পাকিস্তানি পণ্য বর্জনের সিদ্ধান্ত
অহী আলম রেজা :: ২১ মার্চ ১৯৭১ সাল। পাকিস্তান সরকার ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বাঙালিদের ক্ষোভ বিক্ষোভ বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশ তথা পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে তখন পদে পদে বাধার শিকার পশ্চিম পাকিস্তানিরা। এ অবস্থায় একাত্তরের এই দিনে পশ্চিম পাকিস্তানি পণ্য বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। স্বাধীন বাংলাদেশ শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ ২৩ মার্চ থেকে পশ্চিম পাকিস্তানি পণ্য বর্জন সপ্তাহ পালনের ঘোষণা দেয়। তবে এদিন থেকেই পণ্য বর্জন কর্মসূচি পালন শুরু করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
আগের ঘোষণা অনুযায়ী কঠোর সামরিক পাহারায় ১২ উপদেষ্টা নিয়ে ঢাকায় আসেন জুলফিকার আলী ভুট্টো। ঢাকায় এসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ইয়াহিয়ার কাছ থেকে বৈঠকের অগ্রগতি সম্পর্কে জানার পর তিনি সমঝোতা বিষয়ে নেতিবাচক অবস্থান নেন। গত কয়েকদিনের মতো এদিনও সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে প্রেসিডেন্ট হাউসে শেখ মুজিবুর রহমান ও তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে ইয়াহিয়া বৈঠক করেন।
কিন্তু চক্রান্তকারী ইয়াহিয়া বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি সামরিক উপদেষ্টাদের নিয়ে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে সামরিক প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। প্রতিদিনই পাকিস্তান এয়ারলাইন্সের একাধিক বোয়িং বিমান সৈন্য ও রসদ নিয়ে ঢাকা আসতে থাকে। অস্ত্রশস্ত্র ও সৈন্য বোঝাই হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়ে কয়েকটি জাহাজ। একই সঙ্গে বাড়াতে থাকে পাকিস্তনি স্থল ও নৌবাহিনীর শক্তি।
বাংলাদেশে যাতায়াতের সুবিধার্থে এদিন পাকিস্তানি বিমান ও জাহাজকে মালদ্বীপের ব্রিটিশ ঘাঁটি ব্যবহারের অনুমতি দেয় ব্রিটিশ সরকার। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী চট্টগ্রামের এক জনসভায় বলেন, বাঙালিরা পূর্ব বাংলার স্বাধীনতা বা স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান নয়, চায় স্বাধীন বাংলাদেশ। তিনি আরো বলেন, মুজিব বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করলে বিশ্বের সব স্বাধীনতাপ্রিয় জাতিই বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবে। এরপর মুজিবের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারই স্বাধীন বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক স্থির করবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে আজকের এই দিনে চাপের মুখে গাজীপুরে জারিকৃত কারফিউ দুপুর ১২টায় ৬ ঘণ্টার জন্য প্রত্যাহার করার পরে সন্ধ্যা ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য আবারো কারফিউ বলবৎ করা হয়। সেনাবাহিনীর সাবেক বাঙালি সৈনিকদের নিয়ে একটি প্যারা মিলিটারি গঠনের আহ্বান জানানো হয় মগবাজারে এক নারী সমাবেশ থেকে। নারায়ণগঞ্জের নারীরা মুক্তির দাবিতে মিছিল বের করেন। সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সংগ্রামী লেখক ও শিল্পীরা সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে। সকাল থেকে গভীর রাত অবধি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শুধু মুক্তিকামী মানুষের ঢল।