জেএমবির নারী শাখার প্রধানসহ আটক ৪ : ১৬ দিনের রিমান্ড

‘নারীদের জঙ্গী প্রশিক্ষণের সমন্বয় করতেন ফাতেমা’

Fatema JMB 2সুরমা টাইমস ডেস্কঃ জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ-জেএমবির নারীর শাখার প্রধান ফাতেমাসহ ৪ জনকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, ফাতেমা আক্তার (২৫) নামের ওই নারী জেএমবির মহিলা শাখার প্রধান। তার সঙ্গে আরো তিনজনকে শনিবার রাতে সদরঘাট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরা হলো, আবদুল্লাহ কাজী, মো. ইশরাত আলী শেখ ও মো. শওকত সরদার। তাদের কাছ থেকে বেশ কিছু জিহাদি বই, বিস্ফোরক ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয় বলেও জানান তিনি। আটক ৪ জনকে বিস্ফোরক ও সন্ত্রাস বিরোধী দুটি মামলায় ১০ দিন করে মোট ২০ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন গোয়েন্দা ও অপরধা তথ্য বিভাগের (দক্ষিণ) পুলিশ পরিদর্শক মো. আনোয়ার হোসেন।
মহানগর পুলিশের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ওই চারজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে বিস্তারিত জানান যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম।
Fatema JMBতিনি বলেন, ফাতেমা বর্ধমান বিস্ফোরণের সময় ‘তার স্বামীর সঙ্গে ঘটনাস্থলের পাশেই’ অবস্থান করছিলেন। শিমুলিয়ায় এক মাদ্রাসায় তিনি জঙ্গি প্রশিক্ষণও দিতেন। বাকি তিনজন জেএমবিতে যোগ দেয় ২০০৪-০৫ সালে। ২০০৫ সালে তারা গোপালগঞ্জে ব্র্যাক ব্যাংক ডাকাতিতে অংশ নিয়ে গ্রেপ্তার হয়। সে সময় সাজিদও তাদের সঙ্গে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।
২০১১ সালে জামিনে মুক্ত হওয়ার পর থেকেই তারা পলাতক ছিলেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। গত ২ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের খাগড়াগড়ে কথিত জঙ্গি আস্তানায় বিস্ফোরণে দুজন নিহত হওয়ার পর তাতে বাংলাদেশের জঙ্গিদের সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়ার কথা জানায় ভারতের গোয়েন্দারা।
এরপর ভারতের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ওই ঘটনার মূল সন্দেহভাজন হিসেবে সাজিদ ওরফে শেখ রহমাতুল্লাহ নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে। বলা হয়, তার বাড়ি বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার ফরাজীকান্দায়।
ভারতের গণমাধ্যমে সাজিদের নারায়ণগঞ্জের বাড়ির খুঁটিনাটি প্রকাশের পর ১০ নভেম্বর রাতে র‍্যাব-১১ নারায়ণগঞ্জের ফরাজীকান্দা এলাকায় গিয়ে একজনকে গ্রেপ্তার করে, যার নাম মোনায়েম হোসেন মনা। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি মনাই যে সাজিদের ভাই- সে বিষয়ে তারা মোটমুটি নিশ্চিত।
অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন বলেন, ফাতেমা বর্ধমান বিস্ফোরণের পর ভারতের ঝাড়খণ্ডে পালিয়ে ছিলেন। পরে তিনি পালিয়ে বাংলাদেশ আসেন।
পুলিশের সংবাদ সম্মেলনে মনিরুল ইসলাম বলেন, ভারতের শিমুলিয়ায় এক মাদ্রাসায় তিনজন নারী জেমবির নারী সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিতেন, তাদের মধ্যে ফাতেমা একজন। তিনিই ওই প্রশিক্ষণের সমন্বয় করতেন। ওই মাদ্রাসায় দরিদ্র মেয়েদের পড়াশোনার পাশাপাশি খাওয়া দাওয়ারও ব্যবস্থা ছিল। তাদের মধ্যে যারা চৌকস, তাদের জেএমবিতে যুক্ত করতেন ফাতেমা।
মনিরুল অারো বলেন, ওই মাদ্রাসায় শারীরিক শিক্ষার পাশাপাশি এয়ারগান দিয়ে অস্ত্রচালনা শেখানো হতো বলে তারা জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পেরেছেন। সেখানে অন্তত ২৫ জন নারী প্রশিক্ষণ নিয়েছে। এর মধ্যে ছয়জন বাংলাদেশি, বাকিরা ভারতীয়। সবাই এখন পলাতক।
সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে এসে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থার (এনআইএ) কর্মকর্তারা যেসব পলাতক জঙ্গির বিষয়ে কথা বলেছেন, তাদের কারো সঙ্গে ফাতেমা বা তার সঙ্গে আটকদের যোগাযোগ ছিল কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান মনিরুল।
পুলিশের আনুষ্ঠানিক বক্তব্যে শনিবার রাতে ফাতেমাকে গ্রেপ্তারের কথা বলা হলেও ডিবি সূত্রের বরাত দিয়ে শুক্রবারই কয়েকটি পত্রিকার খবরে ওই নারীকে আটকের খবর জানানো হয়।
একটি পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, পুলিশ বৃহস্পতিবার রাতে কেরানীগঞ্জের একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ফাতেমাকে আটক করে, যিনি গত ৮ নভেম্বর সাজিদের গ্রেপ্তারের পরপরই সন্তানসহ সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসেন এবং এক আত্মীয়র বাসায় আত্মগোপন করেন।
একাধিক পত্রিকার খবরে বলা হয়, সম্প্রতি ঢাকা সফরে আসা ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থার (এনআইএ) কর্মকর্তাদের দেয়া তথ্য ও মোবাইল নম্বরের ভিত্তিতেই ফাতেমাকে আটক করতে অভিযান চালানো হয়।
গত সপ্তাহে এনআইএর কর্মকর্তারা বাংলাদেশে এলে বর্ধমানে বিস্ফোরণের ঘটনায় সন্দেহভাজন কয়েকজনসহ ১১ সন্ত্রাসীর একটি নামের তালিকা তারা র‍্যাবকে দেন। অন্যদিকে র‍্যাব ভারতে পালিয়ে থাকা ১০ জঙ্গিসহ ৫১ অপরাধীর একটি তালিকা ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থাকে দেয়। একইভাবে পুলিশের সঙ্গেও নামের তালিকা বিনিময় করেন ভারতীয় গোয়েন্দারা।