দক্ষিণ সুনামগঞ্জে ২২ হাজার হেক্টর বোরো ফসল হুমকির মুখে
কুলেন্দু শেখর দাস, দ.সুনামগঞ্জ :: দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার কৃষকদের একমাত্র ভরসা বোরো ফসল। বর্তমান সরকার যখন খাদ্য সংকট মোকাবিলা করতে সুনামগঞ্জের অন্যতম শস্য-ভান্ডার বোরো ফসলরক্ষার্থে ত্রুটিপুর্ণ বাঁধ নির্মান ও ক্লোজার (ভাঙ্গা) মেরামতের ফসলরক্ষা বাঁেধর কাজের উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হলেও শেষ হয়নি হাওর ফসল রক্ষা বাঁেধর নির্মাণ কাজ, ফলে আতংকিত হচ্ছেন এই এলাকার কৃষকরা। কাজ শেষ না হওয়ায় দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার দেখার হাওর, সাংহাই হাওর, কাচিভাঙ্গাঁ হাওর, জামখলা হাওর ও খাই হাওরের ২২ হাজার ২৫৫ হেক্টর জমির একমাত্র বোরো ফসল হুমকির মুখে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, দেখার হাওরের হলদির খাড়া, উতারিয়া, পাথারিয়া হাওরের কোন কোন বাঁধের কাজ শেষ, কোনটির মধ্যপথে, আবার বিগত বছরগুলোলতে বিপদগ্রস্থ যে বাঁধগুলোর অংশ দিয়ে হাওরে পানি ঢুকে সোনালী ফসল তলিয়ে গিয়েছিল এবারো সেই অংশগুলোই হুমকির মধ্যে রয়েছে বলে জানিয়েছেন অনেক কৃষক।
এই জেলার অধিকাংশ হাওর বাওর, খাল-বিল ও নদী-নালায় পলি জমে নাব্যতা হ্রাস পেয়েছে ফলে অল্পবৃষ্টিতে ওই সমস্ত নদীনালা ও বিল ভরে গিয়ে অকাল বন্যায় বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। যা পানির প্রথম ধাক্কায় বাঁধগুলো হুমকির মুখে ফেলে দেয়। পিআইসি’র মাধ্যমে যে কাজগুলো হয়েছে তা বর্তমানে অগোছালো অবস্থায় পড়ে আছে। পাউবো’র নিয়ম অনুযায়ী যে মাপের ভিত্তিতে কাজ করার কথা ছিল সে অনুযায়ী কিছু কিছু পিআইসি কাজ সম্পুর্ন করতে পারেনি। সরকার প্রতিবছর ফসলরক্ষা বাধঁ নিমার্নের জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও বিগত বছরগুলোতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু সুযোগ সন্ধানী দূনীর্তিবাজ কর্মকতা ও ঠিকাদারদের ব্যাপক অনিয়ম-দুনীতির কারণে সময়মতো সুনামগঞ্জ জেলার হাওর ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মানের নামে লুকোচুরি, অসমাপ্ত কাজ, টেকসই বাধঁ নির্মান না হওয়া, সময় কালক্ষেপন ইত্যাদি কারণে আগাম বন্যায় কৃষকরা তাদের সোনালী ফসল হারাতে হয়েছিল। সরকার চলতি বছর নির্ধারিত সময়ে বাঁধ নির্মানের জন্য টাকা বরাদ্দ দিলেও গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর থেকে বাধঁ নির্মান কাজ শুরু হয় এবং তা ২৮ ফেব্রুয়ারীর মধ্যে জেলার সকল বাধেঁর নির্মান কাজ সমাপ্ত করার কথা থাকলেুও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে ফান্ড না থাকার অজুহাত দেখিয়ে কালক্ষেপন করায় অনেক হাওরে বাধঁ নির্মান কাজ বিলম্বিত হয়। ফলে এখন পর্যন্ত গড়ে ৫০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হলেও বাকী কাজ অদৌ সম্পন্ন হবে কি হবেনা এ নিয়ে চরম হতাশা আর শঙ্কায় রয়েছেন দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার প্রায় পৌনে একলাখ কৃষক। দক্ষিন সুনামগঞ্জ উপজেলার দেখার হাওর,সাংহাই,কাচিভাঙ্গাঁ,জামখলা ও খাইহাওরের কাচির ভাঙ্গা হাওরের ছয়হারা ব্রীজ হইতে মাছের খলা পর্যন্ত,ডিগারকান্দি মরার টিলা হইতে ডিগার বিলের কাড়া পর্যন্ত,ডেকার হাওরের ডাবর ব্রীজের নিকট হইতে পুইট্যা,মাছুখালী এবং বেতকোনা পর্যন্ত,সাংহাইর হাওরের আশার চর কবরস্থান হইতে কাশিপুর পর্যন্ত,গেরাবিলের ভাঙ্গা হইতে বন্না পাপিজুরী বাঁধ পর্যন্ত,ফতেপুর হইতে মির্জাপুর পর্যন্ত,ডেকার হাওরের জয়কলস রাস্তার মূখে ও জয়কলস খাল, আসামপুর হইতে উথারিয়া,উথারিয়া হইতে আস্তমা,খাই হাওরের শালদীঘা হইতে রাঙ্গামাটি,খাশিপুর হইতে বেতকালী,কাউয়াজুরী হাওরের বিভিন্ন ভাঙ্গা,আক্তাপাড়া,ছয়হারা ব্রীজের পশ্চিম পাশ,সিচনী ব্রীজের ফিল্পের পাশে ভাঙ্গা,খাই হাওরের সদরপুর ব্রীজের দক্ষিণ পাশ,জামখলা হাওরের শলার দাইড় ক্লোজার হইতে পাইকাপন ফুল বাড়ী পর্যন্ত,জামখোলা মর্তুজ আলীর বাড়ী বুড়–মপুর হইতে টুকের বাজার,ভাঙ্গা বন্ধকরণ,খাইহাওর উপপ্রকল্পের সলপ মটরমার খাল হইতে শলার দাইড় ক্লোজার পর্যন্ত ভাঙ্গা বন্ধকরন মেরামত কাজ, খাই হাওর উপপ্রকল্পের কাশিপুর হইতে বেতকালী,খাই হাওর উপ-প্রকল্পের শালদীঘা পর্যন্ত, ভাঙ্গা বন্ধকরণ মোট ১৮ টি বাঁধের কাজ পিআইসি (প্রজেক্ট ইমপিমেনটেশন কমিটি) গঠন করে ফসল রক্ষা বাঁেধর নির্মান কাজ শুরু হয়। কিন্তু সরকারের নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত গড়ে ৫০ ভাগ কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়নি। এ নিয়ে কৃষকদের মাঝে সন্দেহ আর প্রচন্ড ক্ষোভ বিরাজ করছে।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার একাধিক কৃষক তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, মাটি কাটার খরচ বাঁচাতে বাঁধের খুব কাছ থেকে মাটি উত্তোলণ করে নির্মান করা হচ্ছে বেরীবাঁধ। অথচ নীতিমালা অনুযায়ী সাধরণ বাঁধের ১০ ফুট, ক্লোজারের ক্ষেত্রে ৩০ ফুট দূরত্বে মাটি উত্তোলনের কথা রয়েছে। পাউবো এসও কে ম্যানেজ করে পি.আই.সি(প্রজেক্ট ইমপিমেনটেশন কমিটি) ক্রটিপুর্ণ বাঁধ নির্মাণ করে অফিস থেকে অনায়াসে বিল উত্তোলন করে নিয়ে যাচ্ছেন। উপজেলা চেয়ারম্যান হাজী আবুল কালাম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ইবাদত হোসেন, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান প্রতিনিয়ত তদারকি করে,সভা ডেকে মনিটরিং করে বাঁধ নির্মান কাজের খোঁজ খবর নিলেও উল্লেখিত কিছু কিছু পিআইসিরা বাঁধ নির্মানের নীতিমালা উপেক্ষা করে তাদের মনগড়াঁ ও দায়সারাভাবে বাঁেধর কাজ করে যাচ্ছেন। কিছু কিছু হাওরে নরভরে বাধেঁর কাজ হওয়ায় আগাম বন্যার কবল থেকে তাদের ফসল রক্ষা করতে পারবে কিনা এ নিয়ে ও রয়েছে কৃষকদের মাঝে অজানা আতংঙ্ক। একাধিক পিআইসি চেয়ারম্যানদের সাথে আলাপ কালে জানা যায়, অল্প কিছুদিনের মধ্যেই অসম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করা হবে।
এ ব্যাপারে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী আবুল কালাম জানান, যেহেতু দক্ষিণ সুনামগঞ্জের কৃষকের একমাত্র ভরসা বোর ফসল বিধায় প্রত্যেক পিআইসি (প্রজেক্ট ইমপিমেনটেশন কমিটি) ও পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের প্রতি অনুরোধ দ্রুত বেরীবাঁধের কাজ সম্পন্ন করার জন্য।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আফসার উদ্দিনের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।