গোয়াইনঘাটে জমে উঠেছে ইউপি নির্বাচন-আ.লীগ ও বিএনপির কাঁটা বিদ্রোহী প্রার্থীরা
মো.ফখরুল ইসলাম :: গোয়াইনঘাট উপজেলাজুড়ে জমে ওঠেছে ইউপি নির্বাচনি প্রচারণা। ব্যস্ত ও নির্ঘুম সময় পার করছেন প্রার্থীরা। উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে ৭টি ইউনিয়নে আগামী ৩১ মার্চ ভোটগ্রহণ করা হবে। নির্বাচনকে ঘিরে চেয়াম্যান ও মেম্বার পদপ্রার্থীরা ছুটছেন ভোটারদের বাড়ি বাড়ি। কাকডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে গণসংযোগ আর পথসভা। কর্মী-সমর্থকরাও ব্যস্ত নিজ নিজ প্রার্থীর সপক্ষে প্রচারণায়।
উপজেলা সদর থেকে শুরু করে ৭টি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আলোচনার প্রধান বিষয়, প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হচ্ছে। মুদি দোকান থেকে চা-দোকান সর্বত্র চলছে প্রার্থীদের পক্ষে-বিপক্ষে কর্মী-সমর্থকদের বন্দনা। সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত জম্পেশ আড্ডায় মুখর চায়ের দোকানগুলো । তিনটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। তাঁদের কারণে দলীয় প্রার্থীরা ঝুঁকির মধ্যে আছেন।
গোয়াইনঘাট উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে প্রাথীর্, ভোটার আর কর্মী-সমর্থকদের মাঝে চলছে নৌকা আর ধানের শিষের প্রচারণা। সাতটি ইউনিয়নেই মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে নৌকা আর ধানের শিষ। প্রতীক বরাদ্দের পর দলীয় প্রার্থীদের পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও ভোটারদের কাছে প্রতীক দেখিয়ে ভোট চাইছেন।
রুস্তমপুর ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. মাসুক আহমদের সাথে ধানের শিষ প্রতীক নিয়ে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মো.শাহাব উদ্দিন শিহাব এর সাথে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মো.আবুল কালাম আজাদ রয়েছেন মাঠে।
পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান ফয়জুল ইসলামের সাথে নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. আব্দুস সালামের সাথে লড়াই হবে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। ধানের শিষ প্রতীক নিয়ে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ছয়ফুল আলম মাস্টার, বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান সাংবাদিক এম এ রহিমও জোর প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
পুর্ব জাফলং ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান লুৎফুর রহমান লেবু ও ধানের শিষ প্রতীক নিয়ে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মো. রফিকুল ইসলাম শাহপরানের মধ্যে লড়াই হবে। নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্র্থী মো. রফিকুল ইসলাম, বর্তমান চেয়ারম্যান হামিদুল হক ভুইয়া বাবুলও জোর প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
আলীরগাঁও ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া হেলাল ও বর্তমান চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থী আবুল কাশেমের লড়াই হবে। ধানের শিষ প্রতীক নিয়ে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী খালিক আহমদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আনোয়ার শাহদাৎও জোর প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ফতেহপুর ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্র্থী আমিনুর রহমান চৌধুরী ও বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী ইসলাম উদ্দিনের লড়াই হবে। ধানের শিষ প্রতীক নিয়ে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান বাবুরুল হোসেন বাবুলও প্রচারণায় চালিয়ে যাচ্ছেন।
নন্দিরগাঁও ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্র্থী এস কামরুল হাসান আমিরুল ও ধানের শিষ প্রতীক নিয়ে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী জামাল উদ্দিনের ভোটযুদ্ধ হবে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
তোয়াকুল ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্র্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ লোকমান। তাঁর সঙ্গে আনারস প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী মো.সামসুদ্দিনের লড়াই হবে। ধানের শিষ প্রতীক নিয়ে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মো. খালেদ আহমদও প্রচারণায় রয়েছেন ।
উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে ভোটার,কর্মী সমর্থক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে আসন্ন নির্বাচনে এসব প্রার্থীদের যে-কেউ জনপ্রতিনিধি হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতা রাখেন। তোয়াকুল ইউনিয়নের গোলাম রব্বানী জানান, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থী থাকলেও ভোটযুদ্ধে সবার শীর্ষে আছেন আনারস প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সামছুদ্দিন। তিনি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন। উপজেলার আলীরগাঁও ইউনিয়নের বারহাল বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী সালেহ রাজা জানান, আসন্ন নির্বাচনে ভোটের লড়াই জমে ওঠেছে। ভোটযুদ্ধ হবে বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল কাশেম মো. আনোয়ার শাহদাৎ ও গোলাম কিবরিয়া হেলালের মধ্যে। সালুটিকরের হারুনর রশিদ জানান, নন্দিরগাঁওয়ে নৌকা প্রতীকধারী এস কামরুল হাসান আমিরুল নির্বাচিত হবেন বলে মনে করছি। পুর্ব জাফলং বাজারের ব্যবসায়ী হুমায়ুন মিয়া জানান, এবারের নির্বাচনে ধানের শিষ-নৌকার প্রতিপক্ষ মনে হচ্ছে সাবেক চেয়ারম্যান লুৎফুর রহমান লেবুকে। ঘুড়া প্রতীক নিয়ে এবারের নির্বাচনে তিনি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন দু-দলের প্রার্থীদের। এদিকে ভোটার তালিকা জটিলতার কারণে লেঙ্গুড়া ও নবগঠিত ডৌবাড়িতে নির্বাচন হচ্ছে না।
এদিকে মাঠ দাপিয়ে ড়োচ্ছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনয়নবঞ্চিত বিদ্রোহী প্রার্থীরা। চালিয়ে যাচ্ছেন ব্যাপক প্রচারণা-গণসংযোগ। গোয়াইনঘাটে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অন্যান্য প্রার্থীর ন্যায় তারাও ব্যস্ত প্রচার-প্রচারণায়। নৌকা এবং ধানের শিষের পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রতীকের চেয়ারম্যান পদপ্রত্যাশী হিসেবে তারাও থেমে নেই। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি মনোনীত প্রার্থীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সমান তালে এগিয়ে চলছে তাদের প্রচারণা। তাই রুস্তমপুর, পুর্ব জাফলং ও তোয়াকুল ইউনিয়নে তাঁরা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছেন।
পূর্ব জাফলংয়ে সাবেক চেয়ারম্যান লুৎফুর রহমান লেবু আওয়ামী লীগ আর রুস্তমপুর ইউনিয়নে আবুল কালাম আজাদ বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাননি। অপরজন তোয়াকুলের মো.সামসুদ্দিন । তিনি স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগের টিকিট না পেয়ে প্রথম থেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেন।
স্থানীয়ভাবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, উক্ত তিনটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থীদের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারেন দুটি দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। তোয়াকুলের জাঙ্গাইল গ্রামের নাজিম উদ্দিন জানান, কে কোন দলের জানি না। আমি আসন্ন নির্বাচনে সামুসুদ্দিনকেই ভোট দেব। কেননা তিনি জনগণের রাজনীতির জন্য সব সময় নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। রুস্তপুরের ভিতরগুলের হাফিজ মিয়া ও টেকনাগুল এলাকার আলী হোসেন জানান, সৎ-যোগ্য হিসাবে রুস্তমপুর ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো.মাসুক আহমদের বিকল্প নেই। পূর্ব জাফলংয়ের রাধানগর ইসলামপুরের (দুবাগ) এলাকার জয়নাল মিয়া জানান, আমরা কোনো পুতুল চেয়ারম্যানকে আর জনপ্রতিনিধি হিসাবে দেখতে চাই না। চাই না জাফলংয়ে আর কোনো ধ্বংসলীলা। তাই নির্বাচনে আমরা বীর মুক্তিযোদ্ধা লুৎফুর রহমান লেবুকেই চেয়ারম্যান হিসাবে দেখতে চাই।
তোয়াকুল ইউনিয়নে আনারস প্রতীকধারী মো.সামসুদ্দিন বললেন, এলাকার শান্তিপ্রিয় সাধারণ জনগণ কাজের মানুষ চান, লুটেরাদের জনপ্রতিনিধি হিসাবে আর চান না। তাই এবারের নির্বাচনে আনারসের পক্ষে যে জোয়ার ওঠেছে, কোনো ধরনের কারচুপি না হলে তাতে বিজয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।
তোয়াকুল ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্র্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ লোকমান জানান, আমি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে প্রার্থী হয়েছি শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণ হলে নৌকার বিজয় নিশ্চিত।