বড়ই গাছ নিয়ে বিরোধেই হত্যা করা হয় বাহুবলের ৪ শিশুকে
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: একটি বড়ই গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিরোধ থেকেই হত্যা করা হয় হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার ৪ শিশুকে। এই হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে এমনটিই উল্লেখ করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার আদালতে জমা দেওয়া অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, বড়ই গাছ কাটা নিয়ে বিরোধের জের ধরে পঞ্চায়েত আব্দুল আলী ওরফে বাগালের পরিকল্পনায় ৪ শিশুকে হত্যা করা হয়, হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শহীদুল ইসলাম এমনটিই জানিয়েছেন।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় হবিগঞ্জের বাহুবলে উপজেলার সুন্দ্রাটিকি গ্রামের জাকারিয়া শুভ (৮), মনির মিয়া (৭), তাজেল মিয়া (১০) ও ইসমাইল মিয়া (১০) নামের ৪ শিশুকে অপহরণ করা হয়। পাঁচদিন পর ১৭ ফেব্রুয়ারি সকালে গ্রাম থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরের ইছারবিল খালের পাশে বালুমিশ্রিত মাটির নিচে ওই চার শিশুর মৃতদেহ পাওয়া যায়।
শিশুদের মরদেহ উদ্ধারের পর গত ১৯ ফেব্রূযারি -এ ‘একটি বড়ই গাছের জন্য প্রাণ গেলো চার শিশুর!’- শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, শিশু মনির, শুভ ও তাজেলের বাবার সঙ্গে একটি বড়ই গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে একই গ্রামের পঞ্চায়েত আব্দুল আলী বাগলের বিরোধ ছিল। এর জের ধরে ওই চার শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়।
অবশেষে মঙ্গলবার আদালতে জমা দেওয়া অভিযোগপত্রে এই প্রতিবেদনেরই সত্যতা পাওয়া গেলো।
মঙ্গলবার দুপুরে তদন্ত কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মো. মোকতাদির হোসেন হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. কাউছার আলমের আদালতে ৯ জনকে আসামী করে আলোচিত এই মামলার চার্জশীট দাখিল করেন।
৪৯ দিনে ৩২ কার্যদিবসে মোট ৫৭ জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষেরর ভিত্তিতে ১২ পাতার এ প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে ৫ জন কারাগারে এবং ৩ জন পলাতক রয়েছেন। এ ছাড়া অন্যতম আসামি সিএনজি অটোরিকশা চালক বাচ্চু র্যাবের সঙ্গে ক্রসফায়ারে নিহত হন। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি চুনারুঘাট থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। যদিও বাচ্চুর পরিবার কদিন আগেই দাবি করেছিল, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সদস্যরা তাঁকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গেছে।
কারাগারে আটকরা হলেন- হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী আব্দুল আলী ওরফে বাগাল, তার দুই ছেলে জুয়েল ও রুবেল, একই গ্রামের আরজু ও শাহেদ। পলাতক ৩ আসামি হলেন- আব্দুল আলী ওরফে বাগালের ভাতিজা সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক বিলাল, উস্তার ও বাবুল।
এ ছাড়া কারাগারে বন্দি সালেহ ও বশিরের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কোনো অভিযোগ না পাওয়ায় তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি (নট সেন্ট আপ) দেওয়া হয়েছে।
১২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ওই শিশুদের অটোরিকশা চালক বাচ্চুর অটোরিকশায় করে আব্দুল আলী ওরফে বাগালের লেবু বাগানে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখানে অচেতন করে গলাটিপে হত্যার পর ৩ থেকে ৪ দিন রেখে অটোরিকশায় করে সুন্দ্রাটিকির ইছাবিল এলাকায় মাটি চাপা দেওয়া হয়। পুলিশ হত্যাকাণ্ডের আলামত হিসেবে শাবুল, কোদাল, প্লাস্টিকের বস্তা, শিশুদের রক্তমাখা পাঞ্জাবি, গেঞ্জি ও অটোরিকশা উদ্ধার করে। হত্যাকাণ্ডের পর গ্রেফতার করা আসামিদের মধ্যে আব্দুল আলী ওরপে বাগালের ছেলে জুয়েল ও রুবেল এবং আসামি আরজু ও শাহেদ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।