৫শ ফুট গভীর কুয়ায় জীবিত শিশু জিয়াদ : রেলের উপ-সহকারী প্রকৌশলী বরখাস্ত
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ রাজধানীর খিলগাঁও রেলওয়ে কলোনিতে চার বছরের একটি শিশু (জিয়াদ) ওয়াসার নির্মাণাধীন প্রায় পাঁচশ ফুট গভীর কুয়ায় পড়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা মনে করছেন বাচ্চাটি এক ফুট ব্যাসের পাঁচশ ফুট পাইপের তিনশ ফুট নিচে আটকে আছে। তবে বাচ্চাটি নিচে কি অবস্থায় রয়েছে তা জানা ও দেখার জন্য রবিবার রাত বারটার দিকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ক্যামেরা নিয়ে আসা হয়েছে ঘটনাস্থলে। পানির পাম্পের গর্তে শিশু পড়ে যাওয়ার ঘটনায় সেখানকার প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেলওয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমকে বরখাস্ত করা হয়েছে। একইসঙ্গে প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এসআর হাউসকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনে জাহাঙ্গীর আলম ও মেসার্স এসআর হাউসের বিরুদ্ধে শুক্রবার রাত ১০টার কিছু আগে এ সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে।
রঁশির সাহায্যে ক্যামেরাটি কুয়ার ভেতরে পাঠানো হয়। তবে চারশ ফুট নিচে নামিয়েও শিশুটিকে দেখা যায়নি বলে জানা গেছে। এর আগে শিশুটি যাতে ভয় না পায় সে জন্য ভিতরে লাইট দেয়া হয়েছে। উৎসুক জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে কয়েকদফা মৃদু লাঠিচারজ করে পুলিশ। জিয়াদরা দুই ভাই। এর মধ্যে জিয়াদ ছোট। তার বাবার নাম নাসির উদ্দিন।
নাসিরের সহকর্মী আবদুল খালেক শুরু থেকেই সরাসরি উদ্ধার অভিযানে যুক্ত আছেন। তিনি জানান, এই গভীর নলকূপে উপরের দিকে ১৪ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ আছে ৩০ ফুট গভীর পর্যন্ত। তারপর রয়েছে মোটর ও ছাঁকনি। পাম্পের নিচ থেকে তিন ইঞ্চি ব্যাসের আরেকটি সরু পাইপ ৩০০ ফুটের বেশি নিচে চলে গেছে। মাঝখানে ওই পাম্পের ওপরই জিহাদ রয়েছে বলে জানান খালেক।
এর বশির আহমেদ নামের স্থানীয় একজন যুবক স্বেচ্ছায় নিচে যেতে সম্মত হয়েছিলেন। রানা প্লাজায় উদ্ধার অভিযানে ও কাজ করেছিলো বশির। একথা জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা। বশির জানান, আমি আমার স্ত্রী সন্তানের অনুমতি এবং দোয়া নিয়েছি। আমি মানুষের সেবায় কাজ করতে চায়। তিনি যমুনা ফিউচার পার্কে চাকুরী করেন। এবং উদ্ধার বিষয়ে তার প্রশিক্ষন রয়েছে বলেও জানান বশির আহমেদ। তবে নিরাপত্তাজনিত সমস্যার কারবে বশিরকে নিচে নামানো হয়নি বলে জানা গেছে।
এর আগে শিশুটিকে টেনে তোলার জন্য নানা পদ্ধতি প্রয়োগের চেষ্টা করলেও শিশুটির বয়স কম হওয়ায় তাতে তারা সফল হয়নি। প্রথম থেকেই চার বছরের শিশুটিকে জীবিত উদ্ধারের সব রকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ।উদ্ধারে নানা সময় কৌশল বদল করা হচ্ছিল। তবে আশার কথা হচ্ছে রাত ১১টায় এই প্রতেবেদন লেখার সময় শিশুটি জীবিত আছে বলে দাবি করা হচ্ছে।ভেতরে শিশুটির জন্য খাবার পাঠানো হয়েছে।দেয়া হয়েছে অক্সিজেনও।
রাত সাড়ে ৮ টায় দমকল বাহিনীর সদস্যরা একটি ক্রেন নিয়ে আসে। নিয়ে আসা হয় মইও। এই ক্রেন দিয়েই ছোট পাইপটিতে টেনে তোলা হচ্ছে।এদিকে কুয়ার নিচে পানি রয়েছে কি না বা থাকলেও কি পরিমাণ পানি রয়েছে তা জানা যায়নি। কুয়ার ভেতরে লাইট ফেলে শিশুটিকে শনাক্ত করার পাশাপাশি ভিতরে আলো ফেলার চেষ্টা চলছিল।
ঘটনাস্থলের চারপাশে হাজার হাজার কৌতুহলী মানুষ ভিড় করেছে। তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদেরকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। মোতায়েন করা হয়েছে র্যাবও। পথম থেকে শিশুটিকে ওঠানোর জন্য ফায়ার সার্ভিস যে “রশি প্রযুক্তি” ব্যবহার করেছে তা খুবই পুরোনো।তবে রশি দিয়ে ওঠানোর চেষ্টা থেকে তারা সবে এসেছে। এরই মধ্যে প্রায় ছয় ঘণ্টা পার হয়ে গেছে, শীতের রাতে এ অবস্থায় শিশুটি কতক্ষণ বেঁচে থাকবে তা নিয়ে সংশয় রয়েই গেছে। তবে উদ্ধার কাজে নিয়োজিত সবাই আশাবাদী।শিশুটির একটি দরিদ্র্য পরিবারের সন্তান।
তবে ফয়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে রশি ফেলা হলেও শিশুটি রশি ধরে উপরে ওঠার চেষ্টা করলেও শিশুটি তা বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারছিল না।প্রথম দিকে বেশ কিছুটা তাকে উপরে নিয়ে আসা হলেও শেষে তা কাজ হয়নি। বাচ্চাটি আবার নিচে পড়ে যায়।
শুক্রবার বিকাল ৪ টায় খেলা করার সময় শিশুটি খিলগাঁও রেলওয়ে কলোনির নির্মাণাধীন পানির পাম্পের কুয়ায় পড়ে যায়। প্রথমে স্থানায় লোকজন শিশুটিকে উদ্ধারের চেষ্টা চালালেও তাতে তারা সুবিধা করতে না পেরে প্রশাসনকে খবর দেয়া হয়।খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দ্রুত ঘটনা্স্থলে ছুটে যায়।
ঘটনাস্থলে পৌঁছেই শিশুটিকে রশি ফেলে উদ্ধারের চেষ্টায় নিয়োজিত হয় ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। সন্ধ্যা আট টায় এই প্রতিবেদন লেখার সময়ও নিচ থেকে শিশুটির সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল। দঁড়ি দিয়ে শিুশুটিকে উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
ঘটনাস্থলে পুলিশ রয়েছে।কুয়াটি এতোটাই সরু যে কুয়ার ভেতরে দুই জন মানুষের একত্রে ঢোকা সম্ভব নয়।ফলে ফায়ার সার্ভিসের প্রশিক্ষিত কর্মীরা দঁড়ি দিয়েই বাচ্চাটিকে জীবীত উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।