নিজামীর ফাঁসি কার্যকরে এখনও বাকি দুই ধাপ
ডেস্ক রিপোর্ট :: সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত রায়েও মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকায় জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকরের প্রহর গুনছে জাতি। নিজামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়ায় এখনও দুই ধাপ বাকি রয়েছে। পর্যায়ক্রমে বিধি অনুযায়ী এসব ধাপ অতিক্রমের পর নিজামীর ফাঁসি চূড়ান্ত হবে।
আইনজীবীরা জানান, নিজামীর রায় কার্যকর করতে আরো দুটি আইনি প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। এ দুটি প্রক্রিয়া শেষ হলে রায় কার্যকরে আর বাধা থাকবে না। ধাপগুলোর একটি হলো- ঘোষিত রায়ের রিভিউ আবেদন করার পর তার নিষ্পত্তি এবং রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা। বিধি অনুযায়ী এই দুটি ধাপ শেষ হলে নিজামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের আর কোনো বাধা থাকবে না।
চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি নিজামীকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় ঘোষণা করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ সংক্ষিপ্ত রায় দেন। পরে ১৫৩ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয় গত ১৫ মার্চ। যা লিখেছেন বেঞ্চের অন্যতম সদস্য বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা। বেঞ্চের অপর দুই সদস্য হলেন; বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। তার আগে ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর নিজামীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
রায় প্রকাশের পর ১৫ মার্চ রাতেই অনুলিপি সুপ্রিম কোর্ট থেকে (বিচারিক আদালত) ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়ে দেয়া হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রায়ের কপি দেখে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন এবং রাতেই লাল কাপড়ে মুড়িয়ে তা কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। পরের দিন ১৬ মার্চ সকালে মতিউর রহমান নিজামীকে রায় পাঠ করে শোনানো হয় বলে কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়।
ওই দিন দুপুরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে নিজামীর ছেলেসহ কয়েকজন আইনজীবী দেখা করেন। এ সময় ছেলে এবং আইনজীবীকে রায়ের পুনঃবিবেচনা (রিভিউ) করার পরামর্শ দেন নিজামী।
নিজামীর ফাঁসি কার্যকরের বিষয়ে তার প্রধান আইনজীবী অ্যাড. খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আমরা রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি নিয়ে রিভিউ দায়ের করবো। রিভিউ নিষ্পত্তির পর যদি সাজা বহাল থাকে সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার একটি বিধান রয়েছে। রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার আগে রিভিউ আবেদনে সাজা কমে কি না সেটা দেখার বিষয়।
রায় কার্যকরের প্রক্রিয়া জানতে চাইলে ওই দিন আইনমন্ত্রী অ্যাড. আনিসুল হক বলেন, কাদের মোল্লার রিভিউ পিটিশনের রায়ে বলা আছে রায়ের প্রত্যায়িত অনুলিপি প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে আসামি রিভিউ চাইতে পারবেন।
তিনি বলেন, অপেক্ষা করব এই ১৫ দিনের জন্য। তারা যদি রিভিউ পিটিশন দাখিল না করে, তাহলে আমরা এই রায় কার্যকরে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো । এ বিষয়ে প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ বলেন, রায়ের অনুলিপি হাতে পাওয়ার পর আসামিপক্ষ নিজামীর রায় পুনঃবিবেচনার আবেদন (রিভিউ) করতে পারবেন। রিভিউ নিষ্পত্তির পরে তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগও পাবেন। দুটোই নাকচ হয়ে গেলে সরকার দণ্ড কার্যকরের ব্যবস্থা নেবে।
তুরিন আফরোজ আরো বলেন, নিজামী হয়তো রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইবে না। এক্ষেত্রে তিনি চার মানবতাবেরাধী জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লা, মোহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং বিএনপির নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায় বাস্তবায়নের আগের প্রক্রিয়াগুলো দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরেন।
২০১৪ সালের ২৫ নভেম্বর কাদের মোল্লার রিভিউ আবেদনের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করে আপিল বিভাগ। সেই রায়ে আদালত জানায়, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাতেও সর্বোচ্চ আদালতের দেয়া রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করা যাবে।
রায়ে বলা হয়, আসামি ও রাষ্ট্র- দু’পক্ষই ১৫ দিনের মধ্যে রায় পুনঃবিবেচনার জন্য আবেদন করতে পারবে। তবে রায়ের নির্ভরযোগ্যতায় ‘খাদ আছে’ বা ‘বিচার-বিভ্রাটের’ আশঙ্কা আছে বলে মনে করলেই আদালত তা পুনঃবিবেচনার জন্য গ্রহণ করবে। ওই রায়ে বলা হয় ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনে দণ্ডিতদের ক্ষেত্রেও আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে। তবে তা আপিলের সমকক্ষ হবে না।
কাদের মোল্লার রিভিউ খারিজের রায়ে আপিল বিভাগ বলেছিলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগে আসামি সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ পাবেন। তবে ক্ষমার জন্য কারাবিধিতে বেঁধে দেয়া ৭ থেকে ২১ দিনের সময়সীমা এ মামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। আসামি ক্ষমা চাইলে তা নিষ্পত্তির আগে দণ্ড কার্যকর করা যাবে না।
জামায়াত নেতা মুহাম্মাদ কামারুজ্জামান ও কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের সময় এই বিধি মানা হয়নি। এর কারণ হিসেবে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের ক্ষেত্রে কারাবিধি প্রযোজ্য হবে না।
কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, তিনি ক্ষমা চাননি। এ কারণে রিভিউ খারিজের দিনই তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছিল। কিন্তু কামারুজ্জামান সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য কয়েক দফা সময় নিলে জটিলতা দেখা দেয়।