগ হচেছ দেশের শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ।
তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষকরা যেখানে বেশি দরদী, সেখানকার শিক্ষার্থীরা বেশি ভাল করেছে। তাই দেশের সব স্কুলের শিক্ষকদের বলব: আপনারা শিক্ষার্থীদের প্রতি আরো বেশি দরদী ও মনোযোগী হন, তাহলে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের রেজাল্টও আরো ভাল হবে।পাঠ্যপুস্তক উৎসব ২০১৫ উপলক্ষে মতিঝিল সরকারী বালক বিদ্যালয়কে নানা রঙের বেলুন ও কাপড় দিয়ে বর্ণিল সাজে সজ্জিত এবং লালগালিচা বিছিয়ে অতিথিদের স্বাগত জানানো হয়েছে। স্কুল জুড়েই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উৎসব আমেজে মেতে উঠতে দেখা গেছে। শিক্ষার্থীদের ব্যান্ডের তালে তালে দুই মন্ত্রী লাল ও হলুদ রঙের গ্যাস বেলুন উড়িয়ে উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এ সময় মাঠভর্তি শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ হাতের বই শূন্যে উঁচিয়ে ধরে। তখন আকাশে উড়তে থাকে ঝলমলে কাগজের টুকরো।
নতুন বছরের কারিক্যুলামে এবারই প্রথম ৮ম শ্রেণীতে কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা এবং ৯ম শ্রেণীতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ও ক্যারিয়ার শিক্ষা বিষয় চালু করা হয়েছে। জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে জাতীয় শিক্ষাক্রমের সাথে মাদ্রাসা স্তরের বইয়ের সঙ্গতিবিধান এবং ইবতেদায়ী স্তরের সকল বই ৪ রঙে মূদ্রণ করা হয়েছে।