মুখ সংযত করেন ভাষা সুন্দর করেন : হাসিনাকে খালেদা
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, মুখ সংযত করেন। ভাষা সুন্দর করেন। খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ততদিন দেশের অবস্থা খারাপ হবে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশ পিছিয়ে যাবে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে নব্বইয়ের ডাকসু ও ছাত্রঐক্যের কনভেনশনে দেওয়া প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। ছেলে তারেক রহমানকে নিয়ে হুঁশিয়ারির পাল্টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভাষা সংযত করতে বলেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থেকে শেখ হাসিনার বিভিন্ন মন্তব্যের সমালোচনা করে এক সভায় তিনি বলেন, যা বলেন….নিজের জিহ্বা ঠিক করেন, নিজের মুখটা সামাল দেন। বঙ্গবন্ধুকে রাজাকার বলা ছাড়াও আওয়ামী লীগকে নিয়ে তারেকের বিতর্কিত বিভিন্ন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় শেখ হাসিনা বুধবার বলেছিলেন, কুপুত্রকে জিভ সামলে কথা বলতে বলবেন। নইলে বাংলার মানুষ সহ্য করবে না, বিশ্ববাসীও মেনে নেবে না।এর একদিন বাদেই ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘৯০’র ডাকসু এবং সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের’ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত কনভেনশনে পাল্টা বাক আক্রমণ চালান খালেদা জিয়া।
গত ১৫ ডিসেম্বর লন্ডনে বিএনপির এক অনুষ্ঠানে বক্তব্যে বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে রাজাকার’ বলেন। এর আগেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিতর্কিত বক্তব্য দেন তিনি।এজন্য তারেককে অশিক্ষিত জানোয়ার আখ্যায়িত করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, লেখাপড়া শেখেনি, জানোয়ারের মতো কথা বলে। জানোয়ারের শিক্ষা কিভাবে দিতে হয়, মানুষ তা জানে।
দেশের আইন-শৃঙ্খলাসহ সার্বিক অবস্থা খারাপ বলে মন্তব্য করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, দেশ একটি কঠিন সময় পার করছে। মধ্যপ্রাচ্যে কোনো লোক যাচ্ছে না। তাই কোনো বিনিয়োগ হচ্ছে। খালেদা জিয়া বলেন, দেশের অবস্থা হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, হত্যা, খুন ও গুম।এছাড়া শেখ হাসিনার কথার জন্যও দেশের অবস্থা খারাপ হচ্ছে জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ছাত্রলীগ, যুবলীগের পাশাপাশি আপনার জিহ্বা সামলান। তাছাড়া দেশে কোনো বিনিয়োগ হবে না। জিয়াউর রহমানের নীতি, আদর্শ অনুস্মরণ করাও আহ্বান জানান বিএনপি চেয়ারপার্সন।
দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাও খারাপ উলেখ করে খালেদা বলেন, অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘ব্যাংক দেওলিয়া হয়ে গেছে। দেওলিয়া হওয়ার কারণ আওয়ামী লীগ অর্থ নিয়ে গেছে। অযোগ্য, অদক্ষদের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসানো হয়েছে বলে এমন হয়েছে। ফলে দেশের অর্থনীতি খুবই খারাপ জায়গায় গেছে।দেশ পরিচালনা করতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন খালেদা। আওয়ামী দেশকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগের অবহেলার কারণে সুন্দরবনে মহা বিপর্যয় ঘটেছে। সেখানে আজ গাছ, পশু-পাখিসহ নানা প্রাকৃতিক মারা যাচ্ছে এবং ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, অর্থনৈতিক কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, তারা জন সমাবেশ দেখলে, গঠনতান্ত্রিক রাজনীতি দেখলে, ন্যায্য দাবিতে আন্দোলন দেখলে ভয় পায়। তাই তারা নির্বিচারে মানুষ হত্যা, গুম ও খুন করে। এছাড়া অশালীন মন্তব্য করেন। তাই মুখ ও ভাষা সংযত করে গঠনতান্ত্রিক রাজনীতি করুন।
পুলিশকে লক্ষ করে খালেদা বলেন, আপনারা জনগণের সেবক। কিন্তু আওয়ামী লীগ অবৈধভাবে’ ক্ষমতায় জেঁকে বসেছে। তাই তাদের কথায় স্বাধারণ জনগণের বুকে গুলি করা বন্ধ করেন। কারণ যাদের আপনি গুলি করছেন তাদের মধ্যে কেউ আপনার মেয়ে, ভাই, বোন বা ছেলে হতে পারে।
গুম, খুন এখনও বন্ধ হয়নি জানিয়ে খালেদা জিয়া আরো বলেন, র্যাব পেশাদার খুনিতে পরিণত হয়েছে। রিমান্ডে তারা স্বীকার করেছেন তারা হুকুম অনুযায়ী কাজ করেছেন। জনগণ জানতে যায় কারা হুকুম দিয়েছে।
নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে নির্বাচনের আহ্বান জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, জনগণের ওপর যদি অ াস্থা থাকে তাহলে নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে নির্বাচন দিন। গুম, খুন, হত্যা বাদ দিয়ে জনগণের মতমতের অধিকার দিন।
অন্যথায় যেকোনো সময় আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে। আর সেই আন্দোলনে অংশ নিতে হামলা, মামলাসহ সব প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে রাজপথে নামার জন্যও আহ্বান জানান খালেদা। দেশের অবস্থা খুবই খারাপ জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, দেশকে রক্ষার জন্য, দেশে গুম, খুনের আতঙ্ক দূর করা জন্য আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। এজন্য সব জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি সব রাজনৈতিক দলকেও আন্দোলনে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। বাংলাদেশে বিচার বিভাগ বলে কিছু নেই। বিচার বিভাগ এখন আওয়ামী লীগের পকেটে বলে মন্তব্য করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগের জন্য বিচার এক, আর বিরোধীদলের জন্য বিচার আরেক। এখন বিচারপতিরা চেহারা দেখে বিচার করেন। আওয়ামী লীগের সব মামলা শেষ হয়ে যায় কিন্তু বিএনপির মামলা শেষ হয় না।
এ সময় পূর্বে দায়ের করা শেখ হাসিনার সব মামলা আবার পুনরুজ্জীবিত করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। বঙ্গবন্ধুকে রাজাকার আখ্যায়িত করে আবার খবরের শিরোনাম হওয়া বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ‘অশিক্ষিত জানোয়ার বলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।তারেকের সত্য ভাষণে সরকারের গায়ে ‘জ্বালা’ ধরেছে মন্তব্য করে সরকার প্রধানকে ‘সংযত হয়ে’ কথা বলার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।াকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ও সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের উদ্যোগে রাজধানীতে শুরু হওয়া ছাত্র কনভেনশনের উদ্বোধনী বক্তব্যে ফখরুল এ মন্তব্য করেন। ছয় বছর ধরে লন্ডনে থাকা তারেক রহমান এর আগেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাবা জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক, ‘বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি’ আর বঙ্গবন্ধুকে ‘অবৈধ প্রধানমন্ত্রী’ বলে সমালোচিত হন।
সবশেষ গত সোমবার লন্ডনে বিজয় দিবসের এক আলোচনা অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক বঙ্গবন্ধুকে রাজাকার বলেন।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বুধবার এক অনুষ্ঠানে তারেকের কড়া সমালোচনা করে তাকে সামলাতে খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, লেখাপড়া শেখেনি, জানোয়ারের মতো কথা বলে। জানোয়ারের শিক্ষা কীভাবে দিতে হয়, মানুষ তা জানে। মানুষের কাছ থেকে জানোয়ার যে শিক্ষা পায়, তাই দেওয়া উচিৎ এবং মানুষ তা দেবেও। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ফখরুল বলেন, গতকাল আওয়ামী লীগ সভানেত্রী তারেক রহমান সম্পর্কে কি ভাষায় কথা বলেছেন, কেন তাদের জ্বালা লেগেছে।তারেক রহমান ইতিহাস থেকে সত্য কথা তুলে ধরেছেন বলে আপনাদের জ্বালা ধরেছে। আমরা বলতে চাই, ইট মারলে পাটকেল তো খেতে হবে।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কঠোর সমালোচনার পাশাপাশি মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা যখন মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক জিয়াউর রহমান ও তার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ সম্পর্কে কটাক্ষপূর্ণ কথা বলেন, তখন ইতিহাসের সত্য কথা প্রকাশিত হবেই। আপনারা কাকে রাজাকার বলছেন? মুক্তিযুদ্ধের উপ-অধিনায়ক একে খন্দকারকে রাজাকার বলছেন। কেবল তাই নয়, প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ সাহেবকে নিয়ে নানা রকম কটাক্ষ করছেন। এভাবে স্বাধীনতার নায়কদের আপনারা অপমান করছেন।প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে ফখরুল বলেন, এভাবে কথা বলা বন্ধ করুন। আপনাদের কথা বলার ক্ষেত্রে সংযত হওয়া উচিত। আমরা বলব, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী সঠিকভাবে কথা বলবেন।
সরকারের দমননীতির’ সমালোচনা করে তিনি বলেন, নব্বইয়ে ছাত্রদের বুকের তাজা রক্তে গণতন্ত্র ফিরে এসেছিল। সেই গণতন্ত্র আজ নির্বাসিত। এই গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে অনেক ছাত্র গুম-খুনের শিকার হয়েছে। দেশটাকে সরকার কারাগারে পরিণত করেছে।’
এ অবস্থা থেকে উত্তরণে ছাত্র সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান তিনি।বক্তব্যের শুরুতে মির্জা ফখরুল পাকিস্তানের পেশোয়ারে তালেবানদের গুলিতে একটি স্কুলে শতাধিক শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় শোক ও নিন্দা জানান।ডাকসুর সাবেক ভিপি ও বর্তমানে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আমান উলাহ আমানের সভাপতিত্বে ও খায়রুল কবীর খোকনের পরিচালনায় কনভেনশনে নব্বইয়ের সাবেক ছাত্র নেতারা উপস্থিত রয়েছেন।
আমান দাবি করেন, সারাদেশের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধিরা এই কনভেনশনে অংশ নিচ্ছেন।ছাত্র কনভেনশনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, নব্বইয়ের চেতনায় যেভাবে স্বৈরাচার এরশাদকে বিদায় করা হয়েছে, ঠিক সেভাবে নব্য স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে অপসারণ করে জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতেই এ কনভেনশন।
১৯৯০ সালের ১ অক্টোবর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনেই তৎকালীন ডাকসু ও সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের উদ্যোগে ছাত্র কনভেনশন হয়, খালেদা জিয়া যাতে প্রধান অতিথি ছিলেন। ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি শামসুজ্জামান দুদু, শহিদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, তৎকালীন ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিব, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মুস্তাফিজুর রহমান বাবুল, জাগপা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি খন্দকার লুৎফুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আসাদুর রহমান খান, গণতান্ত্রিক ছাত্র ঐক্যের সাবেক সভাপতি সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, ডাকসুর সাবেক এজিএস নাজিমউদ্দিন আলম প্রমুখ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।