কন্যা সন্তানের মা হলেন রানা প্লাজার সেই রেশমা
ডেস্ক রিপোর্টঃ কন্যা সন্তানের মা হয়েছেন সাভারের রানা প্লাজার ধ্বংস্তুপ থেকে বেঁচে ফেরা রেশমা। চুপিসারে তার প্রেমিক রাব্বিকে বিয়ে করে সন্তান জন্ম দেয়ার পর মেয়ের বিয়ের খবর জানতে পেরেছেন রেশমার মা জোবেদা খাতুন। তবে রাব্বিকে নিয়ে ৬ মাস আগে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট বেরিয়ে গেছেন রেশমা।
সন্তান জন্ম দেয়ার প্রায় ৪০ দিন অতিবাহিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন, রেশমা’র সৎ বাবা আরজন আলী বাবু। তিনি বলেন, সন্তান জন্মের খবর পেয়ে ২২ মার্চ তার স্ত্রী জোবেদা খাতুনসহ তিনি রাজধানীতে অবস্থিত পাঁচ তারকা হোটেল ওয়েস্টিনে গিয়েছিলেন রেশমা ও তার কন্যা সন্তানকে দেখতে।
রেশমার স্বামী রাব্বি একটি প্রাইভেট কোম্পানীতে চাকরি করেন। তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ। চলতি মাসের ২৬ তারিখে রেশমা দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে মায়ের বাড়ি আসবে। সেখানেই নাম রাখা হবে কন্যা সন্তানটির।
রানা প্লাজার সেই ভয়াবহ ট্র্যাজিডির পর পাল্টে গেছে রেশমার জীবনও। এক দরিদ্র পোশাক শ্রমিক জীবন থেকে রেশমা এখন উঠে এসেছেন স্বচ্ছল মধ্যবিত্তদের কাতারে। রাজধানীতে অবস্থিত পাঁচ তারকা হোটেল ওয়েস্টিনে নিজের নতুন কাজও দারুণ উপভোগ করছেন তিনি।
পোশাক কারখানায় আর ফিরে যাবেন না উল্লেখ করে রেশমা বলেন, “আমার এখনকার কাজটা আমার অনেক ভালো লাগে। গার্মেন্টস কারখানায় যে কাজ করতাম, তার ঠিক উল্টো ধরণের কাজ করি এখন। আমার এখনকার কাজ অনেক আরামের আর সম্মানের।”
দুর্ঘটনার পর ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা প্রদান ও পুনর্বাসনের জন্য তহবিল থেকে কোনো ক্ষতিপূরণ নেননি রেশমা। তিনি বলেন, “শুধু প্রধানমন্ত্রী এবং কিছু বেসরকারি উৎস থেকে কিছু টাকা পেয়েছি আমি।”
ইতোমধ্যে পাল্টে গেছে, তাদের বাড়ি’র চিত্র। তিনটি পাকা ঘর তুলেছেন। আরো দু’টি পাকা ঘর তৈরির প্রস্তুতি চলছে। প্রতি মাসে বিকাশের মাধ্যমে মায়ের কাছে টাকা পাঠান রেশমা।
সরকারিভাবে প্রাপ্ত ৫০ হাজার, রানা প্লাজার ৫০ হাজার এবং বাড়ির জমি সংক্রান্ত বিরোধের সমঝোতায় এক ব্যক্তির কাছে প্রাপ্ত ৫০ হাজার এই মোট দেড় লাখ টাকায় ৩টি পাকা ঘর তুলেছেন রেশমার মা। আরো ২টি ঘর তোলার প্রস্তুতি চলছে।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন রেশমা। তাকে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছিল তার পরিবারের লোকজন। পরে প্রায় ১৭ দিন পর রেশমাকে ধ্বংসস্তুপ থেকে উদ্ধার করা হয়।
টানা ১৭ দিন অন্ধকারের ভেতর খাবার ও পানি ছাড়াই বেঁচে থাকার পর সুস্থভাবে ধ্বংসস্তূপ থেকে রেশমার বেরিয়ে আসার ঘটনা পৃথিবীর বুকে জন্ম দিয়েছিল আরেকটি অলৌকিক ঘটনার।
দেশ-বিদেশের মিডিয়ায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিলো এনিয়ে। রেশমাকে নিয়ে বাংলাদেশে চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়েছে “রানা প্লাজা”।
ওই ঘটনা শুধু যে দেশের মানুষকেই তাক লাগিয়ে দিয়েছিল তাই নয়, চমকে উঠেছিল গোটা বিশ্ব। কারণ যে দুর্ঘটনায় এক হাজার ১’শ ৩৮ জন নিহত এবং দুই হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন, সেই দুর্ঘটনার ১৭ দিন পর পর্যন্ত খাবার ও পানি ছাড়া অন্ধকারের মধ্যে থেকে তারপর ধসে পড়া ভবনের নিচ থেকে বেঁচে ফেরাটা সম্ভব নয় কিছুতেই, অন্তত আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান তো তাই বলে। তাই সেদিন রেশমা পেয়েছিলেন ‘অলৌকিক কন্যা’র আখ্যা।