শাবিতে যৌন হয়রানি : ছাত্রীদের গোসলের ভিডিও ধারণ : আন্দোলন অব্যাহত
সুরমা টাইমস ডেস্কঃ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের কর্মচারী কর্তৃক এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির ঘটনায় এবার ওই বিভাগের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। যৌন হয়রানীর শিকার ছাত্রীকে কুটুক্তিকারী শিক্ষক নাাছির উদ্দিন ছাড়াও বিভাগের আরো কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার দুপুরে যৌন হয়রানির দায়ে অভিযুক্ত কর্মচারীর আবু সালেহ’র বহিষ্কার, ছাত্রী সম্পর্কে কটুক্তকারী শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক নাছির উদ্দিনের বহিষ্কার, বিভাগীয় প্রধান পদ থেকে আনোয়ারা বেগমের পদত্যাগের দাবিতে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১২টার দিকে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবন সম্মুখে এ মাননবন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জাহানারা ইমাম হল ও সিরাজুন্ন্ছো হলের আবসিক ছাত্রীদের ব্যানারে লোকপ্রশাসন বিভাগসহ কয়েক শতাধিক সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা অংশ নেয়। পরে একই স্থান থেকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিল শেষে তারা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ধারাবাহিক আন্দোলনের ঘোষণা দেন।
সূত্র জানায়,অভিযুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর শাস্তির দাবিতে শিক্ষার্থীরা ২ এপ্রিল থেকে আন্দোলনে নামেন। তাদের দাবির মুখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ হতে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিভাগে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত সব ধরণের ক্লস পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করে।
এদিকে সহকারী অধ্যাপক নাছির উদ্দিনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানীর অভিযোগ ছাড়াও বিভাগের আরো কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ করেছে লোক প্রশাসনের শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা জানায়,সহকারী অধ্যাপক সামিউল ইসলাম ও মাহমুদ হাসান শিক্ষার্থীদের সাথে দূর্বব্যবহার, নাম্বার প্রদানে পক্ষপাতিত্ব,ক্লাসে ছাত্রীদের দাঁড় করিয়ে তাচ্ছিল্য করা, ও ভাইভা পরিক্ষায় বিভিন্ন কুটুক্তি করার অভিযোগ রয়েছে। সেমিনার পেপার প্রেজেন্টটেশনের নামে তাদের নানাভাবে হয়রানি করা হয়। তাদের এমন অত্যাচারে বিভাগের এক ছাত্রী আত্মহত্যারও উদ্যোগ নিয়েছিলেন বলে জানা গেছে। এছাড়া অনেক শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবনও হুমকির মুখে পড়েছে । তারা নিয়মিত ক্লাস না নিয়ে শিক্ষার্থীদেরকে এসাইনমেন্ট গ্রুপ করে প্রেজেন্টেশন নিয়েই ক্লাস শেষ করেন বলেও শিক্ষার্থীরা জানায়। এছাড়া একই সাথে বিভাগের অপর শিক্ষক শাহজাহান চৌধুরীর বিরুদ্ধেও রয়েছে নানা অভিযোগ। আর তাদের নেতৃত্বে রয়েছেন বিভাগের প্রধান আনোয়ারা বেগম।
সোমবার এসব বিষয় নিয়ে শাবি ভিসি প্রফেসর ড. আমিনুল হক ভুঁইয়া, প্রক্টর হিমাদ্রি শেখর রায় ও রেজিষ্ট্রার ইশফাকুল হোসনের কাছে বিভাগের শিক্ষকদের নানা নির্যাতনের কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন ছাত্রীরা। এসময় শিক্ষকরাও চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। বিষয়টি নিয়ে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
ছাত্রীরা জানান, সম্প্রতি ট্যুরে গিয়ে তাদের সঙ্গে লোক প্রশাসন বিভাগের দুই শিক্ষক নাছির উদ্দিন ও শাহজাহান চৌধুরী আপত্তিকর আচরণ করেছেন। সেখানে মেয়েদের গোসলের ছবি ভিডিও ও ছবি তুলেন শিক্ষক নাছির উদ্দিন ও শাহজাহান চৌধুরী। এছাড়াও ওই দুই শিক্ষক দুপুরে মেয়েদের ঘুমন্ত অবস্থায় তাদের কক্ষে উঁকি মারতেন এবং অনুমিত না নিয়ে কক্ষে প্রবেশ করার অভিযোগ তুলেছেন ছাত্রীরা। শুধু তাই নয় শিক্ষার্থীরা সী বীচে গ্রুপ ছবি তুলার সময় তীর্যক ও আপত্তিকর মন্তব্য ছুড়তেন নাছির উদ্দিন ও শাহজান চৌধুরী।
এছাড়াও শিক্ষা সফরের সময় মেয়েদের মোবাইল কেড়ে নিয়ে দুইদিন আটক রেখেছিলেন ওই দুই শিক্ষক। এসময় তাদের মোবাইলে কি এসএমএস আসে তাও দেখতেন। ছেলেদের এসএমএস আসলে মেয়েদেরকে নানাভাবে হয়রানি করতেন। এসবের প্রতিবাদ করায় বাধে বিপত্তি। পরে ৭দিনে ট্যুর ৫দিনেই শেষ করে দেয়া হয়। ক্যাম্পাসে আসার পর শুরু হয় আরেক অত্যাচার। যারা ট্যুরে গিয়েছিলেন তাদের মধ্যে ১৫জনকে নানা কারনে শোকজ প্রদান করা হয়।
এদের মধ্যে ট্যুরে ওই দুই শিক্ষকদের ডাকে সাড়া দেননি এমন ৮ছাত্রীর পরিবারকে ডেকে এনে চরম অপমান করা হয়। পরে এদের মধ্যে এক ছাত্রী আত্মহত্যা করতে উদ্যত হন। ট্যুরে যাওয়া কয়েক ছাত্রীর টার্ম পেপরও আটকে রাখা হয়। তাদেরকে নষ্টা বলে অভিহিত করতেন ওই দুই শিক্ষক। সম্প্রতি লোকপ্রশাসন বিভাগের এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠলে এনিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। বিষয়টি নিয়ে বিচার চাইলে ওই মেয়েকে নষ্টা বলে অভিহিত করেন শিক্ষক নাছির উদ্দিন।
এছাড়া বিভাগের অপর শিক্ষক শাহজাহান চৌধুরী ও বিভাগীয় প্রধান আনোয়রা বেগম বিভিন্নভাবে ওই ছাত্রীর নামে কুৎসা রটাতে থাকেন। এমনকি যৌন হয়রানির বিষয়ে ওই ছাত্রীকেই দোষারোপ করা হয়। বিষয়টি ওই ছাত্রীর সহপাঠীরা জানার পর এনিয়ে শুরু হয় ক্ষোভ। এনিয়ে এখন ক্যাম্পাসে উত্তাল অবস্থা বিরাজ করছে।
এদিকে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে ভিসি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস প্রদান করেছেন। এছাড়া যৌন হয়রানি, আশ্রয়দাতা, প্রশ্রয়দাতা, আপত্তিকর মন্তব্যকারী ও বিভাগের নিরব ভুমিকায় যাদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এব্যাপারে লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রধান আনোয়ারা বেগম সংবাদ মাধ্যমকে জানান যৌন হয়রানির বিষয়ে তার কাছে কেউ কখনও অভিযোগ করেননি। ওই দুই শিক্ষককে তিনি মদদ দিচ্ছেন কিনা বিষয়টি জিজ্ঞাসা করলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। এব্যাপারে লোক প্রশাসন বিভাগের এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর শাহজাহান চৌধুরীকে ফোন করা হলে তিনি বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে উল্লেখ করে ফোন কেটে দেন। অপর শিক্ষক নাছির উদ্দিনের মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া গেছে।