‘মতিঝিলে নিহত’ হেফাজত কর্মী ২০ মাস পর জীবিত

Al Farukসুরমা টাইমস ডেস্কঃ মতিঝিলে হেফাজতকাণ্ডের পর থেকে ‘নিখোঁজ’ ঢাকার এক মাদ্রাসা ছাত্রের সন্ধান মিলেছে চট্টগ্রামে। পরিবারের ধারণা ছিল মোহাম্মদ আল ফারুক নামের ১৭ বছর বয়সী ওই কিশোর গত বছর ৫ মে শাপলা চত্বরেই নিহত হয়েছে। চট্টগ্রামভিত্তিক ধর্মীয় সংগঠন হেফাজতে ইসলামের করা নিখোঁজের তালিকাতেও তার নাম ছিল। সেই ফারুককেই গত বুধবার রাতে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের গণি বেকারী সংলগ্ন মিসকিন শাহ মাজারে খুঁজে পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। কুমিল্লার মুরাদনগর থানার সোলেমান বিন মোবারকের ছেলে ফারুক চার ভাই দুই বোনের মধ্যে দ্বিতীয়। গত বছর নিখোঁজ হওয়ার আগে ঢাকার বাড্ডা এলাকার উন্মুল কোরা একাডেমিতে পড়তেন তিনি। পরিবারের সদস্যরা পুলিশকে জানিয়েছিল, শাপলা চত্বরে হেফাজতের সেই সমাবেশে অংশ নেওয়ার পর থেকেই তিনি নিখোঁজ ছিলেন। তবে ফিরে আসার পর ফারুক বলেছেন, ওই সমাবেশের দিন কুমিল্লার মুরাদনগরে বাড়িতেই ছিলেন তিনি।
নিজেকে হেফাজতে ইসলামের সমর্থক এবং সংগঠনটির আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর ‘ভক্ত’ বললেও সেদিন ওই সমাবেশে তিনি যাননি বলে জানিয়েছেন। ওইদিন মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করে হেফাজতে ইসলাম। তাদের সমাবেশ চলাকালে দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত পল্টন, বায়তুল মোকাররম, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ ও মতিঝিলে ব্যাপক ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। সন্ধ্যায় নির্ধারিত সময় পার হওয়ার পরেও সমাবেশ শেষ না হওয়ায় গভীর রাতে সেখানে অভিযান চালিয়ে হেফাজত কর্মীদের সরিয়ে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ওই অভিযানে বহুসংখ্যক মানুষের প্রাণহানি হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয় হেফাজত ও বিএনপির পক্ষ থেকে। তবে ওই অভিযোগ অস্বীকার করে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, অভিযানের সময় কেউ নিহতও হননি।
চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের এসআই সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে পরিবারের সাথে কোনো যোগাযোগ রাখেনি ফারুক। এ কারণে পরিবারের সদস্যদের ধারণা হয়েছিল সে ওইদিনই মারা গেছে। গত ৩১ অগাস্ট ফারুক অপরিচিত একটি নম্বর থেকে তার মাকে ফোন করে জানান, তিনি ভাল আছেন। এরপর আবার তিনি নিরুদ্দেশ হন। ওই ফোন পাওয়ার পর ফারুকের বাবা মোবারক কুমিল্লার চান্দিনা থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেন। এরপর গোয়েন্দা পুলিশ মিসকিন শাহ মাজার থেকে ফারুককে উদ্ধার করে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে তাকে চট্টগ্রাম গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ফারুক বলেন, মাদ্রাসার কঠিন পড়ালেখা ভালো লাগত না বলে গত বছর তিনি বাড়ি থেকে পালান। চট্টগ্রামে এসে প্রথমে যান জেইল রোডের শাহ আমানতের মাজারে। তোবারক খেয়ে রাতে মাজারের বারান্দাতেই ঘুমাতেন।
এরপর চট্টগ্রামের বিভিন্ন মাজারে ঘুরে ঘুরে এতদিন পার করেছেন জানিয়ে ফারুক বলেন, মাদ্রাসার পড়ালেখা ভাল লাগত না। আব্বা-আম্মা বকা দেবে, তাই বাড়িতে ফিরিনি। তবে চট্টগ্রামে হেফাজতে ইসলামের কারও সাথে যোগাযোগ ছিল কি না জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর দেননি এই কিশোর। ৫ মে ঢাকায় হেফাজতের সমাবেশে যাননি দাবি করে তিনি বলেন, আমি শফী হুজুরকে টেলিভিশন আর পত্রিকায় দেখেছি, সরাসরি কখনো দেখিনি।
হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, শাপলা চত্বরের ঘটনায় নিখোঁজ হেফাজতকর্মীদের তালিকায় ফারুকের নামও ছিল। এসআই সন্তোষ চাকমা বলেন, আমরা নিশ্চিত, ফারুক শাপলা চত্বরের সমাবেশের পর থেকেই নিখোঁজ। কিন্তু সে একেক সময় একেক রকম কথা বলছে। ফারুক দেড় বছর ধরে চট্টগ্রামে মাজারে মাজারে ঘুরে কী করেছে- সে খোঁজও নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। ফারুকের মামা মো. ফয়জুল্লাহ বলেন, পড়ালেখার ভয়েই বাড়ি থেকে পালিয়ে সে আত্মগোপনে ছিল।