‘সেনাবাহিনীর উচিত তথ্য জানিয়ে ভাবর্মূতি রক্ষা করা’
ডেস্ক রিপোর্টঃ কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুকে ধর্ষণ ও হত্যার পর প্রতিবাদে উত্তাল কুমিল্লাসহ সারাদেশ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে প্রতিবাদের ঝড়। অনেকেই প্রশ্ন তোলেছেন সেনানিবাসের মত একটি সুরক্ষিত এলাকায় কীভাবে এমন ঘটনা ঘটল। অনেকে সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেছেন। এই বিষয়ে চ্যানেল আই এর বার্তা সম্পাদক জাহিদ নেওয়াজ খান তাঁর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের দেয়ালে পোস্ট করেছেন। তাঁর বক্তব্য পাঠকদের উদ্দেশ্যে তোলে ধরা হল:
প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যাই হোক, ব্যক্তিগতভাবে ফৌজদারি অপরাধ করে সেনাবাহিনীতে পার পাওয়া যায় না। অপরাধীকে কোর্ট মার্শালের মুখোমুখি হতেই হয়। কিন্তু, সেনাবাহিনীর সমস্যা হচ্ছে তারা ব্যক্তিকে প্রতিষ্ঠানের ইমেজের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলে। তাই এক ধরনের নৈর্ব্যক্তিক অবস্থান রেখে পাবলিকলি নীরব থাকে যেটা অনেক সময়ই ব্যক্তি অপরাধীর অপরাধ ‘ডিনায়াল’ এর মতো মনে হয়। তারা কোনো কিছুই পাবলিক করতে চায় না যেটা আধুনিক যোগাযোগ তত্ত্বেরও বিপরীত।
আমি নিশ্চিত, কুমিল্লার ঘটনায় কোনো সেনা সদস্য জড়িত থাকলে হয় সে অলরেডি আটক আছে অথবা তাকে খুঁজে বের করার জন্য তদন্ত চলছে। কেউ জড়িত না থাকলেও যেহেতু ক্যান্টনমেন্টের ভেতরের ঘটনা তাই সেনাবাহিনী তদন্ত করছে। সমস্যা হলো পুরনো ধ্যান-ধারণা থেকে সেনাবাহিনী মনে করছে যে এগুলো পাবলিক জানলে তাদের ইমেজের সমস্যা হবে। কিন্তু, বাস্তবতা হচ্ছে তারা চুপ থাকার কারণেই ব্যক্তির অপরাধ প্রতিষ্ঠানের উপর যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। এখানেই যোগাযোগের গভীর সমস্যায় সেনাবাহিনী। তারা যতো দ্রুত বিষয়টা মানুষের সামনে খোলাসা করবে ততোই তাদের জন্য মঙ্গল। যোগাযোগের আধুনিক তত্ত্বও তাই বলে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা লুকিয়ে রাখার জন্য যারা ক্রুদ্ধ হয়েছেন, ক্ষুব্ধ হয়েছেন, আতিউর রহমানকে ঝেটিয়ে বিদেয় করেছেন রাষ্ট্রের সেই উচ্চ পর্যায়ের রুই-কাতলারা এ বিষয়ে একটু সরব হতে পারেন। মানুষের মধ্যে কোনো ভুল বোঝাবুঝি থাকলে তাদের সরবতা ওই মিস কনসেপশন যেমন দূর করার পথ খুলতে পারে, তেমনি প্রতিষ্ঠানের ইমেজ রক্ষার নামে ইমেজ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও দূর করতে পারে। তথ্য গোপন করে ইমেজ রক্ষা হয় না, ইমেজ গড়ে উঠে তথ্য জানানোর মধ্য দিয়ে। সেনানিবাসের ভেতরে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় সেনাবাহিনীর এক বা দুইজন জড়িত থাকলে তার জন্য প্রতিষ্ঠানকে কেনো সমালোচিত হতে হবে! সেটা হচ্ছে ভুল ধারণা থেকে তথ্য না জানানোর ভুল নীতিমালার কারণে।
এই সেনাবাহিনী পাকিস্তান আর্মি না। রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ যতোটুকু কল্যাণকর সেনাবাহিনীও ততোটুকু। রাষ্ট্রব্যবস্থা সেনাবাহিনীকে যেভাবে গড়ে তুলেছে সেভাবেই গড়ে উঠেছে সেনাবাহিনী।