শেখ হাসিনাকে উৎখাত করতে ডাক দেওয়া হবে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের – মেজর (অব.) হাফিজ

12স্টাফ রিপোর্টার :: জিয়াউর রহমানকে ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ আখ্যায়িত করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক পানিসম্পদ মন্ত্রী মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীরবিক্রম বলেছেন, জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছেন। তিনিই একমাত্র স্বাধীনতার ঘোষক। ওইদিন তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা না করলে আজ বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচিত হতো না। বর্তমানে দেশে মুক্তিযুদ্ধের কোনো দাম নেই; কারণ আওয়ামী লীগ যুদ্ধ করেনি। আর আমরা যারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি, তখন প্রতিটি মুহূর্তে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়েছি। তারা তখন ছিল ভারতে। আওয়ামী লীগ শরণার্থীর দল আর  বিএনপি রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধার দল। স্বাধীনতার যুদ্ধ ছিল সাধারণ মানুষের মুক্তির যুদ্ধ। এটি কোনো রাজনৈতিক দলের যুদ্ধ ছিল না।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় সিলেট নগরীর দরগা গেইটস্থ একটি হোটেলের কনফারেন্স কক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল সিলেট জেলা ও মহানগর শাখার পৃথক কর্মিসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মেজর (অব.) হাফিজ বলেন, আওয়ামী লীগ মুক্তিযোদ্ধার দল বলে চিৎকার করলেও তারা মুক্তিযোদ্ধা কি সেটাই বুঝে না। তিনি দাবি করে বলেন, জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বেই বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। তিনি বলেন, আজ আওয়ামী লীগ নিজেদের মুক্তিযোদ্ধার দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, আর জিয়াউর রহমানকে পাকিস্তানের দোসর আখ্যায়িত করে। অথচ আমি নিজে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান নেতৃত্বে সিলেটের জকিগঞ্জের আটগ্রাম, চারিগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ করেছি। যে স্বপ্ন মুক্তিযোদ্ধারা নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন, সে স্বপ্ন আজ ধ্বংসের পথে। মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্নের সমাধি ঘটিয়েছে বর্তমান স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকার।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের কোথাও গণতন্ত্র নেই। সর্বত্রই চলছে স্বৈরতন্ত্র। বিএনপির আসন্ন জাতীয় কাউন্সিল শেষে আসছে হাসিনা হটানোর আন্দোলন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া আন্দোলনের ডাক দেবেন। এ আন্দোলনের মাধ্যমেই স্বৈরাচারী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা হবে। আর এটি হবে দেশের দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ। এই যুদ্ধে নেতৃত্ব দেবে নতুন প্রজন্ম। কারণ আমরা যখন যুদ্ধ করি, তখন আমাদের বয়স ছিল ২৩ থেকে ২৪ বছর। অবশ্য দেশের দ্বিতীয় এ যুদ্ধে আমরা নতুন প্রজন্মের সাথে থাকব। জীবন উৎসর্গ করব।
মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র জমা দিলেও এখনও ট্রেনিং জমা দেননি। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও রণাঙ্গণের মুক্তিযোদ্ধা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে মুক্তিযোদ্ধা প্রয়োজনে আবারো রাজপথে লড়বে।
ধর্মের কল বাতাসে নড়ে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সিলেটের কৃতীসন্তান বর্তমান প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বলেছিলেন, অবসরের পর বিচারপতিরা রায় লিখলে তা হয় ফৌজধারি অপরাধ। এজন্য তিনি প্রধান বিচারপতিকে ধন্যবাদ জানান।
বিভিন্ন মামলায় বিএনপি শীর্ষ নেতাদের অযথা হয়রানি করা হচ্ছে অভিযোগ করে মেজর (অব.) হাফিজ বলেন, মঈন উদ্দিন-ফখরুদ্দিনের আমলে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল। কিন্তু হাসিনার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলো হাওয়ায় উড়ে গেছে। আর খালেদা জিয়াকে এখনো প্রতি সপ্তাহে আদালতে গিয়ে হাজিরা দিতে হচ্ছে। এ কেমন বিচার ব্যবস্থা? প্রশ্ন রেখে হাফিজ এর অবসান ও নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থার দাবি জানান।
নিখোঁজ বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এম.ইলিয়াস আলীকে স্মরণ করে মেজর (অব.) হাফিজ বলেন, আমরা জানি না এম ইলিয়াস আলী বেঁচে আছেন কি না। তারপরও সরকারের কাছে দাবি জানাই, এম ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দিন।
সিলেট জেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে ও জেলার সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট শামীম আহমদ সিদ্দিকীর পরিচালনায় কর্মিসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম (বীর-উত্তম), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাবেক সংসদ সদস্য দিলদার হোসেন সেলিম, মুক্তিযোদ্ধা দল কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহ-সভাপতি আবুল হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমদ খান।
ওই কর্মিসভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট এটিএম ফয়েজ, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী, জেলার মুক্তিযোদ্ধা দলের যুগ্ম আহবায়ক সোহাগ রব চৌধুরী, রহিম মল্লিক চৌধুরী, শাহজাহান চৌধুরী, অধ্যাপক রুমেল পীর, আক্তার হোসেন মিন্টু, সদর থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি শাহ জামান নুরুল হুদা, জিয়া সংসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সৈয়দ নাজমুল আহসান, সহ-সভাপতি আব্দুর রহমান রিপন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক এডভোকেট আনোয়ার হোসেন, সুহাদ রব চৌধুরী, আব্দুর রহিম মল্লিক, আক্তর হোসেন মিন্টু, প্রভাষক রুমেল এস এম পীর, মোঃ শাহজাহান, শাহপরান থানার সভাপতি গিয়াস উদ্দিন খান, সাধারণ সম্পাদক শামীম হেলালী, সিনিয়র সহ-সভাপতি ফখর উদ্দিন পংকি, সহ-সভাপতি ফরিদ মিয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এস এম শহিদুরুর রহমান সাংগঠনিক সম্পাদক এস এ সাহেদ, যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান উদ্দিন রিপন, প্রচার সম্পাদক রুমেল আহমদ রিপন, বিশ্বনাথ উপজেলা সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক, কলমদর আলী, আব্দুর রহিম শিকদার, আব্দুল গণি, চেরাগ আলী, বিয়ানীবাজার উপজেলার সভাপতি মানিক মিয়া, অহিদ তালুকদার, জাকারিয়া আহমদ, মুর্শেদুর রহমান পলু,  জকিগঞ্জ উপজেলার সভাপতি চেরাগ আলী,সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন, শফিকুর রহমান,  জৈন্তাপুর উপজেলার সভাপতি গোলাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক এবাদুর রহমান, বিমান বন্দর থানার সভাপতি মো জাহেদ, মুক্তিযোদ্ধা দল সদস্য ইনতিয়ার হোসেন আরাফাত, সেলিম চৌধুরী, ইনতিয়াজ আলী, মোশাহিদ আলী, মির মো বাবলু, জিয়া সংসদ মহানগর সভাপতি জহিরুল ইসলাম মকর, সহ-সভাপতি আমিনুর রহমান আলম, জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক জাবেদ হক, সহ-সম্পাদক মোজাহিদ আলী, সাদিক হোসেন এপলু প্রমুখ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান ও ২০ দলীয় জোটের অন্যতম নেতা মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, দেশের এই অবস্থা দেখার জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করিনি। দেশে গণতন্ত্র বলে কিছুই নেই। এ সরকার সব শেষ করে দিয়েছে। তিনি বলেন, আজ বাংলাদেশের সব পাল্টে গেছে। পূর্বকে পশ্চিম, নারীকে-পুরুষ আরও উপরকে নিচ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। আমরা মিথ্যা কোনো কিছু প্রতিষ্ঠিত করতে চাই না। আমাদের স্লোগান হচ্ছে, পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি। তিনি আওয়ামী লীগ সরকারকে উদ্দেশ করে বলেন, ব্যাংক লুট আর চুরিচামারি বন্ধ করুন; দেশের মানুষের সেবা করুন।
দেশের মুক্তিযোদ্ধের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, রিলিফের চাল, গম আর টিন পেতে যেমন ডিসি সাহেবের কাছে আবেদন করা লাগে তেমনি আমরা স্বাধীনতাযুদ্ধের জন্য আল্লাহর কাছে আবেদন করেছিলাম। আল্লাহ আমাদের কবুল করেছিলেন। কিন্তু শহীদ হলাম না। যারা শহীদ হয়েছেন, তাঁরা মুক্তি পেয়েছেন আমরা বেঁচে থেকে দেশের বর্তমান দুরবস্থা দেখা লাগছে। আগামী ১৯ তারিখ বিএনপির কাউন্সিল, তারপর দেখবেন দেশের প্রেক্ষাপট পাল্টাবে।
সন্ধ্যায় মহানগরের আহ্বায়ক সালেহ আহমদ খছরুর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব ডাক্তার নাজমুল ইসলামের পরিচালনায় কর্মিসভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ডাক্তার শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, বর্তমান সভাপতি নাসিম হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ, সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী ।
মহানগর মুক্তিযোদ্ধা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক লল্লিক আহমদ চৌধুরীর কুরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে সূচিত কর্মিসভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- সিলেট জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান চৌধুরী, মহানগর বিএনপি নেতা সৈয়দ মঈনুদ্দিন সোহেল, এমদাদ হোসেন চৌধুরী, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি ভিপি মাহবুবুল হক চৌধুরী, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহমদ দবির, আব্দুর রহিম, লল্লিক আহমদ চৌধুরী, মুফতী বদরুন-নুর সায়েক, সেলিম খান, আব্দুর রব, আলী হাসান মজনু, যুবদল নেতা নওয়াজিশ চৌধুরী সাকী, রিপন আহমদ, চারখাই বিএনপির সাধারন সম্পাদক শিপলু আহমদ, বিএনপি নেতা ওয়াহিদ তালুকদার, ছাত্রদল নেতা লিটন আহমদ, আব্দুর রউফ, কামরান হোসেন হেলাল, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম সিলেট মহানগর সভাপতি আব্দুল আউয়াল মিসবাহ, প্রজন্ম নেতা নাহিদ আহমদ, মাহমুদ হাসান, দেলোয়ার হোসেন, সুলতান আহমদ নুরু, মামুন হোসেন খান, সাদিক আহমদ, নাসির আহমদ ও দোলন, ছাত্রদল নেতা খন্দকার ফয়েজ আহমদ, রুনু আহমদ, ওয়াহিদ আহমদ সাজন, আব্দুল করিম জোনাক, মাহবুব আহমদ চৌধুরী, সাজন আহমদ সাজু, সোহেল ইবনে রাজা, ছায়েল আহমদ, আলী আকবর রাজন, আলী আহসান হাবীব, তোফায়েল আহমদ চৌধুরী, মিনহাজ আহমদ ।