সমস্যা আর সংকটে সিলেট ফায়ার সার্ভিস
নুরুল হক শিপু :: অগ্নিকান্ডসহ যে-কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় যারা নিজের জীবনবাজি রেখে উদ্ধারকাজে নামেন, তাঁরা হচ্ছেন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা। অবাক হলেও সত্য, সিলেটে তাঁরা নিজেরাই প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকির মধ্যে অবস্থান করছেন। সিলেটে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কার্যক্রম অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে। যে-কোনো সময় ভবনটি ধসে ঘটতে পারে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা।
১৯৬৫ সালে নগরীর তালতলায় নির্মাণ করা হয় সিলেট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কার্যালয়। কার্যালয়ের ঠিক পেছনে একটি ৬ তলা ভবন নির্মাণ করা হয়। এই ভবনটি গড়ে তোলা হয় ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের জন্য একটি ওয়াচ অ্যান্ড ট্রেনিং টাওয়ার হিসেবে। দীর্ঘদিন ধরে এই ভবনে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ টাওয়ারটি ঝুঁকিপূর্ণ বলেও অভিহিত করেছেন সিলেট গণপূর্ত অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে টাওয়ারটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করছে না গণপূর্ত অধিদপ্তর। ভবনটি ঝুঁকিতে থাকার কারণে ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা রয়েছেন মরাত্মক নিরাপত্তাহীনতায়। শুধু তাই নয়; সিলেট মহানগরীর তালতলা ও আলমপুর ফায়ার স্টেশনে রয়েছে আরো নানা সমস্যা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির কোনো সরঞ্জাম এখনও সিলেট ফায়ার স্টেশনে দেয়া হয়নি। যার কারণে নগরীতে বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে বহুতল ভবনে উদ্ধার কাজ চালানো কঠিন হতে পারে। বর্তমানে মহানগরীতে বহুতল অনেক ভবন গড়ে ওঠেছে। নতুনভাবে নির্মাণ হচ্ছে আরো অনেক আকাশছোঁয়া ভবন। এসব ভবনে দুর্যোগে উদ্ধারকাজ চালানো মুশকিল। ফায়ার সার্ভিসের কাছে উদ্ধার কাজের জন্য যে মই রয়েছে, তা দিয়ে ৩ তলা পর্যন্ত উদ্ধার কাজ চালানো সম্ভব। অথচ নগরে ৬ তলার উপরে বহুতল ভবনের সংখ্যা বর্তমানে দুই শতাধিক। ওই ভবনগুলো নির্মাণের সময় বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি)-এর শতভাগ আইন কিংবা ফায়ার সেফটির আইনও মানা হয়নি।
ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, ট্রান ট্রেবিল লেটার (টিটিএল) গাড়ি মাধ্যমে ৪৭ মিটার উচ্চতা, ¯েœারকেল গাড়ির মাধ্যমে ২৭ মিটার ও ভিমা গাড়ির মাধ্যমে ৫৪ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত উদ্ধার কাজ চালানো যায়। কিন্তু এরকম একটি গাড়িও সিলেট ফায়ার সার্ভিসকে দেয়া হয়নি। বর্তমানে যে-সব সরঞ্জাম তালতলা ও আলমপুর ফায়ার স্টেশনে রয়েছে, তা দিয়ে ৩ তলা ভবন পর্যন্ত উদ্ধার কাজ চালানো সম্ভব। তবে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের দাবি, কৌশলে তারা বহুতল ভবন উদ্ধারের ক্ষমতা রাখেন।
সিলেটে ফায়ার সাভিস সদস্যদের আবাসন ব্যবস্থা, ডাইয়নিংয়ের সমস্যাও প্রকট। তালতলা কার্য়ালয়ে দুজন কর্মকর্তার জন্য দুটি কোয়ার্টার ও ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের জন্য একটি ব্যারাক রয়েছে। এই ব্যারাকে আসন সংখ্যা ৩০টি হলেও গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে ৫০ জন সদস্যকে। তালতলা ও আলমপুর স্টেশনের প্রধান কর্মকর্তাদের নেই কোনো গাড়ি। কোথাও পরিদর্শনে যেতে হলে তাদেরকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার গাড়ি কিংবা মোটরসাইকেলে যেতে হয়।
সিলেট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক রফিকুল ইসলাম জানান, ‘ট্রান ট্রেবিল লেটার (টিটিএল) গাড়ি, ¯েœারকেল গাড়ি ও ভিমা গাড়ি দেশের প্রত্যেকটি বিভাগীয় কার্যালয়ে রয়েছে। আমাদের রাখার জায়গা নেই। ওই যানবাহনগুলো আমাদেরও হবে। তিনি বলেন, সরকার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের প্রতি বিশেষভাবে নজর দিচ্ছে। আমাদের অনেক সরঞ্জাম বেড়েছে। তিনি বলেন, আমাদের পর্যাপ্ত জনবল আছে। তালতলা ও আলমপুর স্টেশনে অন্তত ২০ জন সদস্য অতিরিক্ত রয়েছেন।’
তবে সিলেট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. জাবেদ আহমদ তারেক বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে জনবল। আলমপুর ও তালতলা স্টেশনে শতকরা ৩০ ভাগ জনবল ঘাটতি রয়েছে। তারেক বলেন, আমাদের ওয়াচ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা বিষয়টি গণপূর্ত অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তিনি বলেন যে-সব গাড়ি সিলেটে দেয়া হয়নি তা রাখার ব্যবস্থা নেই। আর এসব গাড়ি যাতায়াতের জন্য সিলেটের রাস্তা উপযোগী নয়। তিনি বলেন, আমরা দুর্যোগ মোকাবিলায় মহানগরীর ২৭টি ওয়ার্ডে ৩ হাজার ৫শ’ ভলন্টিয়ারকে প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রস্তুত করেছি। আমাদের লক্ষ্য, প্রতি ওয়ার্ডে অন্তত ২০০ জন করে ভলন্টিয়ার প্রস্তুত করব। ঘটনাস্থলে কী সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বিশেষ করে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় পানির সমস্যায় পড়ার পাশাপাশি, ভবনে পর্যাপ্ত ভেন্টিলেটর না থাকলে আমাদের সমস্যায় পড়তে হয়। এরপরও আমরা কৌশলে উদ্ধারকাজ সফলভাবে সম্পন্ন করি।