নগরীর ৩২ ঝুঁকিপূর্ণ ভবনকে সিসিকের নোটিশ, বৃহস্পতিবার থেকে অপসারণ অভিযান

20235ডেস্ক রিপোর্টঃ কাছাকাছি কয়েকটি বিচ্যুতি (ফল্ট লাইন) থাকায় ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে সিলেট। সাম্প্রতিক ঘনঘন কয়েকটি ভূমিকম্পের কারণে বেড়েছে আতঙ্কও। ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর বিরুদ্ধে অভিযানে নামছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)।
সিসিক সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে বিশেষজ্ঞ টিমের মাধ্যমে নগরীর ৩২ টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণভবনগুলো ভেঙ্গে ফেলার জন্য সংশ্লিস্টদের নোটিশও দেওয়া হয়েছে। বুধবারের মধ্যে নগরীর তাঁতিপাড়ার একটি ভবন সংশ্লিস্টরা না ভাঙ্গলে আগামী বৃহস্পতিবার সিটি করপোরেশন অভিযান চালিয়ে এ ভবনটি ভেঙ্গে ফেলবে।
এ ছাড়া সিলেট সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সিটি সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীদেরও এক সপ্তাহের মধ্যে মার্কেট খালি করে দেওয়ার জন্য বলা হয়েছেন।
তবে সিটি করপোরেশন সংশ্লিস্টরাই জানিয়েছেন, কেবল ৩২টি নয়, নগরীতে আরো ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রয়েছে। পর্যায়ক্রমে তাদের তালিকা করে নোটিশ দেওয়া হবে।
sylhet nursing hostelজানা যায়, গত এক দশকে সিলেট নগরীতে গড়ে ওঠেছে অসংখ্য বহুতল ভবন। শপিং মল, আ্যাপার্টমেন্ট, হোটেল গড়ে উঠেছে এসব বহুতল ভবনে। তবে এসব ভবনের বেশিরভাগেরই নেই সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন। সিটি করপোরেশন ও ফায়ায় সার্ভিসের কাছ থেকে নকশা অনুমোদন না করিয়ে ও সয়েল টেস্ট ছাড়াই অপরিকল্পিতভাবে নির্মান করা হয়েছে এসব বহুতল ভবন। এছাড়া প্রায় শতাধিক ভবন দীর্ঘদিন ধরে পুরনো হয়ে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অনেক স্থানে ফাটল ধরা এসব ভবনে ঝুঁকি নিয়েই চলছে বসবাস।
এসব ঝুঁকিপূর্ণ বহুতল ভবনগুলোর ব্যাপারে এতোদিন অনেকটাই উদাসীন ছিলো সিলেট সিটি করপোরেশন। তবে সাম্প্রতিক ঘনঘন ভূমিকম্পে টনক নড়েছে নগর কর্তৃপক্ষের। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর বিরুদ্ধে অভিযানে নামছে তারা।
সিসিক সূত্রে জানা যায়, শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ টিম দিয়ে সম্প্রতি নগরীতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা তৈরি করে সিসিক। এতে ৩২ টি ভবনকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই ভবনগুলো ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয় সিসিক। তবে বেশিরভাগ ভবন মালিকই সিলেট সিটি করপোরেশনের কাছে সময় চেয়েছেন বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীব গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো নোটিশ করেছি। তাদের সময়ও বেঁধে দিয়েছি। এই সময়ের মধ্যে তারা নিজেরা ভবনগুলো না ভাঙ্গলে আমরা নিজেরাই অভিযান চালিয়ে ভেঙ্গে ফেলবো।
তিনি বলেন, আগামী বৃহস্পতিবার নগরীর তাঁতীপাড়ায় ৩ তলা একটি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অপসারনের মাধ্যমে এ অভিযান শুরু হবে। এছাড়া সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন ঝুঁকিপূর্ণ সিটি সুপার মার্কেট খালি করে দেওয়ার জন্যও সাতদিনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সিলেট অফিসের সহকারী পরিচালক মো. শহিদুর রহমান বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে নকশা অনুমোদনের আগে ভবন মালিককে ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র নিতে হয়। কিন্তু তা অনুসরণ করা হয়নি। সিলেট ফায়ার সার্ভিসের কাছে নগরীর প্রায় ২শ’ বহুতল ভবনের তালিকা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব ভবনের প্রায় অর্ধেকই নির্মাণ হয়েছে ফায়ার সার্ভিস’র প্রাথমিক অনুমোদন না নিয়ে।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও পুরো প্রকৌশল বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম বলেন, গবেষনায় দেখা গেছে, রিকটার স্কেলে পাঁচ মাত্রার ভূমিকম্প হলে সিলেটের আশি ভাগ ভবনই ধ্বসে পড়বে। সাত মাত্রার ভূমিকম্প হলে এ অঞ্চলের প্রায় ৯৫ ভাগ স্থাপনা ধ্বংস হয়ে যাবে। প্রাণ হারাবে ১২ লাখ মানুষ এবং টাকার অংকে ক্ষতি হবে ১৭ হাজার কোটি। ফলে এখন থেকেই সচেতন হতে হবে। ভূমিকম্প সহনশীল করে ভবন নির্মান করতে হবে।