নাজিমুদ্দিন হত্যার দায় সরকারের: ইমরান এইচ সরকার

অনলাইন এক্টিভিস্ট নাজিমুদ্দিন সামাদ হত্যার প্রতিবাদে আজ শাহবাগে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মশাল মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল রাত সাড়ে নয়টায় রাজধানীর সূত্রাপুরে কুপিয়ে এবং গুলি করে হত্যা করা হয় তাকে। এই ঘটনার প্রতিবাদে আজ বিকাল ৫টা থেকে তাৎক্ষনিক এই কর্মসূচি পালন করে গণজাগরণ মঞ্চ।

মঞ্চের কর্মী সনাতন উল্লাসের সঞ্চালনায় সমাবেশে সহযোদ্ধার মৃত্যুতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন বক্তারা। একের পর এক হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়ার ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।

সমাবেশে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার বলেন, “নাজিমুদ্দিন সামাদ সিলেটে গণজাগরণ মঞ্চের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। যে স্বপ্ন নিয়ে কিছুদিন আগে ঢাকায় এসেছিলেন, চাপাতির আঘাতে, পিস্তলের গুলিতে সে স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়েছে। শুধু সামাদই নন, কিছুদিন আগে খুন হয়েছেন মসজিদের মুয়াজ্জিন, ইমাম, মন্দিরের পুরোহিত, গির্জার যাজক। একটির পর একটি ঘটনা ঘটে চলছে। সোহাগী জাহান তনুকে ধর্ষণের পর হত্যার প্রতিবাদে যখন সারাদেশের মানুষ সোচ্চার, তখনই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে আগের খুন-ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হলো।”

তিনি বলেন, “একের পর এক ঘটনার বিচার না হওয়ায় অপরাধীরা এতো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে, ধর্ষণের বিরুদ্ধে সারাদেশে যখন আন্দোলন চলছে, সেই সময়েও বাসের ভেতরে ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। অপরাধীদের ধরার কোনো চেষ্টা না করে প্রশাসন বক্তব্য বিবৃতি দিয়েই ক্ষান্ত হয়ে যাচ্ছে।

গত বছরেই পাঁচ ব্লগার-লেখক খুন থেকে শুরু করে রিজার্ভ লুট, ধর্ষণ করে হত্যা কোনো ঘটনারই বিচার হয়নি। কুমিল্লায় তনুর ভাইয়ের বন্ধু সোহাগকে অপহরণ করা হলো, প্রতিটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার নাজিমুদ্দিন সামাদকে খুন করা হলো। অপরাধীদের ধরা হচ্ছে না, যারা অপরাধের প্রতিবাদ করছে, তাদেরকেই খুন করা হচ্ছে।”

প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “অপরাধ ধামাচাপা দেয়ার এক নতুন মডেল তৈরি হয়েছে। প্রতিটি খুনের পর বলা হচ্ছে অপরাধীরা ‘আল্লাহু আকবার’ স্লোগান দিয়ে পালিয়ে গেছে। একটা সুনির্দিষ্ট গোষ্ঠীর দিকে দেখিয়ে আসল ঘটনা আড়াল করা হচ্ছে। জনগণের মধ্যে বিভেদ তৈরি করা হচ্ছে। ধর্মীয় স্লোগানের কথা তুলে দুইটি পক্ষ তৈরি করা হচ্ছে, একপক্ষ আরেকপক্ষকে দোষারোপে ব্যস্ত থাকছে, আর এই ফাঁকে সরকারি লোকজন ব্যস্ত রিজার্ভ লুটে। অপরাধীদের আর বিচার হচ্ছেনা।

দেশে যে শাসন চলছে, তা কোনোভাবেই গণমানুষের আকাঙ্ক্ষার শাসন নয়। প্রশাসন যদি দাবি করে থাকে যে জঙ্গীগোষ্ঠী এই খুন করেছে, তাহলে খুনিদের গ্রেফতার করে তারপর তাদের প্রমাণ করতে হবে কারা জড়িত। অপরাধীদের গ্রেফতারের কোনো চেষ্টা না করে বারবার একই স্ক্রিপ্ট পড়ে পার পেয়ে যাবেন, আমরা তা মেনে নেবো না।

একটার পর একটা ঘটনা ঘটছে, আর আপনারা একদিন আনসারুল্লাহ, একদিন অমুক, একদিন তমুককে দায়ী করে ফাঁকা বুলি দিচ্ছেন, অপরাধীদের ধরায় কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তাই আমাদের সন্দেহ জাগে, এই হত্যার পেছনে এমন কেউ আছে, যে কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কালো চশমা পরে আছে। তাই নাজিমুদ্দিন হত্যার দায় সরকারের উপরেই বর্তায়”।

ওলামা লীগের বিরুদ্ধে এবং সবরকম অন্যায়ের প্রতিবাদে সোচ্চার ছিলেন নাজিমুদ্দিন। সে প্রসঙ্গে ইমরান এইচ সরকার বলেন, “শুধু ব্লগার-লেখক নয়, নানা ধরণের মানুষ খুন হচ্ছেন। নাজিমুদ্দিন সরকারি দলের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। তারপরও শুধু অন্যায়ের সাথে আপোষ না করায়, ওলামা লীগের বিরুদ্ধে বলায় তাকে খুন হতে হলো। তাই আমাদের সন্দেহ হয়, ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ নাকি ওলামা লীগ!

আওয়ামী লীগ অন্যদের ধর্ম নিয়ে রাজনীতির বিরোধিতা করে। আমাদের প্রশ্ন, ওলামা লীগ তাহলে কী করছে? ওলামা লীগের বিরুদ্ধে কেন তারা কথা বলেন না? সরকার ধীরে ধীরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে ওলামা লীগের চেতনায় প্রবেশ করছে। নাজিমুদ্দিন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কথা বলতো, তারপরও রিজার্ভ লুট, তনু ধর্ষণ আর হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় তাকে খুন হতে হলো।

আজকে এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে, যারাই যেকোনো অন্যায়ের প্রতিবাদ করছে, তাদেরকেই টার্গেট করা হচ্ছে, খুন করা হচ্ছে। জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে অপরাধীদের এই সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে রিজার্ভ লুট, ধর্ষণ নয়, অন্যায়ের প্রতিবাদ করাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। যতো বাধাই আসুক, আমাদের মাথা উঁচু করে অন্যায়ের প্রতিবাদ করে যেতে হবে, যেমনটা করেছিলেন নাজিমুদ্দিন”।

বিভিন্ন অন্যায় ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানান তিনি, “একটি ঘটনা ঘটিয়ে আরেকটি ঘটনা ধামচাপা দেয়া হচ্ছে। নাজিমুদ্দিনকে খুন করে রিজার্ভ লুট, তনু ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডকে চাপা দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে। এই ধামাচাপার অবসান ঘটাতে হবে। জনগণকে সচেতন থাকতে হবে, কোনোকিছুই ভুলে গেলে চলবে না। আমি সবাইকে আহ্বান জানাই, ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই ধামাচাপার সংস্কৃতির সমূলে বিনাশ করুন। আগামীকাল বিকাল ৪টায় একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে অপরাধ ধামাচাপা এবং তনু হত্যা, নাজিমুদ্দিন হত্যাসহ একের পর এক হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে শাহবাগে সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। বিচারহীনতার কালো থাবা থেকে দেশকে মুক্ত করতে, নিজেদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এই সমাবেশে সবাইকে যোগ দেয়ার বিনীত আহ্বান জানাচ্ছি”।

সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন মারুফ রসূল, সঙ্গীতা ইমাম, বাকি বিল্লাহ, শম্পা বসু, ভাস্কর রাসা প্রমুখ। বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে গণজাগরণ মঞ্চের মশাল মিছিল শাহবাগ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ঘুরে আবার শাহবাগে ফিরে আসে। বিজ্ঞপ্তি