সিলেট বইমেলা শীর্ষ প্রকাশনা অংশ নিলেও বই বিক্রি কম
কাইয়ুম উল্লাস:: মোহাম্মদ আলী জিমনেশিয়ামের ফটকের সামনে এক ঝাঁক স্কুল শিক্ষার্থী। দুজন শিক্ষকের হাত ধরে তারা সিলেট বইমেলায় এসেছে। একে একে মেলায় প্রবেশ করে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে তারা স্টলে স্টলে ঘুরছে। রূপকথার গল্পের বই দেখছে, আবার কেউ কেউ বড় বড় মণিষীর জীবনী সিরিজের বইয়ের পাতা মেলে ধরেছে। ‘ আফ্রিকার রূপকথা’, ‘ডাইনোসরের ডিম’-এসব বই স্কুলের লাইব্রেরি শিক্ষিকা অনামিকা দাশকে দেখানো হচ্ছে। পাশেই শিক্ষক শাহেদ আহমদ রুহেল। তিনি বইয়ের তালিকা তৈরি করছেন। এর আগে শাহেদ ৫০ টি বই কিনেছেন ব্যক্তিউদ্যোগে। এবার স্কুলের লাইব্রেরির জন্য বই কিনতে এসেছেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে।
এই ক্ষুদে ১৩ জন পাঠক সবাই সিলেটের সৈয়দ হাতিম আলী উচ্চবিদ্যালয়ের। বিদ্যালয়টির শিক্ষিকা অনামিকা দাশ জানালেন, বাচ্চাদের নিয়ে মেলায় এসেছেন। তাদের পছন্দের বই কিনে স্কুলের লাইব্রেরিতে তোলা হবে। সেখান থেকে নিয়ে তারা পড়বে। স্কুল শেষে তারা সবাই মেলায় চলে এসেছে। ঘুরছে আর মজার মজার বই দেখছে। ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র সাইফ উদ্দিন তিন গোয়েন্দা বইটি পছন্দ করেছে। সাইফ মেলায় এসে খুব খুশি।
স্কুল শিক্ষার্থীরা খুশি থাকলেও মেলার স্টল মালিকরা খুশি নন। কারণ, ক্রেতা কম। মেলায় বিক্রিবাট্টা নেই বললেই হয়। কেউ কেউ স্টল ফেলে রেখে বাইরে হাওয়া খাচ্ছেন। দু-একজন ক্রেতা মেলায় ঢুকছেন। মেলার এক কোণে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার মঞ্চ থেকে আসা মৃদু সুরের ছন্দের তালে স্টল ঘুরে বই দেখে, তালিকা নিয়ে চলে যাচ্ছেন। অথচ এই মেলায় দেশের শীর্ষ প্রকাশনাসহ ৫১টি স্টল অংশ নিচ্ছে। মেলার কোনো প্রচারণা না হওয়াকেই দোষছেন প্রকাশনা স্টলের বিক্রেতারা।
অন্য প্রকাশের বিক্রেতা হাবিবুর রহমান বললেন, এত বড় একটা মেলা সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে হচ্ছে; কিন্তু প্রচারণা নেই। তাই মেলায় ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় নেই। সকালে এমসি কলেজের এক শিক্ষককে বলে এলাম সিলেটে বইমেলার কথা। তিনি বললেন, মেলার কথা তিনি জানেন-ই না।
আফসারস্ ব্রাদার্সের লিপু জানালেন, মেলার ৫ দিন শেষ, প্রচার নেই; বিক্রিও নেই। মেলায় অংশ নেওয়ার খরচাও তোলা সম্ভব হবে না। আয়োজককে অনেক বলার পর সকালে মেলার ফটকের লাইটিং করিয়েছি।
জয়তী স্টলের প্রকাশক মাজেদুল হাসান বলেন, মেলায় ডেকোরেশন করেই দায়িত্ব শেষ করেছেন আয়োজকেরা। কিন্তু মাইকিং করা হয়নি। নগরীতে যদি এক শ ব্যানার টানানো হতো, তবে কিছু মানুষ জানতেন এখানে মেলা হচ্ছে।
বই বিক্রেতা জসিম উদ্দিন বলেন, সিলেটে সৃজনশীল পাঠক আছেন। শহিদ মিনারের ছোট্ট বই মেলাও ব্যবসাসফল হয়েছে। এখানে ব্যবসা না হওয়ার মূল কারণ দায়সারা আয়োজন।
সিলেট বইমেলার পরিচালক শিহাব উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, জ্ঞানভিত্তিকসমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে সারা দেশে বইমেলার আয়োজন করা হয়েছে। এসব মেলার মাধ্যমে পাড়ায় পাড়ায় সৃজনশীল পাঠক তৈরি করা হচ্ছে। এখানে গান ও কবিতা হয়, কিন্তু মেলায় বই কেনার মানুষ নেই। হয়তো আয়োজনে ঘাটতি আছে; প্রচারণা তেমন হয়নি অথবা সৃজনশীল পাঠকের অভাবের কারণে সিলেট বইমেলা জমছে না।