কানাডার শহরে শহরে নববর্ষের বর্ণিল অনুষ্ঠান

canada (1) সদেরা সুজন, সিবিএনএ কানাডা থেকে।। ‘মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা/ অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা। এসো, এসো, এসো, হে বৈশাখ।’ সকল না পাওয়ার বেদনাকে ধুয়ে মুছে, আকাশ-বাতাস ও প্রকৃতিকে অগ্নিস্নানে সূচি করে তুলতেই আসে বৈশাখ। প্রিয় বৈশাখ, শুভ নববর্ষ এখন আর বাংলাদেশেই সীমাবব্ধ নেই ছড়িয়ে পড়েছে দেশ থেকে দেশান্তরে প্রবাসের শহরে শহরে। বারো মাসে তেরো পার্বণের দেশের প্রাণের অন্যতম ঐতিহ্যবাহি উৎসব বাংলা canada (2)নববর্ষকে নতুন স্বপ্ন, উদ্যম ও প্রত্যাশার আলোয় রাঙানো নতুন বাংলা বছরকে বরণ করে নিলো কানাডা প্রবাসীরা। কানাডার বিভিন্ন প্রদেশের বাঙালি অধ্যুষিত শহরগুলোতে গত শনি ও রবিবার উইকেন্ডে বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে ব্যাপক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানসূচির মধ্যে দিয়ে জাঁকজমকভাবে উদযাপন হয়েছে বাংলা শুভ নববর্ষ ১৪২৩। প্রায় প্রতিটি সংগঠনের আয়োজনে বৈশাখী মেলা, পিঠা-পুলি’র আয়োজন, মনোমুগ্ধকর নাচ, গান, কবিতা আবৃত্তি ও ফ্যাশন শো ছাড়াও ছিলো মঙ্গল শোভাযাত্রা। কানাডার প্রতিটি শহরে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে প্রবাসি বাঙালিদের পাশাপাশি মূলধারার প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা এবং জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতি ছিলো দেখার মতো। জমকালো বৈশাখি রকমারি বর্ণিল অনুষ্ঠানে মানুষের ঢল নামে। এক একটা অনুষ্ঠান মনে হয়েছে মিনি বাংলাদেশ। টরন্টোতে মঙ্গল শাভাযাত্রায় ঠিক বাংলাদেশের মতো নাচে-গানে, ঢাকেঢোলে শোভাযাত্রায় পুতুল, পাখি, বাঘের মুখোশ, পেঁচার মুখোশ, প্রজাপতি, ফুল, মাছ, ফড়িং, পাখির মুখোশ, ঘোড়া, ফুল ও অন্যান্য লোকজ ঐতিহ্য এবং বাংলাদেশ আর কানাডার পতাকা নিয়ে বিপুল সংখ্যাক প্রবাসীরা অংশ গ্রহণ করে।
জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সার্বজনীন উৎসবে নববর্ষ উদযাপনে একসঙ্গে সবাই গেয়েছে ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’।পহেলা বৈশাখে খোঁপা আর বেণীতে ফুল গোঁজে রঙ-বেরঙের শাড়ি, পাঞ্জাবি, ফতুয়া-সালোয়ার-কামিজ পোশাক পড়ে হাতভরা চুড়ি পড়ে সবাই আনন্দে মেথে উঠেছিলো বৈশাখি অনুষ্ঠানে। বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে প্রায় প্রতিটি সংগঠনের উদ্যোগে বিপুল সংখ্যক প্রবাসীদের জন্য ইলিশ মাছ, পান্তাভাত, সাদা ভাত, ডাল, আলুভর্তা, বেগুন ভর্তা, চেপা ভর্তা, ব্রকলি ভর্তা, পায়েস, কাঁঠাল বিচি ভর্তা লাল মরিচ ভাঁজাসহ রকমারি দেশীয় খাবারের আয়োজন করা হয়েছিলো।
টরন্টোতে দুইদিনব্যাপী সব চেয়ে বড় মেলা অনুষ্ঠিত হয় ড্যানফোর্থ-মেইন স্ট্রিস্টস্থ টেড রেভি হকি স্টে রেভি হকি স্টেডিয়ামে। রাসেল রহমান আয়োজিত এই মেলায় পান্তাভাত থেকে শুরু করে নাচ-গান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মেতে উঠে স্থানীয় প্রবাসী বাঙালিরা। মেলায় সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী তপন চৌধুরী, বাদশাহ বুলবুল, জিনাত আরা মুন্নিস ও সিনথিয়া প্রমুখ।
বাংলাদেশ সোসাইটি অব মন্ট্রিয়লের বর্ষবরণও ছিলো আনন্দঘন, অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সাংবাদিক শামসাদ রানা। বাংলাদেশ হিন্দু এসোসিয়েশন অব ক্যুইবেকের অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন শর্মিলা ধর ও শক্তিব্রত হালদার মানু। বাংলাদেশ হিন্দু কল্যাণ সমিতির অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মল্লিকা পাল ও পুলক তরাপদার। এছাড়াও প্রজন্ম বাংলাদেশ, বাংলাদেশ নোয়াখালী এসোসিয়েশন, বৃহত্তর বরিশাল এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ এসাসিয়েশন অব মন্ট্রিয়ল, বিক্রমপুর মুন্সিগঞ্জ এসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন সংগঠন মন্ট্রিয়লে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে বর্ষ বরণের আয়োজন করে। এছাড়াও টরন্টোস্থ সার্বজনীন নববর্ষ উদযাপন কমিটির উদ্যোগে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন, চট্টগ্রাম অ্যাসোসিয়েশন, বিয়ানীবাজার অ্যাসোসিয়েশন, খুলনা অ্যাসোসিয়েশন, সুনামগঞ্জ অ্যাসোসিয়েশন, সিলেট সদর অ্যাসোসিয়েশন, ইউনাইটেড ফোরাম অব কানাডা, হেরিটেজ বিয়োন্ড বর্ডারস, বাংলাদেশি কানাডিয়ান ফাউন্ডেশন, অপ্সরা উইমেনস ক্লাব, নোয়াখালী অ্যাসোসিয়েশন, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী অব কানাডা আয়োজন করেছে বিশাল বৈশাখি অনুষ্ঠান। অটোয়া হাই কমিশন ও সঞ্চারি সংগঠনও আয়োজন করেছে নববর্ষের অনুষ্ঠান।
কানাডার সাস্কাচেওয়ান, ভেঙ্কুবার, হেমিলটনসহ প্রায় প্রতিটি প্রদেশের বিভিন্ন শহরে বাঙালির প্রাণের উৎসব বাংলা নববরর্ষ জাঁকজমকভাবে উদযাপিত হয়েছে। আগামী উইকেন্ডেও রয়েছে বিভিন্ন সংগঠনের নববর্ষের অনুষ্ঠান।