সিলেটে পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ
কাইয়ুম উল্লাস :: অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেটের জাফলং। পাহাড় টিলা আর চা-বাগানসংলগ্ন সীমান্তঘেঁষা প্রকৃতিকন্যা জাফলংয়ে বেড়াতে এসে প্রতি বছরই পানিতে ডুবে তরুণদের মৃত্যু হয়। মারা যাওয়া তরুণেরা বেশিরভাগই মেধাবী শিক্ষার্থী। গত ১২ বছরে জাফলংয়ের পিয়াইন নদীতে ডুবে ৩৭ জন পর্যটক মারা যান। এই অকাল দুর্ঘটনার মৃত্যু রোধে সিলেটে কাজ করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। তারা গত এক বছরে অনেক কর্মসূচিই বাস্তবায়ন করেছে। তবে, সিলেটে নতুন এই পুলিশের অনেক সংকট-সমস্যা রয়েছে। অন্যদিকে, দিন দিন সিলেটে নতুন নতুন পর্যটন স্পট বাড়ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, নগরীর শেখঘাট শুভেচ্ছা ৩৬৮ নম্বর বাসায় এক বছর হলো কাজ করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। এখান থেকে এই পর্যটন পুলিশের সিলেট জোন পরিচালিত হয়। এর আওতায় রয়েছে শ্রীমঙ্গল-মৌলভীবাজার পর্যটন অঞ্চলও। শেখঘাটের বাসার ভাড়া দিতে হচ্ছে প্রতি মাসে ৮৩ হাজার টাকা। তাই এই পুলিশের নিজস্ব ভবন জরুরি হয়ে পড়েছে। এখানে কর্মরত আছেন দুজন পরিদর্শক (ইনস্পেক্টর) সহ ৪২ জন পুলিশ সদস্য। এরা নগরীর পর্যটন স্পটসহ জাফলং , রাতারগুল, বিছনাকান্দি, শ্রীমঙ্গল এলাকায় নিয়মিত কাজ করছেন।
পরিদর্শক আব্দুর রউফ জানান, তাদের জনবল সংকট রয়েছে। তবু নতুন অবস্থায় এই জনবল নিয়েই এই এক বছরে অনেক কাজ করেছেন। ট্যুরিস্ট পুলিশের টিম এখন নিয়মিত জাফলংয়ে টহল দিচ্ছে। সেখানে তারা সচেতনতামূলক সাইনবোর্ড টানিয়েছেন এবং হ্যান্ডমাইকে পর্যটকদের সচেতন করে চলেছেন। কেউ যাতে বিপদে না পড়েন, সেদিকেও নজরদারি চলছে। আবার পানিতে কেউ পড়লে তাকে তাৎক্ষণিক উদ্ধারেও কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছেন। এতে পানিতে ডুবে মৃত্যু কমিয়ে আনা সম্ভব বলে জানান।
পরিদর্শক আব্দুর রউফ আরও জানান, তারা পর্যটন এলাকার হোটেল-মোটেলে প্রচারপত্রও বিলি করছেন। এতে পর্যটন স্পট সম্পর্কে ধারণার পাশাপাশি সচেতনতার কাজটিও হচ্ছে। সিলেটে নতুন নতুন পর্যটন স্পট আবিষ্কার হচ্ছে। যেমন রাতারগুল, পান্থুমাই ঝরনা। এসব স্থানে গিয়ে নতুন ও অনভিজ্ঞ পর্যটকেরা বিপদে পড়েন। তাই তাদের আশপাশেই সাদাপোশাকে ট্যুরিস্ট পুলিশ কাজ করছেন।
ট্যুরিস্ট পুলিশের একাধিক সদস্য জানালেন, এখানে জনবল আরও বাড়ানো দরকার। গাড়ি সংকট আছে। আরও দুটি গাড়ি হলে টহল জোরদার হবে। সচেতনতা ও উদ্ধারে আরও লজিস্টিক সাপোর্ট দরকার।
পুলিশের পরিসংখ্যান বলছে, সিলেট নগরী থেকে ৫৯ কিলোমিটার দূরে জাফলংয়ের অবস্থান। গোয়াইনঘাট উপজেলার অধীন জাফলংয়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই সেখানে আসেন নানা বয়সের দেশি-বিদেশি পর্যটক। ঈদ ও অন্যান্য ছুটির সময়ে জাফলংয়ে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় হয়। এখানে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে, স্বচ্ছ জলরাশির পিয়াইন নদী। কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে এই নদী থেকে পাথর উত্তোলনের ফলে সৃষ্ট গর্তে বালু জমে চোরাবালির সৃষ্টি হয় এবং স্বচ্ছ জলধারায় গভীরতা কম দেখা যায়। এর ফলে কেউ কেউ পানিতে গোসল করতে নেমে তলিয়ে যান। পিয়াইন নদীতে নৌকাডুবিতে প্রাণ হারিয়েছেন অনেকে। ২০০৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১২ বছরে জাফলংয়ে পানিতে ডুবে মারা গেছেন ৩৭ জন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ট্যুরিস্ট পুলিশের সিলেট জোনের পরিদর্শক আব্দুন নুর বলেন, জাফলং, লালাখাল, বিছনাকান্দি ও রাতারগুলে ট্যুরিস্ট পুলিশ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। সিলেটে পর্যটকদের নিরাপত্তায় এই পুলিশ নতুন যাত্রা করেছে। এখানে জমি দেখা হচ্ছে। ধীরে ধীরে সংকটগুলোর সমাধান হবে।