নবীগঞ্জে ৬ হাজার হেক্টর বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে : কৃষকের রঙ্গিন স্বপ্ন এখন পানির নিচে
উত্তম কুমার পাল হিমেল, নবীগঞ্জ থেকেঃ অভিরাম পাহাড়ী ঢল আর অর্তিবর্ষণে নবীগঞ্জ উপজেলার প্রায় ৬ হাজর হেক্টর জমির পাকা ও আধা পাকা বোর ধান গত ৪ দিনে এক থেকে দুই ফুট পর্যন্ত পানির নিচে তলিয়ে গেছে। অনেক জমিতে ধানের গোছা এলোমোলো থাকায় কৃষকেরা ধান কাটতে পারেছন না। ফলে আরো দু-একদিনে পরে পাকা ধানে পচন ধরে যেতে পারে। যেকারণে কৃষকের পাকা, আধা পাকা ফসলী জমির ধান ঘরে তোলার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাচ্ছে।
নবীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসের হিসেব মতে এবছর উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়নে বোরো চাষে ১৬ হাজার ৭শত ১৭ হেক্টর লক্ষ্য মাত্রার মধ্যে আবাদ হয়েছে ১৬ হাজার ৭ শত হেক্টর। কৃষকের জমি আদাবাদের সকল প্রস্তৃতি থাকা সত্বেও প্রকৃতিক দূর্যোগের কারণে প্রায় ৬ হাজার হেক্টর বোরো ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
এবছর ফলন ভাল হাওয়ায় কৃষকেরা স্বপ্ন দেখছিলেন বাম্পার ফলন ঘরে তুলবেন। কিন্তু ধান পাকার পূর্বেই হঠাৎ করে আসা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে চোখের সামইে কৃষকের সেই স্বপ্ন তলিয়ে যায়।
গতকাল বুধবার সরেজমিনে বিভিন্ন হাওরের এমনি দৃশ্য দেখা যায়। অনেক জমিতে কলার বেলা দিয়ে ২-৩ ফুট পানির মধ্যে ধান কাটতে দেখা গেছে। এছাড়াও কোন কোন ক্ষেতের কাচা ধান পানিতে প্রায় ২-৩ ফুট তলিয়ে রয়েছে।
আউশকান্দি ইউনিয়নের আজলপুর গ্রামের বর্গাচাষী কৃষক ওয়াকিব উদ্দিনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, “ এ বারকু ধান ভালো অওয়ায় আশা করছিলাম বাম্পার ফসল তুলব, কিতা করমু চউকের সামনে হকল ধান পানি নিলগি”। একই গ্রামের কৃষক আজাদ মিয়ার সাথে কথা হলে তিনি জানান, “ অন্যের ১৪ কেয়ার জমিন বাগি করছিলাম, কিন্তু দেখতে দেখতে সকল ক্ষেতের ধান পানি নিলগি”। তাদের ভাষায় ফলন ভাল হওয়ায় স্বপ্ন ছিল বাম্পার ফলন ঘরে তুলবেন। কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাস চোখের সামেই পাকা ও আধাপাকা ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। কৃষক আলাওর মিয়া সাথে কথা হলে তিনি জানান, হঠাৎ করে বৃষ্টির পানিতে তার ২ কেদার আধাপাকা ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। তিনি বলেন, আমার নিজের কিছু ক্ষেতের সাথে অন্যের জমি বর্গাচাষ করেছিলাম লাভের আশায়। এখন লাভ ও আসল উভয়ই গেল।
কৃষক ছুফান মিয়া বলেন, এত কষ্টের ধান চোখের সামনে পানিতে তলিয়ে যাওয়াটা মেনে নিতে পারছি না। এখন যা পারি ডুবিয়ে ডুবিয়ে ধান কাটার চেষ্টা করছি।
লিটন দাশ জানান, পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারনে আর বাজারে ধানের দাম কেম থাকায় বাহিরের কোন শ্রমিক ধান কাটতে আসছে চাইছে না। তাই বড় বিপাকে আছি।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ দুলাল উদ্দিন জানান, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের শিকার বোরো চাষিদের সাথে যোগাযোগ রাখছেন। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।