রসাতলে ৩৫ লাখ টাকা : জেল খেটে দেশে এলেন বিয়ানীবাজারের ওয়াহিদ!
ডেস্ক রিপোর্টঃ বিয়ানীবাজারের ২৬ বছরের যুবক আবদুল ওয়াহিদ। এলাকায় কাজ নেই। ঠিক করলেন বিদেশে যাবেন। দালালেরাও তাঁকে স্বপ্ন দেখাল। সব মিলিয়ে খরচ হলো ৩৫ লাখ টাকা। এ দেশ, সে দেশ ঘুরে ব্রাজিল-মেক্সিকো হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছিলেন ওয়াহিদ। কিন্তু স্বপ্নের দেশে পৌঁছানোর পরই পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে ঠাঁই হয় কারাগারে। বছর খানেকের বেশি কারাভোগের পর গত বুধবার বিকেলে আবার তিনি ফিরে এসেছেন সিলেটেই।
ওয়াহিদের মতোই আরও ২৭ বাংলাদেশি অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে গ্রেফতার হয়ে এক থেকে দেড় বছর কারাভোগের পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরেছেন। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে একটি বিশেষ বিমানে তাঁদের ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামিয়ে দেওয়া হয়। ‘ভালোবাসি বাংলাদেশ’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সেখান থেকে তাঁদের বাড়ি পৌঁছে দিতে সহায়তা করে।
ফেরত আসা ২৭ জনের মধ্যে নোয়াখালীর ১৩ জন, সিলেটের আটজন, ঢাকার তিনজন এবং মুন্সিগঞ্জ, কুমিল্লা ও বরিশালের একজন করে রয়েছেন।
প্রায় প্রত্যেকেরই জীবনের গল্প একই রকম। খেয়ে না খেয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদেশে পাড়ি দিতে গিয়ে ভয়াবহ ঝুঁকি নিয়েছিলেন তাঁরা। ফেরত আসা এই বাংলাদেশিরা জানিয়েছেন, তাঁদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৬-১৭ ঘণ্টা আটকে রাখা হতো। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নেওয়ার সময় শিকল দিয়ে দুই হাত বেঁধে রাখা হতো। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কারাগারে আরও শতাধিক বাংলাদেশি রয়েছেন বলেও জানান তাঁরা।
এই বাংলাদেশিদের বিমানবন্দর থেকে বাড়ি পৌঁছে দিতে আর্থিকভাবে সহায়তা করেছে বেসরকারি সংস্থা ‘ভালোবাসি বাংলাদেশ’। প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশের কর্মকর্তা আল-আমিন বলেন, ‘যারা ফিরেছে, তারা প্রত্যেকেই সাত-আটটা দেশ ঘুরে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছায়। এরপর তারা জেলে ছিল। প্রত্যেকের জীবনের গল্পগুলো ভয়াবহ করুণ। এভাবে অবৈধভাবে যেন কেউ বিদেশে না যায়।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ৩১ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের সফররত স্টেট ডিপার্টমেন্টের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অ্যালেন বার্সিনের নেতৃত্বে দুই সদস্যের প্রতিনিধিদল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে দেখা করে। প্রতিনিধিদলটি যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ হয়ে যাওয়া ৩০ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়ে এ ব্যাপারে সহযোগিতা কামনা করেন। প্রতিনিধিদলটি মন্ত্রীকে জানান, আইনগত সব সহযোগিতা দেওয়ার পরও তারা বৈধ অভিবাসী হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। আদালত তাদের অবৈধ ঘোষণা করেছেন। তাই এসব বাংলাদেশিকে ফেরত আনা হচ্ছে। ওই বৈঠকের পাঁচ দিনের মাথায় এই বাংলাদেশিরা ফেরত এলেন।