সুনামগঞ্জে হাওরের বাঁধ ভেঙ্গে তলিয়ে গেছে ৫০ হাজার হেক্টর জমির ধান
ডেস্ক রিপোর্টঃ পাহাড়ি ঢল এবং শিলা বৃষ্টিতে বাধ ভেঙ্গে তলিয়ে যাচ্ছে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন হাওরের বোরো ফসল। ইতিমধ্যে বড় বড় হাওরে কৃষকের শ্রমঘামে ফলানো প্রায় ৫০হাজার হেক্টর জমির ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
বাঁধ নির্মানে পাউবোর উদাসিনতার অভিযোগ করেছেন কৃষকরা। এছাড়া জেলা কৃষি বিভাগ ক্ষয়ক্ষতির পরিমান কম দেখাচ্ছেন বলেও অভিযোগ তাদের। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাঁধ রক্ষায় সকলের সহযোগিতা চেয়ে বলা হচ্ছে কিছু কিছু স্থানের বাঁধে নাশকতার কারনে ভেঙ্গেছে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি পহাড়ি ঢলে বাঁধ ভেঙ্গে এবং শিলা বৃষ্টিতে তলিয়ে যাচ্ছে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন হাওরের বোরো ফসল। সুনামগঞ্জ সদর ও দক্ষিন সুনামগঞ্জ উপজেলার দেখার হাওর, জগন্নাথপুরের নলুয়ার হাওর, দিরাই উপজেলার বরাম হাওর, তাহিরপুর উপজেলার শনির হাওরের ফসলরক্ষা বাধ ভেঙ্গে পানি ঢুকছে। এ হাওরগুলোর অন্তত ৫০ থেকে ৬০ হাজার হেক্টর জমির বোরধান এখন সম্পূর্ণ পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
নদ-নদীর পানি দ্রুত বাড়তে থাকায় অন্যান্য হাওরের বাধও ঝুঁকিতে রয়েছে। যে কোন সময় পানি ঢুকে ফসলহানীর আশঙ্কা করছেন কৃষক। কৃষকের পাশাপাশি জেলার সুশিল সমাজের প্রতিনিধিরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন পাউবোর কারনে বাধের এমন অবস্থা তার ওপর নিজেদের বাচাতে জেলা কৃষি বিভাগ ক্ষয়ক্ষতির পরিমান কমিয়ে দেখাচ্ছে।
এদিকে জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম জানান প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়াহয়েছে। বাঁশ, বস্তা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বাঁধের কাজে নিয়োজিত পিআইসি ও ঠিকাদারদের সার্বক্ষনিক বাধে অবস্থানের নির্দেশ দিয়ে হয়েছে। তিনি আরো বলেন গত কয়েকদিন থেকে সব হাওর পাহারা দিয়ে রাখা হচ্ছে। তার পরও কোন কোন বাধে কেউ ইচ্ছাকৃত নাশকতা করে বাধ ভেঙ্গে ফেলছে বলে আমরা ধারনা করছি।
এবিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.আফছর উদ্দিন জানান, বাঁধ উপচে হাওর তলিয়ে যাচ্ছে শ্রমিক না পাওয়ায় ধান কাটতে পারছেন না কৃষক। ফসলহানীর আশঙ্কায় কৃষকরা হাওরের উচু এলাকার ধান দ্রুত কাটার চেষ্টা করলেও শ্রমিক খুজে পাচ্ছেনা। দু একটি হাওরে ওভারফ্লু হয়ে ফাটল দেখা দিচ্ছে বলে দাবি করছেন তিনি।
অপর দিকে জেলা কৃষি সম্প্রশারন অধিদপ্তর সহকারি উপ পরিচালক স্বপন কুমার সাহা জানান, এ পর্যন্ত ২ লক্ষ ২১হাজার হেক্টর জমির মধ্যে ১২হাজার হেক্টর বোর ধান সম্পূর্ণ তলিয়ে গেছে।
কিন্তু কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের এই তথ্যকে মিথ্যা বলছেন স্থানীয়রা। কৃষক ও জনপ্রতিনিধিরা দাবি করছেন জেলায় অন্তত ৫০ থেকে ৬০ হাজার হেক্টও বোর জমির ধান সম্পূর্ণ পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বেসরকারি সংস্থা “হাওর উন্নয়ন সংস্থা (হাউস)” এর প্রধান নির্বাহী সালেহিন আহমেদ চৌধুরী শুভ বলেন জেলায় যে পরিমান ফসলি জমির ক্ষতি হয়েছে তা উঠে আসেনী কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের তথ্যতে।
প্রকৃত তথ্য তারা কমিয়ে দেখান একারনে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প থেকে বাদ পড়ছেন সুনামগঞ্জের কৃষকরা।
মানবাধিকারকর্মী এড.অলক চক্রবর্তী বাপ্পা বলেন, আমাদের ফসলের ক্ষতি হয়েছে কমপক্ষে ৫০ থেকে ৬০ হাজার হেক্টর কিন্তু কৃষি বিভাগ ইচ্ছা করে তার পরিমান কমিয়ে দেখায় তাদের চাকরি বাচাতে, এতে আমাদেও কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে, তারা সরকারি বিভিন্ন সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
ফসল হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা এখন বিলাপ করছেন। একমাত্র ফসল হারিয়ে এই হাওরের কৃষকরা চোখে অন্ধকার দেখছেন।
তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম কামরুল জানান, সোমবার বিকেলে হঠাৎ করেই উপজেলার অন্যতম বড় হাওর শনির হাওরের বাধ ভেঙ্গে পানি ঢুকছে। স্থানীয় কৃষক ও প্রশাসনকে নিয়ে চেষ্টা করা হচ্ছে বাধ মেরামতের। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বাধের কাজ চলছে বলে জানা গেছে।